আজঃ শুক্রবার ৭ নভেম্বর, ২০২৫

কিংবদন্তী কন্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর প্রয়াণ দিবস

উজ্জল কুমার সরকার

সংস্কৃতি ও বিনোদন:

 

আজ ৭ মে কিংবদন্তী শিল্পী সুবীর নন্দীর প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি মুগ্ধ করে রেখেছিলেন বাংলা গানের শ্রোতাদের। তার কণ্ঠ ছুঁয়ে নেমেছে অসংখ্য কালজয়ী শ্রোতাপ্রিয় গান। তিনি দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী।
বাংলা গানের কিংবদন্তি সুবীর নন্দী ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দীপাড়া নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মেই দেখেছেন পরিবারে নিয়মিতই সংগীত চর্চা চলে। তার পিতা সুধাংশু নন্দী ছিলেন তেলিয়াপাড়া চা এস্টেটের চিকিৎসক ও সংগীতপ্রেমী মানুষ। তার মা পুতুল রানী চমৎকার গান করতেন। তিনিই তার সন্তানদের গানে হাতেখড়ি দিয়েছেন। আর সব ভাইবোনের মতো সুবীর নন্দীও মায়ের কাছে প্রথম সংগীতে শিক্ষা নেন।
আর একাডেমিক শিক্ষাতেও বেশ মেধাবী ছিলেন তিনি। পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই সুবীর নন্দীর কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানেই ছিলেন তিনি। পড়েছেন হবিগঞ্জ সরকারী হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
১৯৬৩ সালে অন্য নয় ভাইবোনের সঙ্গে ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নিতেন। বাবার আগ্রহ, মা ও গুরুর কাছ থেকে পাওয়া দীক্ষা ও নিজের অজান্তে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পঙ্কজ মল্লিক, সায়গল, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, জাগজিৎ সিং প্রমুখের ভক্তে পরিণত হয়ে সুবীর নন্দী কৈশোরেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিল্পী হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো ১৯৭০ সালে। ওই বছর সুবীর নন্দীর রেকর্ডকৃত প্রথম গান মোহাম্মদ মুজাক্কেরের কথায় এবং ওস্তাদ মীর কাসেম সুরারোপিত ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’ প্রকাশ পায়। এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি গান করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রে। গেয়েছেন বেতারেও অসংখ্য জনপ্রিয় গান। আর ২৪টির মতো একক অ্যালবামও প্রকাশ পেয়েছে তার। গান গাওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু গানের সুরও করেছেন। তার গাওয়া জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি,’ ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘নেশার লাটিম ঝিম ধরেছে’, ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’, ‘আশা ছিলো মনে মনে’, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল’ অন্যতম।
সুবীর নন্দী ১৯৮৪ সালে ‘মহানায়ক’ ছবিতে, ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ ছবিতে, ১৯৯৯ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে এবং সর্বশেষ ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে গান করে ২০০৪ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়াও দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন সুবীর নন্দী। ব্যক্তি জীবনে নন্দিত এই শিল্পী দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ের নাম ফাল্গুনী নন্দী এবং ছোট ছেলের নাম হৃদ্যিমান।
সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগছিলেন। ৭ মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি।
নওগাঁ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ফুল আর ফুলকি

ফুল আর ফুলকি
মাদ্রাসায় পড়ে,
প্রতিদিন আসে যায়
রিক্সায় চড়ে।
দু’জনই জেগে ওঠে
পাখি ডাকা ভোরে,
কোরআনের বাণী পড়ে
সুমধুর সুরে।
পাঠ্যেও মনোযোগী
দু’জনই ভালো,
ঘরে ঘরে পৌঁছায়
শিক্ষার আলো‌।
ফুল আর ফুলকি
আঁধারের বাতি,
প্রতিদিনই খোঁজে তাদের
মুসলিম জাতি।

কথা-কবিতা-গান-সম্মাননায় সাউন্ডবাংলার অনবদ্য আয়োজন অনুষ্ঠিত ।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সাউন্ডবাংলা এবং দৈনিক পূর্বাভাস-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আলোর কবিতা-কথা ও ভালোর গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান ।

অতিসম্প্রতি রাজধানীর পল্টন বিজয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব এম শাহজাহান আলী । কথাশিল্পী শান্তা ফারজানা ও কলামিস্ট মোমিন মেহেদী নিবেদিত এই মহতী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভিনেতা সাংবাদিক মোখলেছুর রহমান তোতা ।

বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাশিল্পী কালাম ফয়েজী, ব্যাংকার ও কবি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান কবি রিপন শান এবং
ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিল-এর ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাংবাদিক নাহিদ হাসান এবং বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান কবি রিপন শান । শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় দৈনিক পূর্বাভাস এর যুগ্ম সম্পাদক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি।

এ আয়োজনে সাহিত্যবন্ধু সম্মাননা পেয়েছেন- কথাসাহিত্যিক কালাম ফয়েজী, কাব্যবন্ধু সম্মাননা পেয়েছেন কবি রিপন শান, সমাজবন্ধু সম্মাননা পেয়েছেন ফেরদৌসি আক্তার রেহানা ও মিজানুর রহমান মোল্লা ।
অনুষ্ঠানে গান ও অভিনয়ের রকমারি নৈবেদ্য পরিবেশন করেন- ছড়াকার গোলাম নবী পান্না ।

সমকালীন বাংলা ভাষার প্রধান কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার অনবদ্য আবৃত্তি পরিবেশন করেন প্রভাষক কবি রিপন শান , কবিতা পাঠ করেন- দৈনিক পূর্বাভাসের যুগ্ম সম্পাদক সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, কবি আলতাফ হোসেন রায়হান, শিক্ষক কবি আবদুল মান্নান, প্রকাশক হাফেজ নূরুজ্জামান, কবি বিমল সাহা, দৈনিক পূর্বাভাস-এর স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল রহমান হক, ছড়াকার শাহজামাল, কবি আবু বকর সিদ্দিক, ছড়াকার মোহাম্মদ শামিম মিয়া প্রমুখ।

lki9i
অনুষ্ঠানে অতিথিগণ বলেন- একাত্তরের স্বাধীনতা কারো বাপদাদার একার সম্পত্তি নয়; এই স্বাধীনতা সকল নাগরিকের। সেই স্বাধীনতাকে কোনো দল গোষ্ঠি বা ব্যক্তি খাটো করার চেষ্টা করলে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। ভুলে গেলে চলবে না, অতীতের অন্যায়ের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতেই অন্তবর্তী সরকারের সৃষ্টি । j

অতএব, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র না। জাতীয় সাংস্কৃতিকধারার পৃষ্ঠপোষকতায় পুরস্কার ভিত্তিক ‘সাউন্ডবাংলা-পল্টনাড্ডা-১০২’ এর পঠিত লেখার মধ্য থেকে বিজয়ী হন ছড়াকার মোহাম্মদ শামিম মিয়া ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ