আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

ওয়ার সিমেনট্রি ইতিহাসের অপর নাম

সোমা মুৎসুদ্দী

একটা সময় ছিলো ব্রিটিশ শাসন আমাদের পূর্বপুরুষেরাও ছিলো ব্রিটিশের অধীনে,সেই সাথে আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস আমাদেরকে সমৃদ্ধ করেছে, আমাদের আছে নিজস্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রথম পর্বের অনুভূতিতে আজ বলবো চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রির কথা।ওয়ার সিমেনট্রি, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি।

১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে বার্মায় সংগঠিত যুদ্ধে যে ৪৫,০০০কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষা করার জন্য, মায়ানমার তৎকালীন (বার্মা),আসাম এবং বাংলাদেশের নয়টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে।একটি চট্টগ্রামে এবং অপরটি কুমিল্লায়। প্রতিবছর এবং প্রতিদিন, প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধি ক্ষেত্রে আসেন।চট্টগ্রাম রণ সমাধি মূলত,২য় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫)নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান।এটি

১৯৪৩থেকে ১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে।এটি চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগ এলাকার ১৯ নং বাদশাহ মিয়া সড়কে অবস্থিত।এয়ারপোর্ট থেকে দূরত্ব ২২কিলোমিটার। এবং পোর্ট থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ওয়ার সিমেনট্রি চট্টগ্রাম আর্ট কলেজের এবং ফিনলে গেস্ট হাউজের খুব কাছেই অবস্থিত।এই সমাধিক্ষেত্রটি (C.W.G.C)কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্রটি পরিচালনা করেন।প্রতিবছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুর মাধ্যমে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা হয়ে থাকে।চট্টগ্রামে তৎকালীন সময়ে ছিলো অনেক বড় হাসপাতাল। এছাড়া চট্টগ্রামে ছিলো যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র গভীর সমুদ্র বন্দর। যেখান থেকে মিত্র বাহিনী আরাকান এলাকায় তাদের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতো। ব্রিটিশ

সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মিত এই সমাধি ক্ষেত্রে প্রথমদিকে মোট ৪০০টি কবর ছিলো। বর্তমানে ওয়ার সিমেনট্রিতে ৭৫৫টি কবর আছে।এর মধ্যে অধিকাংশ হলো সেই সময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকেরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ এনে এখানে সমাহিত করা হয়।বিভিন্ন বাহিনী অনুয়ায়ী এখানে মারা যাওয়া শহীদদের মধ্যে ১৪ জন নাবিক,৫৪৩জন সৈনিক ১৯৪জন বৈমানিক ও ৪ জন বেসামরিক মানুষ ছিলেন।সব মিলিয়ে ৭৩৮জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিলো।ওয়ার সিমেনট্রির প্রবেশমুখে একটি মেমোরিয়াল আছে,যেখানে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমুদ্রে নিহত রয়াল ইন্ডিয়ান নেভী ও মার্চেন্ট নেভী এর ৬,৪৬৯নাবিকের নাম ও পরিচয় সংরক্ষণ আছে।সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর যার ভেতরে দেয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রটির ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজী ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একটি দেয়াল ফলক

লাগানো রয়েছে।ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্থ পথ,যার দুইপাশে সারি, সারি কবর ফলক।সৈন্যদের যার যার ধর্ম অনুযায়ী, তাদের কবর ফলকে,নাম মৃত্যু তারিখ পদবীর পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিক লক্ষ্য করা যায়। খৃষ্টানদের কবরফলকে ক্রুশ,মুসলমানদের কবর ফলকে আরবি লেখা উল্লেখযোগ্য।প্রশস্থ পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি তার উপর শোভা পাচ্ছে খৃষ্টান ধর্মের প্রবিত্র প্রতিক ক্রুশ প্রতি পর পর দুটি কবর ফলকের মাঝখানে সারি, সারি ফুলগাছ শোভা পাচ্ছে।এছাড়াও পুরো সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে প্রচুর গাছ, যা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রি সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২ টা ও দুপুর দুইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।আগে মূল সমাধিক্ষেত্রে ঢুকতে পারলেও কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তার জন্যই সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কেউ ঢুকতে চাইলে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা পাস নিতে হবে।ইতিহাস ঐতিহ্যের নগরী চট্টগ্রাম, আমাদের আছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, শহরের মাঝেই একটুকরো সমাধিক্ষেত্র দেখার জন্য প্রতিদিন শত, শত লোক ভিড় করেন ও সৈনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে অবসরে আপনিও আসতে পারেন চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রি, সেই সাথে সবুজের নান্দনিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চুয়ান্নটি বছর

স্বাধীনতার চুয়ান্নটি বছর চলেছে একই নীতিতে!
সত্যিই এবার পরিবর্তন প্রয়োজন।
স্বপ্ন আর আশা,
এই নিয়ে দেশের মানুষের বেঁচে থাকা।

কেহ দেশের শান্তি ফেরাতে দিয়েছেন প্রাণ,
কেহ আবার সব ভুলে গিয়ে নিজের সুবিধা আর আসন পাওয়া নিয়ে ব্যস্ততা,
আর এক শ্রেণীর মানুষের নেই ঘুম!

সুন্দর স্বপ্নময় দেশ গড়তে,
সর্ব প্রথম আইন,
বিচার ব্যবস্থা আর প্রশাসনের সঠিক উন্নয়ন প্রয়োজন। এই তিনটি যেন কারো ব্যক্তিগত কারো সম্পত্তি না হয়।

বিগত চুয়ান্ন বছর পর আবারও দেশ ও দেশের মানুষের নতুন অধ্যায়!
যেন বিগত দিন, মাস, বছর পর বছর আর নয়,
সর্বত্র হোক বিরাজমান সত্য ও সততার আগমন।

রঙের দেখা

একেক পাখির একেক রং,
ফুলের সুগন্ধে মন ছুঁয়ে রয়!
নীল আকাশে সাদা মেঘের ক্ষণে ক্ষণে মেলা হয়।

হরেক রঙের মানুষের দেখা,
ভিন্ন ভিন্ন দেশে। ভাষাও আবার ভিন্ন হয়,
আবহাওয়াও ভিন্ন রুপে।

একই দেশের মানুষ মোরা ভিন্ন ভিন্ন ভবের।
আচার- আচরণও হয় ভিন্ন!

চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলাতে জীবনে সকলেই চিন্তিত! হয়তো প্রকাশ ভঙ্গি ভিন্ন।

সকাল সন্ধ্যা! কতো স্মৃতি আর অনুভূতি আসে বারে বারে এ মনে!
মনের অজান্তেই কথা হয়,
চুপিচুপি একাকী নিরজনে!

ফুলদানিতে কতো ফুল রাখি,
আস্তে আস্তে শুকিয়ে,
নয় তো ঝড়ে যায়!
চেনা চেনা কতো মানুষও আবার,
দুঃসময়ে দূরে সরে চলে যায়!

দুনিয়ায় আসা হয় একা,
একা চলে যেতে হয়!
এর বিকল্পও নেই,
তবুও মানুষের সাথে মানুষের অবিচার অবক্ষয়!

দুনিয়ায় কতো কিছু,
কতো রঙে ভরা,
শুধু রক্তের একটিই রঙ!
মানুষ, দেশ, জাতি যেমনই হোক, সকলের রক্তের রঙ লাল।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ