
সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিন্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) এর মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ’র দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর থেকে গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেশের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া জাহাজটি। আগামী ১২ মে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানায় পৌঁছাতে পারে বলে জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে। মিনা সাকার বন্দর থেকে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি ৫৬ হাজার টন পাথর নিয়ে দুবাই ছেড়েছে।
জাহাজের মালিকপক্ষ চট্টগ্রামের কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, আমাদের জানানো হয়েছে, মধ্যরাতে এমভি আবদুল্লাহ মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট সময় আমরা কৌশলগত কারণে প্রকাশ করছি না। ১২ মে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছাতে পারে। আমদানি করা ৫৬ হাজার মেট্রিকটন চুনাপাথর নিয়ে জাহাজটি আসছে। ২৩ জন নাবিক জাহাজেই দেশে ফিরছেন।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারামিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুরা নেমে যাবার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়। জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙ্গর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। পরদিনই জাহাজটি দেশের উদ্দেশে রওনা দেয়ার কথা থাকলেও চুনাপাথর বোঝাইয়ে বাড়তি সময় লাগার কারণে সেটি পিছিয়ে যায়।
এর আগে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরবসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কেএসআরএম গ্রুপের এস আর শিপিং লিমিটেডের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তবে এবার মাত্র ৩৩ দিনেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটিকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা হয়েছে।