ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা ফেনী বিলোনিয়া রেলপথের ফেনী অংশের বেশিরভাগ জায়গা এখন অবৈধ দখলে। জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নে রেলপথটির প্রায় ২০০ মিটার দখল করে৷ বিশাল খামারবাড়ি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার। তার যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি খালি জায়গায় আবাদ করার জন্য বলেছেন, তাই তিনি রেললাইনের জায়গায় আবাদ করেছেন।
জানা যায়, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ১৯২৭ সালে ২৫টি গ্রামের ২৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করে। ১৯২৯ সালে ফেনী থেকে বিলোনিয়া হয়ে আসাম পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত একটি ট্রেন চলাচল করত। পরবর্তী সময় যাত্রী স্বল্পতার কারণে ১৯৯৭ সালের ১৭ আগস্ট ওই রুটে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে রেলপথটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রেললাইনের লোহার পাত, স্লীপার খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মুন্সীরহাট, মোহাম্মদপুর, গাইনবাড়ি, বন্দুয়াসহ বহু জায়গায় রেললাইনের চিহ্নও অবশিষ্ট নেই। রেললাইন এখন পরিণত হয়েছে সড়কপথে। দখল হয়ে গেছে রেলওয়ের শত শত কোটি টাকার জমি। দখল করা জমিতে তৈরি হয়েছে দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির এবং বিভিন্ন ক্লাব। প্রায় দুবছর আগে আনন্দপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে রেললাইনের ওপর বালু সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে তিনটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার। দুটি ঘরে দুই জাতের শতাধিক গরু ও অন্য ঘরে একটি ঘোড়াসহ গরুর খাবার রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রেললাইনের দুই পাশে রয়েছে বিশাল মৎস্য প্রকল্প। রয়েছে কবুতর, টার্কি-মুরগিসহ দেশি হাঁস-মুরগির খামার। চেয়ারম্যানের এই খামারবাড়ির জন্য বিলীন হয়ে গেছে প্রায় ২০০ মিটার রেললাইন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি খালি জায়গায় আবাদ করার জন্য বলেছেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি রেললাইনের জায়গায় আবাদ করেছি। এটা ছাড়াও রেললাইনের পাশে আমার আরও জায়গা রয়েছে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ যদি চায় তাহলে আমি ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকব। রেললাইনের জায়গা শুধু আমি নয়, ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত অনেক জায়গায় দখল হয়ে গেছে। আমি অল্প কিছু করেছি, তাতে এমন সমস্যা কী?
ফেনী রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। রেলওয়ের সার্ভেয়ার বিভাগ এগুলো দেখাশোনা করে। তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।