আজঃ বুধবার ২১ মে, ২০২৫

নন্দী ভাঙ্গনের প্রতিযোগীতায় চট্টগ্রাম

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম

নদী ভাঙ্গনের তীব্র প্রতিযোগীতায় চট্টগ্রাম। প্রতি বছর নতুন নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়ছে হাজারো পরিবার। এই নন্দী ভাঙ্গনের কলার ঘ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মসজিদ মন্দির, গীর্জা প্যাঘোড়া,প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান। বন্যা, পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, সাঙ্গু ও হালদা নদীর পাড় ভাঙছেই। সাম্প্রতিক বন্যায় চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলার ১৩৭টি পয়েন্টের ১২ কিলোমিটার নদীর তীর ও ২০টি রেগুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায়। পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদী ও টঙ্কাবতী খালের পানি বিপদসীমায় প্রবাহিত হয়ে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাঁধ মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান,বোয়ালখালী উপজেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় প্রবহমান নদী ও খালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাউবো বিভাগ-১-এর আওতাধীন এলাকার ৯৮টি স্থানের প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়ার জঙ্গলখাইনে ৩৪৫ মিটার খালের পাড়, বড়লিয়ায় ১২০ মিটার খালের পাড়, জিরি রেগুলেটরের ক্লোজার, ভাটিখাইনে ১২০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, কাশিয়াইশে রেগুলেটরের ব্যারেল সেটেলমেন্ট, চন্দনাইশের বৈলতলী ও বরমায় ২৮৭ মিটার সাঙ্গু নদীর ভাঙন, লোহাগাড়ার পদুয়ায় ২০০ মিটার ডলু নদী ভাঙন, আমিরাবাদে ৩৯৫ মিটার খাল ও নদীর তীর ভাঙন, আধুনগরে ৬৯০ মিটার খালের পাড় ও নদীর তীর ভাঙন, সাতকানিয়ার চরতি এলাকায় ৪৫০ মিটার সাঙ্গু নদীর ভাঙন, সাতকানিয়া পৌরসভায় ৭০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, দক্ষিণ আমিলাইশে ৭০ মিটার খালের পাড় ভাঙন, এওচিয়া ও নলুয়ায় ১৫০ মিটার খালের পাড়ে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। আনোয়ারার জুঁইদণ্ডীতে ২ হাজার ৯৫০ মিটার বেড়িবাঁধ ধস ও নদীর তীর ভাঙন, রায়পুরে ১ হাজার ৩৫০ মিটার খালের পাড় ও নদীর তীর ভাঙনের পাশাপাশি নতুন কাজের ডাম্পিং জোন ক্ষতিগ্রস্ত ও বেড়িবাঁধে ভাঙন, পরৈকোড়ায় ৮০০ মিটার ইন্টেরিয়র ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত, বারখাইন, বরুমচড়া ও হাইলধরে ৬৮০ মিটার ইন্টেরিয়র ডাইক ক্ষতিগ্রস্ত, ফটিকছড়ির নাজিরহাট ও সমিতির হাটে ৭০৫ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, সুন্দরপুরে ৬৭০ মিটার নদীর তীর ভাঙন, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, রেগুলেটরের রিটেইনিং ওয়াল ও অ্যাপ্রোন ক্ষতিগ্রস্ত, সুয়াবিলে ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, কাঞ্চননগরে ১২০ মিটার খালের পাড় ভাঙন এবং হাটহাজারীর ফতেপুরে ৬০ মিটার রেগুলেটরের ব্লক ধসে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে পাউবোর (বিভাগ-১) নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এবার পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। তাই ১৯৬০ সালে নির্মিত বাঁধ টপকে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাঁচ উপজেলা যথাক্রমে বোয়ালখালী, পটিয়া চন্দনাইশ,আনোয়ারা,বাঁশখালী, ও উত্তর চট্টগ্রামের দুটি উপজেলায় ৮৮টি স্থানে নদী ও খালের প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে কয়েকটি প্রকল্পের কাজও চলমান রয়েছে। এসব জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এসব সংস্কারে অন্তত ৪৫ কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান তিনি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি বিভাগের আওতাধীন এলাকার মধ্যে রাউজানের ২৯টি স্থানে ১ হাজার ২১০ মিটার নদী ও খাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডাবুয়া খালের বাম তীরে তেলিপাড়ায় ৭০ মিটার, সর্তা খালের ডান তীরে উত্তর সর্তা এলাকায় ৫০ মিটার, সর্তা খালের গনি পাড়ায় ১০০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে তৌকির আহমদ সড়কে ৫০ মিটার, সর্তা খালের বাম তীরে চিকদাইর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় ৭০ মিটার, পৌরসভায় ডাবুয়া খালের বাম তীরে সৈয়দ কাজী বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় ৬০ মিটার বাঁধ, বাম তীরে সৈয়দ বাড়ি সংলগ্ন বাঁধের ব্রিজ ১৫ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে জানানীহাট ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধের ঢাল ১০০ মিটার, ডান তীরে ব্রাহ্মণ পাড়া এলাকায় বাঁধের ঢাল ১০০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে জানালীহাট ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধ ৩৯০ মিটার, ডাবুয়া খালের ডান তীরে শ্যামল পালিত ব্রিজ সংলগ্ন, বাম তীরে সন্দ্বীপ পাড়া এলাকায় বাঁধ ৮০ মিটার, ডাবুয়া খালের বাম তীরে রোহিঙ্গা বিলে বাঁধের ঢাল ৫০ মিটার, ডান তীরে আলীরখীল ব্রিজ সংলগ্ন বাঁধের ব্রিজ ৩৫ মিটার, কাগতিয়া রেগুলেটর সংলগ্ন হালদা নদীর বাম তীরে ৪০ মিটার, রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটায় কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে ৮০ মিটার, কদমতলীর মাহফুজ খালের বাম তীরে ১০ মিটার, কদমতলীর ফ্লাড বাইপাসে মাহফুজ খালের বাম তীরে ১০ মিটার, বেতাগীর কর্ণফুলী নদীর ডান তীরের দুটি অংশে ১০০ মিটার, পদুয়ার বাঙ্গালহালিয়া খালের ডান তীরে ৩০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর ১২টি রেগুলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শার মান্দারী খালের রেগুলেটর ও নেভিগেশন সংলগ্ন এলাকায় হালদা নদীর ডান তীর ৫০ মিটার, মেখলের বোয়ালিয়া খালের ৭ ও ৫ ভেল্ট রেগুলেটরের মধ্যবর্তী গাইড বাঁধ, হালদা নদীর ডান তীরে ৫০ মিটার, গড়দুয়ারা প্যারাখালী খালে রেগুলেটর সংলগ্ন এলাকায় হালদা নদীর ডান তীরে ৩২ মিটার, গড়দুয়ারা চেংখালী খাল বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ সংলগ্ন হালদা নদীর ডান তীরে ৬০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রায়পুরাতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন’র স্কুল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

রিইন্টিগ্রেশন অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট , ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের সচেতনতা আনয়নে স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপদ অভিবাসন ও রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনার উপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্কুলের সাধারন শিক্ষার্থীদের নিয়ে।

আজ (১৮ মে) রবিবার সকাল ১১ টায় নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের শতদল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরনে অভিবাসীদের জন্য পরিচালিত প্রশিক্ষন, রেফারেলসেবা এবং সরকারি সেবাসমুহ সম্পর্কে ফিল্ড অর্গানাইজার মোছাঃ শরিফা আক্তার শিক্ষার্থীদের জানান। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে অভিবাসীদের কল্যানে কাজ করে আসছে। মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিদেশ ফেরতদের পুনরেত্রীকরণ এবং ভুক্তভোগীকে জরুরি সাহায্য প্রদানসহ নানা ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষকা শারমিন আক্তার শিল্পী ও ব্র‍্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের ভলান্টিয়ার সোহানা আক্তার, মোস্তাকিমা আক্তার,চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের রেনু আক্তার’সহ প্রমুখ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে মারাত্মক আহত পুত্রবধূ-পলাতক শ্বশুর-শাশুড়ি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে শ্বশুর-শাশুড়ির নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জিয়াসমিন (৩২) নামের এক গৃহবধূ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাথ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। আহত জিয়াসমিন ওই গ্রামের আতিকুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর পিতার বাড়ি একই উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

তিনি মৃত জামাল উদ্দিন জুমুর মেয়ে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকালে পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর আলহাজ্ব সাইদুর রহমান মিয়া (৭০) ও শাশুড়ি আলহাজ্ব আয়েশা বেগম মিলে পুত্রবধূ জিয়াসমিনকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারান জিয়াসমিন। ধারণা করা হয়, তাঁরা তাঁকে মৃত ভেবে রেখে পালিয়ে যান। পরে

প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। জিয়াসমিনের পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্যাতন করে আসছিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। একাধিকবার এ নিয়ে সালিস হলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুইজন হজ করে এসে যদি মানুষ না হন, তাহলে সেটা সমাজের জন্য লজ্জার। একজন গৃহবধূকে এভাবে নির্যাতন করার অধিকার তাঁদের নেই। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। ঘটনার পর অভিযুক্ত সাইদুর রহমান ও আয়েশা বেগম পলাতক রয়েছেন।

তাঁদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় চাকলা গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঘটনাটি পারিবারিক কলহ থেকে ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। একটি পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, অন্য পক্ষও অভিযোগ দিতে পারে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ