আজঃ সোমবার ২৩ জুন, ২০২৫

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডার মামলার রায়ে ২ জনের ফাঁসির আদেশ

ভাই-বোনসহ ‘শিবির ক্যাডার’ সাইফুলকে খুন

চট্টগ্রামে তিন জনকে খুনের মামলায় দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন একটি আদালত। অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ‘শিবির ক্যাডার’ সাইফুল ও তার ভাই-বোনসহ তিনজনকে খুনের এই মামলার একই রায়ে আদালত আসামিদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। তবে মামলার আসামি দুই শিবির ক্যাডার র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ায় তাদের আগেই বিচার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ কামাল হোসেন শিকদার এ রায় দিয়েছেন বলে বেঞ্চ সহকারী মো. আল আমিন জানিয়েছেন।
দণ্ডিতরা হলেন আবুল কাশেম (৭০) ও মো. ইউসুফ প্রকাশ খাইট্ট্যা ইউসুফ (৭০)। তাদের বাড়ি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বালুচরা এলাকায়। রায় ঘোষণার সময় উভয়ে আদালতে হাজির ছিলেন। খুনের শিকার তিনজন হলেন— সাইফুল ইসলাম, তার ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারা বেগম। তাদের বাড়িও বালুচরা এলাকায়।
জানা গেছে, দণ্ডিত আসামদের সঙ্গে সাইফুলের জায়গা-সম্পত্তির বিরোধ ছিল। সেই বিরোধকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষ শিবির ক্যাডাররা সাইফুল এবং তার ভাই ও বোনকে খুন করেছিল। দুই দশক আগে ট্রিপল মার্ডারের এ ঘটনা চট্টগ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। এর মধ্য দিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে শিবির ক্যাডারদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফয়েজ বলেন, আসামি কাশেম ও ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের দণ্ডবিধির ৩০২, ১১৪ ও ৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ের সময় আসামি কাশেম ও ইউসুফ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, বায়েজিদ বোস্তামি থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় ৩৬ শতক জমি নিয়ে আসামি ইউসুফ ও কাশেমের সঙ্গে সাইফুলের বিরোধ চলছিল। একইসঙ্গে সাইফুলের সঙ্গে বিরোধ চলছিল ওই এলাকার তৎকালীন দুর্র্ধষ শিবির ক্যাডার মো. নছির ওরফে গিট্টু নাছিরের সঙ্গেও। গিট্টু নাছির ও সাইফুল শিবির ক্যাডার হিসেবে সেসময় চট্টগ্রাম শহরের ত্রাস ছিল। দেশজুড়ে তোলপাড় তৈরি করা অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরী খুনের মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়েছিল। উভয়ে আরেক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী শিবির নাছির ওরফে বড় নাছিরের অনুসারী ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষভাগে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রাবাস থেকে বড় নাছির গ্রেফতার হওয়ার কয়েকবছর পর গিট্টু নাছির ও সাইফুলের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এসময় দু’জন আলাদাভাবে দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তোলে এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঙ্গা-খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে।এ অবস্থায় গিট্টু নাছির ও তার অনুসারীরা সাইফুলকে খুনের পরিকল্পনা করে। বালুচরার বাসিন্দা ইউসুফ ও কাশেমও সাইফুলকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ইউসুফ-কাশেমের সঙ্গে গিট্টু নাছিরের দল এক হয়ে সাইফুলকে খুনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। ২০০৪ সালের ২৯ জুন বালুচরা এলাকায় সাইফুলের বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে গিট্টু নাছির, তার সহযোগী ফয়েজ মুন্না ও আজরাইল দেলোয়ার। সঙ্গে ছিল কাশেম ও ইউসুফ।
গিট্টু নাছিরদের দেখে সাইফুল ও তার ভাই আলমগীর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। হামলাকারীদের ঠেকাতে মনোয়ারা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ফয়েজ তাকে গুলি করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পালানোর সময় পেছন থেকে আলমগীরকে ফয়েজ মুন্না গুলি করে। আলমগীর পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর কাশেম সাইফুলকে দেখিয়ে নাছিরকে নির্দেশ দিয়ে বলে, ‘এ শালাকে জীবনে শেষ করে দে।’ সঙ্গে সঙ্গে গিট্টু নাছির গুলি ছুড়লে সাইফুল কপালে, বুকে, পেটে, পিঠে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলমগীরও মারা যায়।
এ ঘটনায় সাইফুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বায়েজিদ বোস্তামি থানায় বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে আজরাইল দেলোয়ারের নাম এজাহার ও অভিযোগপত্রে আসেনি, যদিও তদন্ত প্রতিবেদনে তার নাম ছিল। কিন্তু র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে মারা যাওয়ায় তার নাম বাদ পড়ে।২০১৭ সালের ৫ জুলাই ইউসুফ ও কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারা যাওয়ায় গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্নাকে বিচার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত রায় দেন।

এদিকে বাবাকে নির্দোষ দাবি করে আসামি ইউসুফের ছেলে মো. পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমার বাবাকে এখানে ফাঁসানো হয়েছে। এ মামলা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে করা হয়েছিল। জামায়াত-শিবিরের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে ওই খুনগুলো হয়েছিল। আমার বাবা আওয়ামী লীগের অনুসারী। ২০১০ সালে রাষ্ট্রপক্ষের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল মামলা বাতিল করার জন্য। ২০১৩ সালে মামলা বাতিলের জন্য এ আদালতে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছিল। এটা কার্যকর না করে একতরফাভাবে ওনাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা হাইকোর্টে যাব বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাজশাহীতে গাঁজা ও ইযাবা সহ মহিলা গ্রেপ্তার

রাজশাহীতে গাঁজা ও ইয়াবা সহ মহিলা গ্রেপ্তার হয়েছে ।
রাজশাহীর শাহমখদুম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০০ গ্রাম গাঁজা ও ৬০ পিস ইয়াবাসহ একজন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোসা: খালেদা বেগম (৪০)। সে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার হরিষার ডাইং এলাকার মো: জীবন রাইহান সেলিমের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুমা মুস্তারীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শাহমখদুম থানা পুলিশের একটি টিম মাদকদ্রব্য উদ্ধার সংক্রান্ত নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছিল।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, হরিষার ডাইং এলাকায় একটি বাড়িতে গাঁজা ও ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে এসআই মো: আব্দুল্লাহেল বাকীর নেতৃত্বে সকাল পৌনে ৭টায় উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় অভিযুক্ত খালেদা বেগম পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে বিকাল ৪টায় আবার অভিযান চালিয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাঁজা ও ৬০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।

গ্রেপ্তারকৃত খালেদা বেগমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শাহমখদুম থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে ।

চট্টগ্রামে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্য গ্রেফতার

চট্টগ্রামে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় চুনতি রেঞ্জ বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম খাতুরিয়া গ্রামের নুরুল আলমের ছেলে আবুল কাশেম ওরফে জামাই কাশেম, কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার ফুলতলা গ্রামের মৃত জেবল হোসেনের ছেলে ছাদেকুর রহমান, চকরিয়া বাজারপাড়া গ্রামের মো. মাসুকের ছেলে মো. কামাল এবং পূর্ব বড় ভেওলা সিকদারপাড়ার মৃত আলমগীরের ছেলে কেফায়েত হোসেন। গ্রেফতার আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতি, হত্যাচেষ্টা ও নারী-শিশু নির্যাতনসহ অন্তত ১১টি মামলা রয়েছে। অপর ৩ আসামির বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, চেকপোস্টে তল্লাশির সময় সন্দেহভাজন একটি গাড়ি থামানো হলে ডাকাতদলের সদস্যরা পালানোর চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া দিয়ে ৪ জনকে আটক করা হয়। তল্লাশিতে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, ২টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৪ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ, ১টি রামদা, ১টি স্প্রিং চাকু ও ২টি ধারালো চাকু, ১টি লোহার কাঁচি, ২টি শাবল, ৪টি মোবাইল ও ১টি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও ৮২৪ টাকার খুচরা কয়েন এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ জব্দ করা হয়।

পুলিশ আরো জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ফকিরপাড়া এলাকায় সংঘটিত একটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা সেখানে ডাকাতি করে লুণ্ঠিত অর্থ ও মালামাল কক্সবাজারের চকরিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিল।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ