আজঃ মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ওয়ার সিমেনট্রি ইতিহাসের অপর নাম

সোমা মুৎসুদ্দী

একটা সময় ছিলো ব্রিটিশ শাসন আমাদের পূর্বপুরুষেরাও ছিলো ব্রিটিশের অধীনে,সেই সাথে আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস আমাদেরকে সমৃদ্ধ করেছে, আমাদের আছে নিজস্ব, ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রথম পর্বের অনুভূতিতে আজ বলবো চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রির কথা।ওয়ার সিমেনট্রি, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি।

১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে বার্মায় সংগঠিত যুদ্ধে যে ৪৫,০০০কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হন তাদের স্মৃতি রক্ষা করার জন্য, মায়ানমার তৎকালীন (বার্মা),আসাম এবং বাংলাদেশের নয়টি রণ সমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে।বাংলাদেশে দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে।একটি চট্টগ্রামে এবং অপরটি কুমিল্লায়। প্রতিবছর এবং প্রতিদিন, প্রচুর দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের প্রতি সম্মান জানাতে এসকল রণ সমাধি ক্ষেত্রে আসেন।চট্টগ্রাম রণ সমাধি মূলত,২য় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫)নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান।এটি

১৯৪৩থেকে ১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে।এটি চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগ এলাকার ১৯ নং বাদশাহ মিয়া সড়কে অবস্থিত।এয়ারপোর্ট থেকে দূরত্ব ২২কিলোমিটার। এবং পোর্ট থেকে দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ওয়ার সিমেনট্রি চট্টগ্রাম আর্ট কলেজের এবং ফিনলে গেস্ট হাউজের খুব কাছেই অবস্থিত।এই সমাধিক্ষেত্রটি (C.W.G.C)কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ও তারাই এই সমাধিক্ষেত্রটি পরিচালনা করেন।প্রতিবছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুর মাধ্যমে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা হয়ে থাকে।চট্টগ্রামে তৎকালীন সময়ে ছিলো অনেক বড় হাসপাতাল। এছাড়া চট্টগ্রামে ছিলো যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র গভীর সমুদ্র বন্দর। যেখান থেকে মিত্র বাহিনী আরাকান এলাকায় তাদের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতো। ব্রিটিশ

সেনাবাহিনী দিয়ে নির্মিত এই সমাধি ক্ষেত্রে প্রথমদিকে মোট ৪০০টি কবর ছিলো। বর্তমানে ওয়ার সিমেনট্রিতে ৭৫৫টি কবর আছে।এর মধ্যে অধিকাংশ হলো সেই সময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকেরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ এনে এখানে সমাহিত করা হয়।বিভিন্ন বাহিনী অনুয়ায়ী এখানে মারা যাওয়া শহীদদের মধ্যে ১৪ জন নাবিক,৫৪৩জন সৈনিক ১৯৪জন বৈমানিক ও ৪ জন বেসামরিক মানুষ ছিলেন।সব মিলিয়ে ৭৩৮জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিলো।ওয়ার সিমেনট্রির প্রবেশমুখে একটি মেমোরিয়াল আছে,যেখানে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমুদ্রে নিহত রয়াল ইন্ডিয়ান নেভী ও মার্চেন্ট নেভী এর ৬,৪৬৯নাবিকের নাম ও পরিচয় সংরক্ষণ আছে।সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর যার ভেতরে দেয়ালে এই সমাধিক্ষেত্রটির ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজী ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একটি দেয়াল ফলক

লাগানো রয়েছে।ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্থ পথ,যার দুইপাশে সারি, সারি কবর ফলক।সৈন্যদের যার যার ধর্ম অনুযায়ী, তাদের কবর ফলকে,নাম মৃত্যু তারিখ পদবীর পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিক লক্ষ্য করা যায়। খৃষ্টানদের কবরফলকে ক্রুশ,মুসলমানদের কবর ফলকে আরবি লেখা উল্লেখযোগ্য।প্রশস্থ পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি তার উপর শোভা পাচ্ছে খৃষ্টান ধর্মের প্রবিত্র প্রতিক ক্রুশ প্রতি পর পর দুটি কবর ফলকের মাঝখানে সারি, সারি ফুলগাছ শোভা পাচ্ছে।এছাড়াও পুরো সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে প্রচুর গাছ, যা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রি সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২ টা ও দুপুর দুইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।আগে মূল সমাধিক্ষেত্রে ঢুকতে পারলেও কয়েক বছর ধরে নিরাপত্তার জন্যই সমাধিক্ষেত্রের ভেতরে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

কেউ ঢুকতে চাইলে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা পাস নিতে হবে।ইতিহাস ঐতিহ্যের নগরী চট্টগ্রাম, আমাদের আছে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি, শহরের মাঝেই একটুকরো সমাধিক্ষেত্র দেখার জন্য প্রতিদিন শত, শত লোক ভিড় করেন ও সৈনদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে অবসরে আপনিও আসতে পারেন চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেনট্রি, সেই সাথে সবুজের নান্দনিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন নন্দিত নির্মাতা মীর ফখরুদ্দিন ছোটন ।

টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- টেলিপ্যাব’র আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সংগঠনটি বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট নির্মাতা শিল্পোদ্যোক্তা ও পর্যটক মীর ফখরুদ্দিন ছোটন । দেশের শিল্প সংস্কৃতির নিবেদিতপ্রাণ ব্যতিক্রমী এই নির্মাতা বিগত দিনের সাংগঠনিক অবদানকে যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করবার জন্য টেলিপ্যাবের সকল ভোটারের দোয়া ও অকুণ্ঠ সমর্থন কামনা করেছেন । সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে নির্বাচিত আর্কাইভ সম্পাদক হিসেবেও টেলিপ্যাবের উন্নয়নে সুনামের সাথে কাজ করেছেন প্রযোজক মীর ফখরুদ্দিন ছোটন ।

পলিমাটির জনপদ দ্বীপজেলা ভোলার গুণীসন্তান মীর ফখরুদ্দিন ছোটন ভোলা জেলা জাসাসের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন ।নতুনত্বের আলোকসন্ধানী সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উজ্জীবিত পরিশীলিত নির্মাতা ফখরুদ্দিন ছোটন জানান-‘আমি বরাবরই দেশের বাইরে নাটকের শুটিং করতে পছন্দ করি। এ জন্য অনেকেই আমাকে বিদেশি প্রযোজক বলে থাকেন। লোকেশনের ভিন্নতা আনতেই মূলত এই কাজটি আমি করে থাকি। কারণ এই উত্তরা আর পূবাইলের কিছু লোকেশন দেখতে দেখতে দর্শকরা বিরক্ত হন। সেই জায়গা থেকে আমার এই ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা শুরু থেকেই চলমান রয়েছে। তাছাড়া আমি চাই আমার নাটকে অনেক জনপ্রিয় স্টার থাকবে, গ্লামার থাকবে। যদিও আমি নতুনদের সুযোগ দিয়ে থাকি।’

দেশের বাইরে নিজের প্রযোজিত নাটকের শুটিং করার কারণ প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেন প্রযোজক ও টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মীর ফখরুদ্দীন ছোটন। নিজের প্রযোজিত নাটক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রতিটি নাটকেই কোনো না কোনো বার্তা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি চেষ্টা করি নতুন নাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রীর সুযোগ দেওয়ার। কারণ নতুনদের সুযোগ না দিলে দর্শকরা একই মুখ দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে পড়েন। তবে অনেক চ্যানেল ঈদের সময়গুলোতে বলে দেয় গুটিকতক শিল্পীকে নিয়ে কাজ করতে। কিন্তু আমি এই চর্চার পক্ষে নই| নতুন, পুরনো সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। চরিত্রের প্রয়োজনে যাকে দরকার তাকে নিতে হবে। এতে কাজেও ভিন্নতা আসবে, নতুন শিল্পী তৈরি হবে।’

নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ঈদের সময়গুলোতে প্রযোজক-নির্মাতা-শিল্পীদের কাজের পরিধি বাড়ে কয়েকগুণ। সেই জায়গা থেকে নিজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘আমার প্রযোজিত গুটিবাজি ধারাবাহিকটি প্রচারিত হচ্ছে। পাশাপাশি উগান্ড ফোর, টাকা কোনো সমস্যা না ধারাবাহিক দুটির কাজ চলছে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে সম্প্রতি একটি একক নাটকের কাজ দেশের বাইরে শেষ করলাম। এতে আমি একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছি। এর বাইরে আরও বেশ কয়েকটি নাটকের শুটিং সামনে শুরু করব।’

নিয়মিত প্রযোজনার বাইরে টেলিপ্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ববান নেতা মীর ফখরুদ্দিন ছোটন, সংগঠনটির কার্যক্রম নিয়ে আরও বলেন, ‘টেলিপ্যাবের সদস্য হওয়া ছাড়া যেন কেউ নাটক নির্মাণ করতে না পারেন এবং সংগঠনের সব প্রযোজক যাতে কাজ পান সেই চেষ্টা করব । টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে আমাদের বকেয়া পাওনা নিয়েও কাজ করছি। এছাড়াও সংগঠনের স্বার্থে সামনে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছি । ইনশাআল্লাহ সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হতে পারলে পরিকল্পনাগুলোকে ঢেলে সাজাবো ।

নেত্রকোনায় বন্ধু ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন।

নেত্রকোণায় বন্ধু ফাউন্ডেশনের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রা
শামীম তালুকদার, নেত্রকোণা
এসো হে বৈশাখ, এসো এসো—
নেত্রকোণায় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে বন্ধু ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।এতে বন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি খায়রুল রশিদ খান পাঠানের নেতৃত্বে অধিকাংশ বন্ধুদের উপস্হিতিতে ১লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।আনন্দ শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য যে, সমাজসেবা অধিদপ্তর কতৃক নিবন্ধনকৃত(রেজি: নং-নেত্র :০৭৪৮) বন্ধু ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও সেবামূলক সমাজকর্ম করে যাচ্ছে।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ