দোকান বন্ধ করে নয়, অগ্নি নিরাপত্তায় প্রযুক্তিগত উপায় বের করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। আজ বুধবার (৬ মার্চ ২০২৪ইং) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অগ্নি নিরাপত্তায় ঢালাওভাবে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বন্ধ না করে প্রযুক্তিগত উপায় খুঁেজ বের করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
এসময় সুজন বলেন, সম্প্রতি ঢাকার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে সেবা সংস্থাগুলো। অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি এসব রেস্তোরাকে সিলগালা করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আর সরকারি যে সব প্রতিষ্ঠান রেস্টুরেন্ট বন্ধের অভিযানে নেমেছে তাদের মধ্যে নেই কোনো সমš^য়। যে যেমন ভাবে পারছেন দায়িত্ব পালনের নামে সিলগালা করে দিচ্ছেন হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট। হঠাৎ করে এসব অভিযানে আতংকিত হয়ে পড়েছে রেস্তোরা মালিকগণ। পাশাপাশি এসব রেস্তোরায় কর্মরত কর্মচারীরা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠিত। আর কয়দিন পরেই পবিত্র মাহে রমজান, এরপর পবিত্র ঈদ উল ফিতর। হঠাৎ করে এসব হোটেল-রেস্তোরা বন্ধ করে দিলে এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাই রাতারাতি দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বন্ধে এ অভিযানের সুফল মিলবে না বলে মনে করেন তিনি। বরঞ্চ সমš^য় ছাড়া অভিযান পরিচালনা করে সাময়িক জরিমানা কিংবা দোকান সিলগালা করার ফলে পুরো কার্যক্রমই প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাটি একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা কিংবা শখের বসে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়ার একটা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ফলত অনেক শিক্ষিত তরুনও পড়ালেখা শেষ করে এ ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাছাড়া উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে দেশে নিত্য নতুন খাবারের ব্র্যান্ডের আবির্ভাব ঘটেছে যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি শুভ সংবাদও বটে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসার প্রসারে এ শিল্পে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানও হয়েছে। তরুন সমাজের একটি বিশাল অংশ প্রত্য¶ এবং পরো¶ভাবে এ শিল্পের সাথে জড়িত। এ শিল্প আমাদের কৃষি, পর্যটনসহ জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সাথে আগামীতে এ শিল্প আরো ব্যাপক প্রসার লাভ করবে। সুজন আরো বলেন, আমাদের জানামতে একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে কমপক্ষে ৮-১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র নিতে হয়। নকশা, অগ্নি নিরাপত্তা, লোকেশন ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তাহলে কিভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় একটি বিল্ডিংয়ে ৭-৮টি কিংবা ১০টি রেস্টুরেন্টের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? এক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরই ভ‚মিকা কি ছিলো তাও খুঁজে বের করা দরকার বলে মনে করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক এই প্রশাসক। তিনি আরো বলেন, দেশে পাইপ লাইনের গ্যাসের সংকটের কারণে নিকট অতীতে এলপিজির ব্যবহার বেড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, ব্যাপক হারে এলপিজির ব্যবহার বাড়লেও এর সুষ্টু ব্যবহার, নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা কিংবা দুর্ঘটনা নিয়ে কোন প্রকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা কখনো করা হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। এলপিজির যত্রতত্র ব্যবহারের পাশাপাশি বেড়েছে এর দুর্ঘটনাও। তাই এলপিজির ব্যবহারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তিনি। এছাড়া এর নিরাপত্তাজনিত উন্নত প্রযুক্তিও খুঁজে বের করতে হবে। শুধুমাত্র দোকান কিংবা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে এর ব্যবহারও বন্ধ করা যাবে না বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। তাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার মতো একটি আভিজাতিক ব্যবসাকে জরিমানা কিংবা সিলগালা করে বন্ধ করে না দিয়ে এর অগ্নি নিরাপত্তায় প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান খোরশেদ আলম সুজন।