আজঃ মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

বাংলাদেশে বানিজ্য বাড়াতে আগ্রহী সৌদি আরব প্রাধান্য পাবে খাদ্য, জ্বালানি, লজিস্টিকস, উৎপাদন খাত

ঢাকা অফিস:

বাংলাদেশের সঙ্গে খাদ্য, জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং উৎপাদন খাতে বাণিজ্য জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত সৌদি বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের একটি বৈঠকে এই বিষয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা।
দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই এই বৈঠকের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ এ. আল ফালিহ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সৌদি আরবের অন্যতম ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। এতদিন সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুধু কয়েকটি খাতে বিদ্যমান ছিল। তবে এখন সময় এসেছে আমরা কীভাবে উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্যকে সহজতর করতে পারি তার উপায়গুলো খুঁজে বের করার। বাংলাদেশের প্রতি সৌদি আরবের সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সৌদি আরবের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে বাংলাদেশ সরকার উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন,২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। সৌদি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ৩০০ একর জমি বরাদ্দ রেখেছে। বরাদ্দকৃত জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য সৌদি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রূপকল্প ২০৩০-এর অংশ হিসেবে সৌদি আরবে এই মুহূর্তে দক্ষ শ্রমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষ তরুণরা এই চাহিদা পূরণ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশ থেকে দক্ষ তরুণ মানবসম্পদ নেওয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান।

সৌদি আরবের বিনিয়োগবিষয়ক উপমন্ত্রী বদর আই আলবদর বলেন, বাংলাদেশে আমরা বহুমুখী বিনিয়োগ করতে চাই। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কয়েকটি খাত দিয়ে বাণিজ্য শুরু করলেও ভবিষ্যতে সৌদি আরব আরও বেশি খাতে বাণিজ্যে আগ্রহী বলেও জানান তিনি। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে সৌদি বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আয়াদ আল আমরি, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈশা ইউসেফ ঈশা আল-দুহাইলান, এফবিসিসিআই সহসভাপতি খায়রুল হুদা চপল, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মো. মুনির হোসেন, পরিচালকবৃন্দ এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

আরব আমিরাতে ১২ বছরের বিচ্ছেদের পরে মা ছেলেকে একত্রিত করলো শারজাহ্ পুলিশ

শারজাহ পুলিশ বারো বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন থাকার পর এক মাকে তার ছেলের সাথে পুনরায় মিলিত করেছে।সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরে আসা মা, পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তার জন্মের পরপরই তার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। পারিবারিক বিরোধের ফলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। অনেক বছর ধরে তার সন্তানের সন্ধানে ব্যর্থ চেষ্টার পর সম্প্রতি

তিনি তার স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যান এবং তার আয়ের উৎস হারিয়ে ফেলেন, যার ফলে ২০১৩ সালে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর, তিনি তার ছেলের সন্ধান এবং তার জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করার সময় দীর্ঘ কষ্টের মুখোমুখি হন।

তার সমস্ত বিকল্প শেষ করার পর, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফিরে আসেন এবং আবার তার অনুসন্ধান শুরু করেন। তিনি শারজাহ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন, যারা তাৎক্ষণিকভাবে সমাজকর্মীদের একটি বিশেষ দলের সহায়তায় একটি অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে। দলটি যুবকের অবস্থান এবং জীবনযাত্রার পরিস্থিতি যাচাই করে।

রেকর্ড সময়ের মধ্যে নিবিড় প্রচেষ্টার পর, কর্তৃপক্ষ তাকে খুঁজে বের করে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুনর্মিলনের সমন্বয় সাধন করে।

এক দশক ধরে বিচ্ছেদের পর এই আবেগঘন বৈঠকে পরিবার রক্ষা এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শারজাহ পুলিশের মানবিক ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

কমিউনিটি প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রিভেনশন ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার আহমেদ আল মারি বলেন, এই মামলাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত মানবিক মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে, যা পারিবারিক স্থিতিশীলতা এবং সামাজিক সহায়তাকে অগ্রাধিকার দেয়।

তিনি এই ধরনের সংবেদনশীল বিষয় পরিচালনায় পেশাদারিত্বের জন্য বিশেষায়িত দলগুলির প্রশংসা করেন, যোগ করেন যে আশা পুনরুদ্ধার এবং মানবিক দুর্ভোগের অবসান শারজাহ পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলির মধ্যে একটি।

এক বিবৃতিতে, কর্তৃপক্ষ বলেছেন,মানুষ সর্বদা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজ্ঞ নেতৃত্বের অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল, যা সহানুভূতি, সামাজিক সংহতি জোরদার এবং সম্প্রদায়ের কল্যাণকে সমর্থন করার উপর ভিত্তি করে একটি দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছে।

এই নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে, শারজাহ পুলিশ নিশ্চিত করে যে যে কোনও ব্যক্তির দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে তাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া কেবল একটি সরকারী দায়িত্ব নয়, বরং তাদের দৈনন্দিন কাজের গভীরে প্রোথিত নীতিশাস্ত্র এবং মূল্যবোধের একটি সেট। ব্যতিক্রম ছাড়াই সমাজের সকল অংশের জন্য তাদের যত্ন প্রসারিত। যখন এই যত্ন একটি ট্র্যাজেডির মাধ্যমে শেষ হয় এবং আশার দরজা খুলে দেয়, তখন এটি এই জাতির ট্রাস্ট কল্যাণ ও মানবতার সেবাকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের সর্বোচ্চ রূপের প্রতিনিধিত্ব করে।

আমিরাতে ৬শ গাড়ি দিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ বানিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আজমান।

যানবাহন ব্যবহার করে বিশ্বের বৃহত্তম উদযাপন বাক্যাংশ তৈরি করে আজমান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে। ৬০৩টি যানবাহনকে “ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪” বার্তাটি স্পষ্টভাবে লেখার জন্য সাজানো হয়েছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৪তম ঈদ আল ইতিহাদ উদযাপনের সাথে মিলে যাওয়া এই কৃতিত্ব গিনেস বিচারক প্যানেল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে এবং পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে প্রদর্শিত অসাধারণ নির্ভুলতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য উচ্চ প্রশংসা করেছে।

এই স্কেলের একটি সুস্পষ্ট বাক্যাংশ তৈরির জন্য ৬০৩টি যানবাহনের সমন্বিত চলাচলকে সমন্বয় করা একটি অভূতপূর্ব কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে, যা অসাধারণ দৃশ্যমান প্রভাব সহ বিশ্বমানের অনুষ্ঠান সম্পাদনের জন্য আজমানের ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

আজমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আজমান হোল্ডিং এবং রায়াত কোম্পানি যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল। অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়, যা নতুন রেকর্ডকে স্বীকৃতি দেয়, যা এই জাতীয় উপলক্ষকে একটি বিশিষ্ট উপায়ে উপস্থাপনের প্রচেষ্টাকে উদযাপন করে যা সংযুক্ত আরব আমিরাত ইউনিয়নের অর্জনের আনন্দ এবং গর্বকে গভীরভাবে প্রতিফলিত করে।

আজমান ৬০৩টি যানবাহন নিয়ে ‘ঈদ আল ইতিহাদ ইউএই ৫৪’ গঠনের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড স্থাপন করেছে পর্যটন, সংস্কৃতি এবং তথ্য বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বিন হুমাইদ আল নুয়াইমির পৃষ্ঠপোষকতায় চিত্তাকর্ষক এবং অত্যন্ত সমন্বিত অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ