চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীর গায়ে হাত তোলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এবং প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. লতিফুল হক কাজমী। গত শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওর সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে চসিকের মালিকানাধীন সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাপ্পী ওই সমিতির প্রচার সম্পাদক।
জানা গেছে, ওই মার্কেটে চসিকের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেকের একটি দোকান আছে। দোকানটি তিনি এক ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়েছিলেন। সাত মাস আগে ওই ব্যবসায়ী দোকানে তালা দিয়ে চলে যান।
মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীরা মালেকের কাছে গিয়ে দাবি করেন, ওই দোকানি অনেকের টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। জামানতের টাকা থেকে মালেককে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু মালেক এ দাবি না মেনে দোকানটি আবার ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। আবদুল মালেক পরে সিটি কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হন। এরপর দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে মারধরের ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের দুই কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী একটি কার্যালয়ে দু’জনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। তবে ডান পাশে বসা মনির হোসেনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। সেখানে থাকা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ থামানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রেজাউল করিম আসন ছেড়ে মনির হোসেনের দিকে তেড়ে যান। থাপ্পড় দিতে থাকেন। এরপর লতিফুল হকও চড় থাপ্পড় দেন। পরে সিটি কর্পোরেশনের এক নিরাপত্তা কর্মী লাঠি দিয়ে মারতে মারতে কার্যালয়ের বাইরে নিয়ে যান।
জানতে চাইলে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য সমিতিতে বিচার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল। কিন্তু আবদুল মালেক সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের ডেকে এনে ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে মারধর করেছেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা। সমিতির কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সমিতি কার্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আনিছুর রহমান চৌধুরী।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী জানিয়েছেন, মেয়রের নির্দেশে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে এক ব্যক্তি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় হয়ত দুয়েকটি চড়-থাপ্পড় দেওয়া হতে পারে। সিটি করপোরেশনের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী চলে যাওয়ার পর দোকানটি আরও একজনকে ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন বাধা দেন। তাদের জামানতের টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। আরেকজনের টাকা কিভাবে আমি ওদের বুঝিয়ে দেব? তাছাড়া ভাড়ার চুক্তিতে উল্লেখ ছিল ভাড়াটিয়ার দেনা-পাওনার দায়ভার মালিকের ওপর বর্তাবে না। পরে দোকান বুঝে পেতে সিটি কর্পোরেশনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট দোকান বুঝিয়ে দিতে গেলে একজন খুব অসদাচরণ করায় হট্টগোল হয়েছে।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিটি করর্পোরেশনের সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ একটি দোকান মালিককে বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও লতিফুল হক কাজমী। কিন্তু সেখানে দোকান মালিক সমিতির এক সদস্য তাদের বাধা দেন। এসময় সেখানে ধাক্কাধাক্কি হয়। কাউকে মারধর করা হয়েছে এ রকম অভিযোগ কেউ করেনি। সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না বলে তিনি জানান।