
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বহুল আলোচিত পাঁচ বছরের শিশু কাজী মশিউর রহমান প্রকাশ ওয়াসিম হত্যা মামলায় এক আসামীর ফাঁসি এবং অপর আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করে রায় দিয়েছেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৪ বছর পর গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক জনাব মুহাম্মদ রবিউল আউয়াল আসামিগনের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলো-কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব। এ সময় আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড ও অনাদায়ে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডেও দন্ডিত করেন। রায়ে অপর আসামী কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। আসামীগণ পরস্পর সহোদর ভাতা। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণে ওয়াসিম হত্যা মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামি কাজী নাহিদ হোসেন পল্লবকে মৃত্যুদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামি রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন, পরে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লব নামে এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর বিকেল ৫টায় মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়নের ভূঁইয়া তালুক কাজী বাড়ির পূর্বপাশের ছনখোলায় আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব ৫ বছর বয়সী শিশু ওয়াসিমকে ১০ মিনিটের উপরে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এ সময় সিগারেটের আগুনে ছ্যাকা দিয়ে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই রাতে আসামীর পরিবারের সদস্যরা ছনখোলা থেকে শিশুর লাশকে বস্তাবন্দী করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। এদিকে শিশুটিকে না পেয়ে শিশুটির জেঠা কাজী একরামুল হক মিরসরাই থানায় পরের দিন ২৩ নভেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরী দাযের করেন। ঘটনার পরেদিন শিশুর বস্তাবন্দী লাশ পাশের ধানক্ষেতে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে পরিবারের সদস্যদের দিয়ে শিশু ওয়াসিমের লাশ নিশ্চিত হয়ে ঘটনাস্থল ছনখোলা থেকে আসামীর মোবাইল ও শিশুটির স্যান্ডেল উদ্ধার করে হত্যাকারীকে সনাক্ত করে। শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর মিরসরাই থানায় শিশুটির জেঠা একটি মামলা (নং-২২(১১)১০) দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি দায়রা জজ আদালতে দায়রা মামলা (নং-১১২৫/২০১২) মূলে চলমান থাকে। গত ২৯ মে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব ও কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে জামিন নামঞ্জুর করে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলা চলাকালীন সময়ে আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব হত্যার দায় স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জাবনবন্দি দেন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরুতে ৩০২/২০১ দন্ড বিধি ধারায় আসামী কাজী নাহিদ হোসেন পল্লব, তার ভাই কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লব, বাবা ফজলুল কবির প্রঃ হরমুজ মিয়া ও মা মিসেস নুর জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে ফজলুল কবির প্রঃ হরমুজ মিয়া ও মিসেস নুর জাহান বেগম মারা যান।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট স্বভু প্রসাদ বিশ্বাস ও এডভোকেট মো. মুজিবুর রহমান চৌধুরী(ফারুখ)। শিশুটির পিতা কাজী মোশাররফ হোসেন বাবলু জানান, আমার অবুঝ আদরের সন্তান কাজী মশিউর রহমান প্রঃ ওয়াসিমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এই দুই আসামীর মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু মাননীয় আদালত একজনের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে আমি উচ্চ আদালতে আপীল করবো, যাতে ওই আসামিরও সাজা হয়।