আজঃ শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষাজীবনের অন্যতম প্রকাশ মাধ্যম পাঠ্যপুস্তক

রতন চন্দ্র পাল:

উপ-সম্পাদকীয়

মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ মাধ্যম হচ্ছে বই। মানুষের প্রাপ্তি এবং বঞ্চনা, সফলতা ও ব্যর্থতা এবং আশা-আকাক্সক্ষার একত্র প্রকাশ হলো বই। বই মানুষকে পূর্ণতা দান করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায় চিরকাল। তবে বই বিভিন্ন রকমের ও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনের অন্যতম প্রকাশ মাধ্যম হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক বা পাঠ্যবই। সাধারণত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন এবং তাদের সার্বিক চাহিদা মেটাতেই পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে পঠিত বই। উৎকৃষ্ট বই হিসেবে পাঠ্যপুস্তকের অনন্য ভূমিকা রয়েছে, যা পাঠে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জ্ঞানপিপাসা মেটে। শিক্ষার্থীদের সফলতার দিক লক্ষ করে, নির্দিষ্ট কারিকুলাম অনুযায়ী প্রখ্যাত শিক্ষকগণসহ শ্রেণি শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে এ পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়ে থাকে। পাঠ্যপুস্তক দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষার জন্য মৌলিক জ্ঞানের প্রসারে এবং শিক্ষামূলক কাঠামো গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন/বই নির্বাচন : উৎকৃষ্ট বই মানুষকে যেমনি প্রকৃত সুখ ও আনন্দ দান করে তেমনি পাঠ্যপুস্তকসমূহ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করে। পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া- যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান ও কার্যকারিতা নির্ধারণে আবশ্যকীয় ভূমিকা পালন করে। পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা হয়। যেমন : ১. শিক্ষাক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, ২. বিষয়বস্তুর গুণগত মান নির্ধারণ, ৩. সহজ ভাষা ও উপস্থাপন শৈলী, ৪. অনুশীলনী ও কার্যক্রম, ৫. চিত্র ও উদাহরণ, ৬. শিক্ষাবিদগণের মতামত, ৭. শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া।
অতএব, শিক্ষাজীবনে পাঠ্যপুস্তক নির্ধারিত বিষয়ের বহুমুখী জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে; পাশাপাশি সৃজনশীল বই যা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট তা নির্বাচন করাও যুক্তিযুক্ত। শিক্ষাজীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বই নির্বাচন করাই সমীচীন।
পাঠ্যপুস্তক কী বা কাকে বলে : শিক্ষাক্ষেত্রে নির্ধারিত শ্রেণির সংশ্লিষ্ট পাঠ্যক্রম অনুযায়ী রচিত পুস্তককে পাঠ্যপুস্তক বলা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তকের বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। আর এ পাঠ্যপুস্তক রচনায় সকল দেশেই কিছু নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। উদ্দেশ্যমুখী শিক্ষাক্রমের আলোকে বাছাইকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী রচিত বই বা পুস্তককে পাঠ্যপুস্তক বলা হয়।
পাঠ্যপুস্তক এমন একটি বই যা সাধারণত শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর ওপর পাঠদান করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়। পাঠ্যপুস্তক শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে সঠিক ও বিস্তারিত ধারণা দিতে সহায়ক হয়। সাধারণত পাঠ্যপুস্তকগুলোতে তথ্য, উদাহরণ, চিত্র এবং অনুশীলনী থাকে, যা শিক্ষার্থীদের বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে ও অনুশীলন করতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের এমনকি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক। সমাজ ও দেশের যুগোপযোগী চাহিদাকে সামনে রেখে নির্বাচিত শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্য বিষয়, পাঠ্যসূচি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে এ বিশাল কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। আর উদ্দেশ্যমুখী এ শিক্ষাক্রমের সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাছাইকৃত পাঠ্যসূচি নিয়ে শিক্ষাপদ্ধতির উপযোগী করে উপস্থাপনকারী পুস্তককেই পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা : পর্যালোচনা শব্দের আভিধানিক অর্থ অনুশীলন, সমস্ত বিষয় চর্চা, সর্বতোভাবে আলোচনা বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করাকে বোঝায়। পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা বলতে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় বৈশিষ্ট্য, অঙ্গসংগঠন, ধারাবাহিকতা রক্ষা, উপস্থাপন কৌশল, সুখপাঠ্যতা ইত্যাদি বিষয়ের বিচারবিশ্লেষণকে বোঝায়। এটি শিক্ষাবিদ, শিক্ষার্থী, এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনার উদ্দেশ্য হলো পাঠ্যপুস্তকটি শিক্ষার্থীদের জন্য ঠিক কতটা উপযোগী এবং তা তাদের শেখার প্রক্রিয়ায় কতটা সহায়ক তা নির্ধারণ করা। পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে : বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ ® ভাষা ও প্রকাশনার মান ® চিত্র এবং উদাহরণ ® অনুশীলনী ও প্রশ্ন ® শিক্ষাগত উপযোগিতা ® সামঞ্জস্য।
পাঠ্যপুস্তকটি শিক্ষাক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না এবং শিক্ষাক্রমের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক কি না তা পরীক্ষা করা। এভাবে পর্যালোচনা করার মাধ্যমে শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞগণ পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান ও উপযোগিতা নির্ধারণ করেন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন বা পরিমার্জনের সুপারিশ করেন।
পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব : শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য পাঠ্যপুস্তক অপরিহার্য। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া পাঠ্যসূচিও অর্থহীন হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে এখনো অনেকে পাঠ্যপুস্তককে শিক্ষাক্রম মনে করেন। এটি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণা না থাকা বা পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অনুধাবন করতে না পারা থেকে হতে পারে। পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অনেক এবং এটি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই পাঠ্যপুস্তকের ওপর নির্ভরশীল। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক পাঠ্যপুস্তক অনুসরণ করেই মূলত পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে পাঠ্যপুস্তক পড়ে জ্ঞান লাভ করে এবং শিক্ষকপ্রদত্ত বাড়ির কাজ তৈরি করে।
অভিভাবকগণের দায়িত্ব : অভিভাবক পাঠ্যপুস্তক দেখে সন্তানদের লেখাপড়ায় সাহায্য করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতার মূল্যায়ন করার জন্য পরীক্ষকেরও পাঠ্যপুস্তকের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক প্রশিক্ষকগণ পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানা রকম গবেষণা করেন এবং তাঁদের সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা ও বক্তব্যকে শিক্ষার্থীদের সামনে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমেই তুলে ধরেন।
পাঠ্যপুস্তকের বৈশিষ্ট্য : শিক্ষার পূর্বনির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক সাধারণ ও বিশেষ উদ্দেশ্যসমূহকে সামনে রেখে নির্বাচন করা হয় শিখনফল। শিখনফলের নিরিখে তালিকাভুক্ত করা হয় ভাববস্তুর। ভাববস্তুর আলোকে নির্ণীত হয় বিষয়বস্তু। আর বিষয়বস্তুর সামগ্রিক চিত্র হিসেবেই লেখা হয়ে থাকে পাঠ্যপুস্তক।
পাঠ্যপুস্তকের কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকা আবশ্যক, কেননা এ পাঠ্যপুস্তকই শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাক্রম ও শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধন বা যোগসূত্র স্থাপনে বিশেষভাবে কাজ করে এবং জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিম্নে পাঠ্যপুস্তকের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মৌলিক ধারণা ও নীতি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২. পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য, ধারণক্ষমতা ও মানসিক পরিপক্বতা বিবেচনা করা হয়। ৩. পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট পাঠ্যসূচি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়। ৪. পাঠ্যপুস্তকের অধ্যায়গুলোর বিন্যাস শিক্ষাদান প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে। ৫. বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও আগ্রহ পূরণ করে থাকে। ৬. পাঠ্যপুস্তকটি মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে সহায়ক হবে। ৭. পাঠ্যপুস্তক বিতর্কিত ধ্যানধারণা মুক্ত হবে। ৮. শিক্ষাক্রমে নির্ধারিত উদ্দেশ্য ও শিখনফলের আলোকে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু নির্বাচিত হবে। ৯. পাঠ্যপুস্তকের আকার, আয়তন, ডিজাইন, বাঁধাই, মুদ্রণ, ছাপার অক্ষরের আকার, কাগজের মান, দাম ইত্যাদি যুক্তিসংগত ও যুগোপযোগী হবে। ১০. পাঠ্যপুস্তকে বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন উদাহরণ, প্রসঙ্গ, ছবি, চিত্র বা ডায়াগ্রাম দেওয়া হয়Ñ যা শিক্ষার্থীদের বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। ১১. প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ ও অনুশীলনমূলক প্রশ্ন দেওয়া হয় যা শিক্ষার্থীদের নিজেদের জ্ঞান পরীক্ষা করতে এবং অধ্যায়টি ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করে। ১২. পাঠ্যপুস্তকে শব্দকোষ ও নির্দেশিকা থাকে যা পাঠ্যবস্তুর বিশেষ শব্দ ও ধারণাগুলোর ব্যাখ্যা দেয়। ১৩. পাঠ্যপুস্তকগুলো নিয়মিতভাবে সংশোধিত হয় এবং নতুন তথ্য ও আবিষ্কার যুক্ত করা হয় যাতে শিক্ষার্থীরা সর্বশেষ তথ্য পায়। ১৪. পাঠ্যপুস্তকে রেফারেন্স এবং অতিরিক্ত পাঠের জন্য বই ও অন্যান্য সম্পদের তালিকা দেওয়া হয় যা শিক্ষার্থীদের আরো বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে।এই বৈশিষ্ট্যগুলো পাঠ্যপুস্তককে একটি কার্যকর শেখার মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন করতে সাহায্য করে।
শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তক অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এ পুস্তক ব্যতীত শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান আহরণ সম্ভব নয়। অতএব, বাজারে নিকৃষ্ট মানের সহায়ক পুস্তকের কাছে দিনদিন পাঠ্যপুস্তকের ব্যবহার কমে যাচ্ছে, এটা রোধ করা জরুরি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সরকার প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে সরবরাহ করছে, এটা সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ। অতএব, পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব যাতে না কমে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের প্রত্যেকের ভূমিকা থাকা জরুরি লেখক- ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দিকদর্শন প্রকাশনী লিঃ ও
গ্রন্থকুটির প্রকাশনা গ্রুপ, ই-মেইল-dikdarshon@gmail.com, dikdarshon@yahoo.com

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চালের বাজারে দরপতন, বেড়েছে ছোলা ও ডালের দাম

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাইকারিতে চালের দর নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তবে খুচরায় এখনও তেমন প্রভাব না পড়লেও আগামী সপ্তাহ থেকে কমতে শুরু করবে বলে আশা বিক্রেতাদের। অন্যদিকে বেড়েছে ছোলা ও ডালের দাম। ডিমের দাম কমেছে, বেড়েছে খাসির মাংসের দাম। তবে শবে বরাতকে সামনে রেখে বিভিন্ন সময় গরুর মাংসের দর বাড়তি থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার গরুর মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, রমজানে চাহিদা কমে যাওয়া, বিপুল পরিমাণ আমদানি ও সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির খবরে দরপতন শুরু হয়েছে।
শুক্রবার চট্টগ্রামের পাহাড়তলী চালের আড়ত, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে নিত্যপণ্যের দামের এ চিত্র পাওয়া গেছে।এ ছাড়া অন্যান্য মুদিপণ্য, শাকসবজির দাম আগের মতোই আছে।

শাকসবজি বরাবরের মতো ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। মাছের কিছুটা চড়া দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
পাহাড়তলীর আড়তগুলো ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা, বেতি আতপ, নাজিরশাইল, পাইজাম চালে সয়লাব। প্রতিকেজি বেতি আতপ তিন টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকায়। ৩৮ টাকার সিদ্ধ নাজিরশাইল ৩৫ থেকে ৩৬ আর ৩০ টাকার পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকায়।

তবে দেশি নাজিরশাইল, মিনিকেট ও কাটারি আতপের দাম এখনও কমেনি। প্রতি কেজি কাটারি আতপ ৮৫ টাকা, নাজিরশাইল হাফসিদ্ধ মানভেদে ৮৫ ও ৮৮ টাকা, মিনিকেট আতপ ও সিদ্ধ ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব চালের দাম তেমন কমেনি। তবে না কমলেও আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।

পাহাড়তলী বাজারের আড়তদার এস এম নাজিম উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন পর রমজান মাস শুরু হবে। তখন চালের চাহিদা কমে যাবে। ঈদের পরেই শুরু হবে বোরো মৌসুম। আবার ভারত, মায়ানমার থেকে যে পরিমাণ চাল এসেছে, আড়তে এখন প্রচুর মজুত আছে। টিসিবি বলছে, তারা ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি করবে। সব মিলিয়ে চালের দাম নিম্নমুখী হয়েছে। এটা আস্তে আস্তে আরও কমবে।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা মুদি দোকান হারুন এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুচরায় কেজিতে ১-২ টাকা কমেছে। দুইমাস আগে পাইকারিতে বস্তায় যেখাতে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছিল, সেখানে কমেছে মাত্র ৪০-৫০ টাকা। এটা আরও কমলে খুচরায় প্রভাব পড়বে।
তবে নগরীর আসকার দিঘীর পাড় এলাকার এক দোকানি বলেন, খুচরায় চাল আমরা এখনও কম দামে বিক্রি করতে পারছি না। ২৫ কেজি কিংবা ৫০ কেজির বস্তায় ৪০-৫০ টাকা কমেছে। কিন্তু গাড়ি ভাড়ায় পোষাচ্ছে না। আরও কমলে তখন গড়পরতা হিসেবে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারব।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছোলা ১২০ থেকে ১৩০ কিংবা ১৩৫ টাকার মধ্যে ছিল বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। ডালের মধ্যে ছোট মসুরের ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানালেন, মসুর ডালের দাম কেজিতে অন্তঃত ৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া বড় মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে ছোট মুগ ডাল কেজিতে বেড়েছে অন্তঃত ২৫ টাকা।

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির ঘাটতি আছে। খোলা চিনির মধ্যে সাদা ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা ও লাল চিনি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তবে খুচরা পর্যায়ে দামে তেমন একটা হেরফের হয়নি। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, পাম সুপার ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
রমজানের আরেক অত্যাবশ্যকীয় পণ্য খেজুর।

রিয়াজউদ্দিন বাজারে প্যাকেটজাত খেজুরের মধ্যে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, দাম কমেছে ৫ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের দামও প্রতি ডজনে অন্তঃত ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা দরে। হাঁসের ডিম আগের দরে প্রতিডজন ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি গত সপ্তাহে ১৮০ থেকে ১৯৫ টাকা, সোনালী মুরগি ৩৩০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৪০ থেকে ৫৮০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মুরগির দর গত সপ্তাহের মতোই আছে।

শবে বরাতের আগেরদিন গরুর মাংস হাড়ছাড়া প্রতিকেজি ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ থেকে ৭৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার দাম বাড়েনি। তবে খাসির মাংসের দাম প্রতিকেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।এছাড়া বাজারে আকারভেদে প্রতিকেজি রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতলা মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ও শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, বেলে ও আইড় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। ট্যাংরা প্রতিকেজি ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে।

শীতকালীন শাকসবজির সরবরাহে ঘাটতি না থাকায় দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যেই আছে। বাজারে মুন্সিগঞ্জের নতুন আলু মানভেদে প্রতিকেজি ২০ থেকে ২৫ টাকা, লাল আলু, সাদা আলু, বগুড়ার আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন, মানভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা, মূলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, শসা, টমেটোর দাম ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শসা ৩০, মিষ্টিকুমড়া ৩০, করলা ৪০, মটরশুঁটি ৭০, গাজর ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ ও লাউ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাকের মধ্যে লাল শাক, লাউ শাক, মুলা শাক, পালং শাক, কলমি শাক, ডাঁটা শাক ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি দেশি রসুন ২৩৫, চায়না রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ভারতীয় আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, চায়না আদা ২২৫ টাকা, দেশি আদা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুরা কেক কেটে ভালোবাসা দিবসকে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন

ভালোবাসার রঙ ছুঁয়ে দেই বঞ্চিত হৃদয়ে হাসি ছড়ায় এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বঞ্চিতদের নিয়ে কেক কাটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।


শুক্রবার বিকেলে সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শিশুদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দিতে ঠাকুরগাঁও উদ্যোগ সংগঠন এর আয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা পথ শিশুদের নিয়ে এই কেক কাটার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

ভালোবাসা দিবসে উদ্যোগ সংগঠনের পক্ষ থেকে ১৪ টি বিভিন্ন রকমের কেক নিয়ে বড় মাঠে আসেন তারা এরপর সেখানে শিশু সহ বঞ্চিত মানুষদের সাথে ভালোবাসা ভাগাভাগি করে নেন তারা।


সেখানে শিশু ফরহাদ ও লামিয়া জানান তারা ছোট থেকে বড় হয়েছে কিন্তু কখনো কেক কেটে আনন্দ করতে পারেনি। প্রথমবারের মতো তারা অনেক শিশুদের নিয়ে একসাথে কেক কেটেছে যেটা তারা মনে রাখবে। সেই সাথে যারা এই আয়োজন করেছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ