ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা ভারি বর্ষণ চলছে চট্টগ্রাম নগরী প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি আর জোয়ারে বন্দরনগরীর নিম্নাঞ্চলসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মূল সড়ক, অলিগলি কোমরপানিতে ডুবে আছে। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভোগান্তি। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী ও শ্রমজীবীরা।
এছাড়া নগরের উপকূলীয় এলাকা পতেঙ্গার আকমল আলী রোড সংলগ্ন জেলেপাড়া অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়ে সেখানকার প্রায় ৩০০ পরিবার। এছাড়া বন্দরে এলার্ট-৪ জারি করে জেটি, বহির্নোঙর এবং ইয়ার্ডে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে পানিবন্দি বাসায় আটকে পড়েছিল খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
গতকাল সোমবার রেমালের প্রভাবে ভোর থেকে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহানগরীর চকবাজার, কাপাসগোলা, ওয়াসার মোড়, তিন পোলের মাথা, মেহেদীবাগ সিডিএ কলোনি, বহদ্দারহাট, হালিশহর, আগ্রাবাদ, আগ্রাবাদ সিডিএ , মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়, বাদুরতলসহ বিভিন্ন এলাকা কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। এতে ছোট তিন চাকার যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বাস, প্রাইভেট কারসহ বড় যানবাহন চলাচলেও বেগ পেতে হচ্ছে।
নগরীর চকবাজার এলাকার মোহাম্মদ আলী সড়কের বাসিন্দা সৈয়দ মাহমুদ জামিল বলেন, আমার বাসার ভেতরে-বাইরে কোমর পানি। বাথরুমেও পানি উঠে গেছে। বাচ্চারা বাথরুমেও যেতে পারেনি। সোফা, খাট সব পানিতে ডুবে গেছে। বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে কোনোভাবে বের হয়েছি। পানি আরও ওঠার সম্ভাবনা আছে।
গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নুর জাহান আক্তার নুরা জানান, পানির চাপে ঘরের জানালা ভেঙ্গে গেছে। এক কোমর পানিতে ঘরের কোথাও বসার জায়গা নেই। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। ঘর থেকে বের হওয়ারও সুযোগ নেই। এ দুর্যোগ থেকে কখন মুক্তি পাব জানি না।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর এলাকা সকাল থেকেই পানিতে পানিতে টইটম্বুর হয়ে আছে। বড় গাড়িগুলোকে যাতায়াতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে উপায় না পেয়ে কোমর পানিতেই নেমে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। হালিশরের অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন কার্যালয়ও পানিতে থইথই।
নগরীর বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন যথারীতি পানিতে তলিয়ে গেছে। মেয়র বাসা ছেড়ে বের হতে না পারায় অফিসে পৌঁছাতে পারেননি। বাসার সামনে জমে থাকা পানি মোটর দিয়ে সড়কে ফেলতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী বলেন, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকছে। আমরা কয়েকটি টিম করেছি। তারা জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণে কাজ করেছি।
চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গাও প্লাবিত হয়েছে। সীতাকুন্ড, রাউজান, লোহাগাড়া ও ফটিকছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকাতেও বৃষ্টির পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। মিরসরাইয়ে সৃষ্ট দমকা বাতাসে গাছ পড়ে তামরীজ একাডেমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় সকালে পানি থাকলেও এখন নেই।
তবে গতকাল সোমবার জেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।