আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

১০ মাঘের গাউসুল আযম মাইজভান্ডার দরবার শরীফ দেশের সর্ববৃহৎ স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশ

লেখক ঃ নাজমুল হাসান চৌধুরী হেলাল আওলাদে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারি

১০ মাঘ ১৪৩০ বাংলা ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ বুধবার বাংলাদেশে প্রবর্তিত একমাত্র ত্বরিকা,বিশ্বসমাদৃত ‘ত্বরিকা-ই-মাইজভা-ারীয়া’র প্রবর্তক গাউসুল আযম হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্ মাইজভা-ারী (ক.) কেবলা কাবার ১১৮তম মহান ১০ মাঘ উরস শরিফ ১০ মাঘ। বাংলা সনের এ তারিখ চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের বর্ষপঞ্জির এক উল্লেখযোগ্য তাৎপর্যময় দিন।এ তারিখটি সারা বাংলাদেশের জন্যই সাংবাৎসরিক গুরুত্বপূর্ণ তারিখ হিসেবে প্রতিষ্টিত।১০ মাঘ,হযরত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারি শাহসূফি হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহর (ক.)ওফাত দিবস।বাংলা ১৩১৩ সনের ১০ মাঘ মোতাবেক ইংরেজী ১৯০৬ সনের ২৩ জানুয়ারী তিনি ওফাত প্রাপ্ত হন। (সুত্র মাসিক আলোকধারা) এ তারিখে প্রতি বছর মাইজভান্ডার দরবার শরীফে মহাসমারোহে উরস শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর মাঘ মাস শুরু হবার আগে থেকেই চট্টগ্রাম তথা সমগ্র বাংলাদেশের নিভৃত পল্লী জনপদগুলো ঢোলক, খরতাল প্রভৃতি রখমারী বাদ্যের তালে তালে জেগে উঠে অকস্মাৎ। মুখরিত হয়ে ওঠে গ্রাম বাংলার কৃষকের শান্ত উঠোন,প্রশান্ত আঙিনা। বাদ্যের তালে তালে অনুরণিত হতে থাকে মাইজভা-ারী গানের সুর। ‘মানুষ ধরা কল বসাইছে আমার বাবা ভান্ডারী, সেই কলেতে পড়লে ধরা আর থাকেনা ঘর-বাড়ী’ নানান ধরনের তকরীর দিতে দিতে সারিবদ্ধভাবে চলে মানুষ। পাড়ায় পাড়ায় ঘরে ঘরে গিয়ে সংগ্রহ করে উরস উপলক্ষে চাউল টাকা। ঢোলকের তাল, সানাইয়ের সুর শুনেই বৌ-ঝিরা বুঝতে পারে ওরশের নজরানা যোগাড়ে বেরিয়েছেন ভক্তরা। এসব দলে থাকেন এক কিম্বা একাধিক মাস্তান।শুধু চট্টগ্রামে নয়,বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই,এমনকি প্রতিটি মহল্লাতেই পাওয়া যাবে কয়েকজন করে ভান্ডারী-পাগল এমন মাস্তান। তাদের কারো মাথায় লম্বা বাবড়ী কাটা ঝাকড়া চুল। কারো হাতে লোহার কিম্বা গাছের বড় লাঠি,কারো হাতে লোহা বা তামা পিতলের বালা। পোশাকে-আশাকে নিতান্তই সাধারণ। কিন্তু প্রথম দর্শনেই এদের স্বকীয় একটা বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। এদের দেখলে যে কেউই সহজে বুঝতে পারে। এরা ভান্ডারীর পাগল-মাস্তান। হক ভান্ডারীই এদের মুখের বুলি, জপমন। সারা দুনিয়াই যেন এদের ঘর। কেউ এদের পর নয়। উরস শরীফের নজরানা সংগ্রহের মিছিলে এদের উপস্থিতি পরিবেশকে করে তোলে আরো বৈচিত্র্যময়। যেখানে সেখানে এরা হালকায়ে জিকির শুরু করে দেয়। ঢোলক বাঁশীর আওয়াজ পেলে তো কথাই নেই এদের ভাবের সাগরে যেন তুফান উটে। বাল্যকালে এমন মিছিলে দু একজন মাস্তান কে ঢোলকের তালে তালে গাইতে শুনেছি “ফকিরী সহজ কথা না,লম্বা চুলে তেল মাখিলে ফকিরী পাবা না” কিম্বা ভান্ডারী! কি যাদুতে আমায় ভুলাইলি, গোস্ত দিবার আশা দিয়া কত্তি কিনালি (কত্তি অর্থ মাটির বদনা) “দেখে যারে মাইজভান্ডারে হইতাছে নুরের খেলা, নুরের মাওলা বসাইছে প্রেমের মেলা” আরো দেখেছি গান শুনে শ্রদ্ধা ও বিস্ময়ের অশ্রুসিক্ত অভিব্যক্তি।
১০ মাঘের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় মাইজভান্ডার শরীফ অভিমুখে জনগ্রোত। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় দুর দুরান্ত থেকে শত শত বাস ভাড়া করে আসেন লাখ লাখ মানুষ। সে এক অপরূপ দৃশ্য। ট্রেনে বাসে পায়দলে কেবল মানুষের মিছিল।কিসের টানে কোন সে মোহিনী আকর্ষণে কাতারে কাতারে লক্ষ লক্ষ মানুষ এদিকে ছুটে আসেন।তা আল্লাহপাকই ভাল জানেন। সুফি কবি আবদুল হাদীর ভাষায় চল গো প্রেম সাধুগণ প্রমেরী বাজার,প্রেম হাট বসিয়াছে মাইজভান্ডার মাঝার। নারী পুরুষ, শিশু যুবক সকল বয়সের সকল স্তরের মানুষের সে এক মিলনমেলা মহাসম্মিলন। সমগ্র বাংলাদেশ যেন ভেঙে পড়ে মাইজভান্ডার শরীফ গ্রামে। মাইজভান্ডার শরীফ হয়ে ওঠে সমগ্র বাংলাদেশের মহামিলন তীর্থ। গোটা দেশের সাংস্কৃতিক আর্থিক ঐক্যের প্রতীক- প্রতিভু। লাখো লাখো মানুষ শুধু যায় আর আসে, পিঁপড়ের ঝাকের মত। সে দৃশ্য চোখে না দেখলে বলে বুঝানো যাবেনা।১০ মাঘ এভাবে পরিনত হয় বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাগম স্থলে। শুধু জনসমাগম নয়,এই গোটা বিশাল গ্রামটিই তখন পরিনত হয় এক সুবিশাল এবাদতগাহে।সর্বক্ষণ চলে হালকায়ে জিকির,মিলাদ মাহফিল।দরবারের স্থানে স্থানে অজিফা পাঠ। আল্লাহর হামদ, মহনবীর নাত, আওলিয়া কেরামদের শানে গজল কাওয়ালী। ধর্মীয় পবিত্রতা, নিবেদিত প্রানের আকুতি যেন জড়িয়ে রাখে সমগ্র মাইজভান্ডার শরীফ কে। মানুষ নিজের অজান্তেই এতে হারিয়ে যায়, বিলীন হয়ে যায় মিশে যায় সেই অনাদি অনন্ত মহাশক্তির দরদী বুকে, মরমী সত্তায়। ১০ মাঘ উপলক্ষে মাইজভান্ডার শরীফে বসে এক বিরাট মেলা।বর্তমানে ঐ তারিখে দরবার শরীফের আশে পাশে বাজারগুলো যথা নাজিরহাট, নানুপুর লেলাং ফরহাদাবাদ প্রভৃতি জমে উঠে। হস্তশিল্পজাত বহু সামগ্রী এখানে বেচা কেনা হয়। চালুনি কুলা বেলুনি দা চুরি কোদাল বাঁশ বেতের অন্যান্য সামগ্রী। মাটির তৈরি তৈজস খেলনাপাতি মৌসুমি ফসল মূলা খীরা বরই হরেক রকম জিনিস পত্রের পসরা বসে। হালদা নদীর ভেতর চরে জম্মানো সাত/আট থেকে বার/চৌদ্দ কেজি ওজনের বিশাল বিশাল মুলা কাঁধে ঝুলিয়ে ঘরে ফেরেন ওরশার্থীরা। ১০ মাঘের কয়েকদিন আগে পিছে চলে চলে বেচাকেনা। ১০ মাঘ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের হরেক রকম কুটির শিল্পের এক প্রদর্শনী ও বিপণন কেন্দ্র। আবহমান বাংলাকে পরিপূর্ণ রূপে খুঁজে পাওয়া যায় এখানে।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফে সকল ঘরে চলে এ উপলক্ষে জেয়াফত। দরবারে আগত লক্ষ লক্ষ মানুষ এখান থেকে খালি মুখে ফিরে যেতে পারেন না ফিরে যান না। তারা কেউ খালি হাতে আসেন না। প্রত্যেক দল সাথে করে নিয়ে আসেন মহিষ গরু ছাগল মোরগ চাউল রান্নার মসল্লা সামগ্রী। জমা দেন দরবারে। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলে রান্না বান্না ও পরিবেশনের কাজ।যে যার নিয়ত ও মানত করে খায়। এ দরবারের তবররুক খেয়ে জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমন লোকের সংখ্যাও অগণিত। রান্না বান্নার খানা পিনার এ বিশাল আয়োজন প্রকৃত অর্থে এক বিষ্ময়কর ব্যাপার লক্ষ লক্ষ মানুষেরা সারিবদ্ধভাবে শৃঙ্খলার সহিত খেয়ে এখান থেকে যান।এর বৈশিষ্ট্য হলো এ খানা পিনায় ধনী গরীব সকলের জন্য একই ব্যবস্থা।খানা পিনা সরবরাহ করা হয় মাটির সানকিতে (বছি) বর্তমানে মেলামাইনের বাসনে (প্লেট)।হাজার হাজার মাটির সানকির প্রয়োজন হয় মাইজভান্ডার উরশ এ। এই মাইজভান্ডার শরীফই বলতে গেলে চট্টগ্রামের শত শত কুমোর পরিবারকে টিকিয়ে রেখেছে দীর্ঘদিন।অনেকেরই জানতে ইচ্ছে হয়, এখানে ১০ মাঘ কত মহিষ গরু ছাগল জবাই হয়? হিসেব করে এর জবাব দেওয়া সম্ভব নয়।বলতে গেলে হাজারো হাজার। সে এক এলাহি কান্ড। কেবল মাইজভান্ডার দরবার শরীফে নয় ১০ মাঘ সারা বাংলাদেশে এমন কি দেশের বাইরে যেখানে ভক্ত অনুসারীরা আছেন কিন্তু কোনো না কোনো কারণে দরবারে হাজির হতে পারেন নাই। তারা নিজ নিজ অবস্থানে সমবেতভাবে উরশ শরীফের আয়োজন করেন।এই উরশ শরীফ বাঙালির জাতীয় অনুষ্টানের দাবীদার। বিশেষ করে জাতি ধর্ম দল মত বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের নিঃসংকোচ ও অবাধ অংশগ্রহন এ উরশ শরীফকে সার্বজনীনভাবে গৌরবের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।

লেখক ঃ নাজমুল হাসান চৌধুরী হেলাল
আওলাদে গাউসুল আযম মাইজভান্ডারি

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায়

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, দেশের গণমাধ্যমের উন্নয়ন, সাংবাদিক সমাজের কল্যাণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ চিরদিন স্মরণ করবে। বক্তারা ঐতিহাসিক অবদান স্মরণ করতে গিয়ে উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে বায়েজিদের শেরশাহ এলাকায় সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি-তে ১৬ একর জমি বরাদ্দ দেন, যা ১৯৮১ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের আমলে তা রেজিস্ট্রি করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রেস ক্লাবের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রেস ক্লাবের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমি অতীতে তাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আবারও অনুরোধ জানাই—বেগম খালেদা জিয়াকে প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হোক।

দোয়া মাহফিলে দেশ ও জাতির শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ আনিস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সাবেক লাইব্রেরি সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যেগে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাইবার ভিত্তিক সংগঠন জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) চট্টগ্রাম দক্ষিণ উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনায় জিয়া সাইবার ফোর্স- (জেডসিএফ), চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যেগে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত। গত শনিবার বাদে মাগরিব পটিয়া তৈয়াবিয়া এতিমখানা, হেজখানা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আহ্বায়ক মোঃ আবুল বশর চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব এডভোকেট আজিজুল হক।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী বাহাউদ্দীন ফারুক মুন্না। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আরাফাত চৌধুরী, কাজী মোঃ বাদশা, নাবিদুর রহমান, মোঃ রবিউল হোসেন আলভী, মোহাম্মদ মাহিম, তানবির জিহান সহ দক্ষিণ জেলার সকল নেত্ববৃন্দ। দোয়া ও মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য রোগ থেকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেও দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ