আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা।

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার কাজ দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তবতঅী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি-৫) পরিদর্শনের পর বন্দর ও নৌপরিবহন খাতের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন, বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তনের শ্লথগতি দুঃখজনক উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দুনিয়ার সব জিনিস এত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে, আমাদের এখানে এটা (চট্টগ্রাম বন্দর) পাল্টায় না কেন? এটা আজকের প্রশ্ন না। একজন চট্টগ্রামবাসী হিসেবে এ পথে আসা-যাবার ক্ষেত্রে দেখা হয়, বিশেষ করে যখন গাড়ি চলে না, আটকে যায়, কী হল- ট্রাকে ভর্তি রাস্তা, মাল খালাস করতে পারছে না। এদিকে প্লেন মিস করে ফেলব কি না, এই দুর্ভাবনা। কাজেই এটা সম্পর্কে চিন্তা না করে উপায় নেই। কথাবার্তা বলেছি, মাঝে মাঝে লেখালেখি করেছি। তো এবার যখন সুযোগ পেয়েছি, প্রথমদিন থেকেই চেষ্টা করছি এটার দিকে নজর দেওয়ার, কীভাবে এটাকে পরিবর্তন করা যায়।
লুৎফে সিদ্দিকীকে (বিশেষ সহকারী) দায়িত্ব দিলাম, এটা তোমার দায়িত্ব, যেমনে পার মেরে-ধরে এটাকে সোজা করতে হবে, এটাকে সত্যিকার বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে। আমরা খুবই ইমপ্রেসড, যেগুলো ছবি এখানে দেখাল, ভালো লাগে, গর্ব লাগে। কিন্তু দুনিয়া তো

এখানে আটকে নেই, দুনিয়া এর থেকে বহুদূর চলে গেছে। স্ক্রিনে বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর এবং বর্তমানে বিশ্বের বন্দর পাশাপাশি দেখালে তাহলে বোঝা যেত আমরা কোথায় পড়ে আছি। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
তিনি বলেন, এই পিছিয়ে থাকা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো দুঃখও দেখি না। ছোটখাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করে, এখানে গোলমাল, ওখানে গোলমাল, কিন্তু সার্বিকভাবে যে বিরাট পরিবর্তন দরকার, এটার গরজ কারও খুব আছে বলে মনে হয় না। তো, সেজন্যই ঠেলাঠেলি করছিলাম, বারবার লুৎফেকে পাঠাচ্ছিলাম। বন্দর চেয়ারম্যানের কথা শুনে একটু আশ্বস্ত হলাম যে, একটা লোক অন্তঃত পেছনে লেগে আছে। আমাদের দরকার তাকে একটু সাহায্য করা।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় দ্রুত বিদেশি সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সাখাওয়াতকে (নৌপরিবহন উপদেষ্টা) বললাম, আর কিছু শুনতে চাই না, এটার পেছনে থাক, অমুক তারিখের মধ্যে এগুলো সব দিয়ে দিতে হবে, বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে তাদের রাজি করাতে হবে। মানুষকে গররাজি করিয়ে করার দরকার নেই, রাজি করিয়েই করতে হবে। এটা এমন একটা বিষয়, পুরো বিষয়টা শুনলে গররাজি হওয়ার

কোনো কারণ নেই। সবাই চায় তার ভালো হোক। না বোঝার কারণে বলে যে, এটা ভালো হবে না, এটা আমাদের ক্ষতি হবে, ওটা-তো আমাদের ছিল, ওটা কেন দিয়ে দিচ্ছেন ? কিন্তু যখন দেখবে এটা সবার জন্য ভালো হবে, তাহলে আপত্তি থাকবে না।
তো, আমি এখানে আসার আগে আবার পাঠালাম আশিককে (বিডা চেয়ারম্যান), যাও, ব্যাখা কর সবার কাছে আমরা কী করতে চাচ্ছি, কেন চাচ্ছি। সে-ও চেষ্টা করল। আমার এ চিন্তাটার কারণটা হল, বাংলাদেশের অর্থনীতি যদি পাল্টাতে হয় এবং আমাদের পাল্টাতে হবে, তাহলে চট্টগ্রাম বন্দর হলো ভরসা। এটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন কোনো পাতায়, নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশের সুযোগ নেই। এর পথ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ খোলা। এর পথ না খুললে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যতই লাফালাফি, যতই চাপাচাপি করি, কোনো লাভ হবে না।

চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃদপিণ্ড উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কিন্তু এ হৃদপিণ্ডকে বিশ্বসাইজের হৃদপিণ্ড হতে হবে। এ হৃদপিণ্ড শুধু বাংলাদেশের জন্য না, আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গেও সংযুক্ত, যে কারণে নেপালের কথা বললাম, ভূটানের কথা বললাম, সেভেন সিস্টার্সের কথা বললাম, সবাই হৃদপিণ্ড একটাই। নেপালের তো হৃদপিণ্ডই নেই। তাই নেপাল, ভূটান, সেভেন সিস্টার্স যদি এটার সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে তারাও লাভবান হবে, আমরাও লাভবান হবো। যারা এটাকে বাদ দেবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা তাদেরও কাম্য নয়, আমাদেরও কাম্য নয়। আমরা চাই, সবাই মিলে আমরা যেন এ বন্দর থেকে অর্থনীতির শক্তিটা পাই।

বন্দরকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,মাঝে মাঝে প্রশ্ন শুনি যে, বিদেশিকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনারা ইন্ডিয়াতে স্বাস্থ্যের জন্য যান না ? দলে দলে যান, যখন বন্ধ করে দিয়েছে তখন বলছেন কেন যেতে দিচ্ছে না ? কাগজ উলটাইলেই দেখা যায়, নেতারা চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে, ব্যাংককে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। কিন্তু বন্দরের কথা যখন আসে, না না এখানে কেউ আসতে পারবে না। ভাই, আমাদের চিকিৎসা দরকার তো। এ হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা দরকার। এটার পেছনে আমাদের বিশ্বের সেরা চিকিৎসক দিতে হবে, যেন এটাকে বিশ্বসাইজের হৃদপিণ্ড বানিয়ে দেওয়া হয়, কোনো সমস্যা যাতে না হয়। এ হৃদপিণ্ড ক্রমাগত মজবুত হবে, ক্রমাগত শক্তিশালী হবে, ক্রমাগত বৃহত্তর হবে।

পৃথিবীতে অনেকে আমাদের পেছনে থেকে অনেক খারাপ অবস্থা থেকে এখন আমাদের ডিঙ্গিয়ে শত, শত মাইল চলে গেছে। তাহলে আমরা কেন হতভাগা জাতি হলাম? এটার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের অনেক বড় ডাক্তার দিয়ে কাজ করতে হবে।
বন্দর পরিচালনায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করলে দেশের লাভ হবে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, আমাদের লাভ, কারণ এর পেছনে আমাদের কোনো টাকাপয়সা খরচ লাগবে না। বিল্ড, অপারেট এন্ড ট্রান্সফার। তোমরা বানাও, তোমরা কাজ কর, রোজগার কর, এই মেয়াদের মধ্যে আমাদের দিয়ে দিতে হবে।

আমরা এক পয়সাও খরচ করবো না। তখন আমাদের পয়সা বেঁচে গেল, কাজটা হয়ে গেল। তারা যখন কাজে নামবে, তারা দুনিয়াতে শত, শত পোর্ট পরিচালনা করে, ওরা হল দুনিয়ার সেরা, যাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি, তারা হল দুনিয়ার সেরা, পৃথিবীর যে কোনো বন্দরে যান, তাদের মার্কা দেখবেন।

সুতরাং তারা যখন দায়িত্ব নেবে, তারা আমাদের মতো করে পরিচালনা করবে না। তারা বিশ্বের বন্দর যেভাবে চালায়, কারণ এটা তাদের বন্দর, কারণ আমরা যখন লীজ দেব, তখন সেটা তাদের বন্দর, এটা থেকে তাদের টাকাটা ওঠাতে হবে, তারা তাদের সেই প্রযুক্তি দিয়ে বানাবে। তারা আগে যত বন্দর বানিয়েছে, টার্মিনাল বানিয়েছে, এরপর তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি, সর্বশেষ অভিজ্ঞতা এখানে আনবে। তাদের লক্ষ্য থাকবে, এই বন্দর আমরা এমনভাবে করবো, যাতে টাকাটা ওঠাতে পারি, আরও বেশি টাকা ওঠাতে পারি।

সভায় নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে বেশ কয়েকটি টার্মিনাল নির্মাণের ফলে কনটেইনার জট কমবে। আমি আশা করি ছয় মাসের মধ্যে আপনারা পরিবর্তনটি লক্ষ্য করবেন।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানও সভায় বক্তব্য দেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট মিডিয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ্বাস যোগ্যতার সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে : মাহবুব মোর্শেদ

বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট মিডিয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ^াস যোগ্যতার সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। এ কারণেই বিবিসির মতো মৌলিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও ‘মোজো’ (মোবাইল জার্নালিজম) চালু করেছে। তারা বুঝেছে, সুপরিশীলিত সংবাদ থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাঁচা কিন্তু বাস্তব ভিডিও বা পোস্ট মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল ও অন্যান্য নন কনভেশনাল মিডিয়ার কার্যকর ভুমিকার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর আধুনিক তথ্য প্রবাহকে গ্রহন করার জন্য আমরা এখনো মানসিকভাবে তৈরী নই। এক ধরণের পুরোনো সেকেলে গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছি। আমরা পত্রিকা পড়ব। কিন্তু নতুন প্রজন্মের সংবাদমাধ্যমকে গ্রহণ করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে “মুক্ত গণমাধ্যম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্র্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির, মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক।
বাসস’র প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই আমরা সামনে এগোতে পারব। যেসব দিক নেতিবাচক, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। দমন, পীড়ন, নিয়ন্ত্রণ, বন্ধ করে দেওয়া, এই মানসিকতা ত্যাগ না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা যখন একটি প্রজন্মের ব্যবহৃত ডিভাইসকে শত্রু হিসেবে দেখি, তখন আসলে সেই প্রজন্মকেই বলছি; এই জায়গা দিয়ে দেশের মুক্তি আসবে না। কিন্তু ২০২৪-এ যে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, সেখানে আমাদের ওপেন, গণতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত যে সংবাদপত্র-টেলিভিশনগুলো আছে, যেগুলো মূলত মালিক, সরকার ও আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এবং যাদের সাথে নৈকট্য বেশি আমরা সেসব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই।

বাসস’র প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আমরা অনেকেই অংশ নিয়েছিলাম। যদি আমরা স্মরণ করি, তখন প্রচলিত গণমাধ্যমের ভূমিকা কী ছিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিবন্ধিত পত্রপত্রিকা বা যেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের পরিচিতরা কাজ করেন, সেসব মাধ্যমে আমরা কি সেই অভ্যুত্থানের খবর যথেষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি ? একদমই কম পেয়েছি। প্রায় সবগুলো টেলিভিশনই ‘বিটিভি’ হয়ে গিয়েছিল। তারা যেন সরকারি প্রচারের মুখপাত্রে রূপ নিয়েছিল। প্রচলিত, নিবন্ধিত, কনভেনশনাল মিডিয়ার বৃহৎ অংশই হয় এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে, নয়তো একে পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট করেছে। তাহলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের খবরগুলো কে ছড়িয়েছে ?

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির বলেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও “মুক্ত গণমাধ্যম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ” নিয়ে আমাদে;র আলোচনা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা কী, মুক্ত কী, গণমাধ্যম কী, সংবাদ মাধ্যম কী, এসবের একটা বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেকের জায়গায় সৎ থাকি, তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

মুখ্য আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, অবাধ তথ্যের কথা বলে অন্যের চরিত্র হরণ, অন্যের নামে অপবাদ দেওয়া, অপতথ্য-মিথ্যাতথ্য প্রচারের মত অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা রাখতে হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিশ^াসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রেল লাইনের মত সমান্তরালভাবে চলতে হবে।

আলোচনা সভার ধারণাপত্র উপস্থাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ চায় কারণ গণতন্ত্রের বেঁচে বা টিকে থাকার শর্তই হচ্ছে ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’। এরা পরস্পর ‘পারস্পরিকতাবাদ’ বা ‘মিউচুয়ালিজম’-এ আবদ্ধ। গণতন্ত্র ঠিকাতে হলে ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ চাই আর ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ ঠিকাতে চাইলে গণতন্ত্র চাই।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা আলম, এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ইঞ্জি. সেলিম মো. জানে আলম, এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, দৈনিক ইনকিলাবের ডেপুটি ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম সেলিম, দৈনিক আমার দেশের ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে : জামায়াত আমির।

ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরদিন থেকে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তারের জন্য জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছে। ক্ষমতায় না গিয়েও অনেকে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।

শুক্রবার দুপুর ২টায় ৮ দলের উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, আমরা ৮ দলের বিজয় চাই না, ১৮ কোটি মানুষের বিজয় চাই। সেই আকাঙ্খার বিজয় হবে কুরআনের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম থেকে ইসলামের বিজয়ের বাঁশি বাজানো হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, গাড়ি দিয়ে পালানোর সাহস তারা হারিয়ে ফেলেছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিকে এই অপকর্মে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। দেশের সবকিছু তারা ধ্বংস করেছিল। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। ফ্যাসিবাদকে নতুন করে রুখে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।

জামায়াতের আমির বলেন, তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছিল। রাস্তাঘাট তৈরি করেছিল রডের বদলে বাঁশ দিয়ে। বাংলাদেশের টাকা লুট করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। শাপলা চত্বরে অসংখ্য মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর কুখ্যাত প্রধানমন্ত্রী বলেছিল রঙ দিয়ে শুয়ে ছিল। তারা রক্তাক্ত হাতে ক্ষমতায় এসেছিল রক্তাক্ত হাতেই বিদায় নিয়েছে।
আন্দোলনরত ৮ দলের ৫ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত থাকবে ঘোষণা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঐক্য আমাদেরকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে আবারও ৫ আগস্ট সংঘটিত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

৮ দলের প্রধানদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশের ইসলামি শক্তিকে কেউ নিস্তব্ধ করতে পারবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামপন্থীদের। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা কবে না।তিনি বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না।

এটিএম আজহার বলেন, বাংলাদশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।খেলাফতে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, আগামীতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিজয়ের মাধ্যমে কোরআনের শাসন শুরু হবে। সোনার বাংলাদেশ দেখা শেষ, ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখা শেষ- এবার আল কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে চাই, ইসলামের বাংলাদেশ দেখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আমাদের অধিকার চাই, মালিকানা কায়েম করতে চাই। গরিব মেহনতী মানুষকে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। ইসলাম যে বৈষম্যহীনের কথা বলা হয়েছে। পুঁজিবাদর অর্থ ব্যবস্থা করব দিয়ে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশে কোরআনের অর্থ ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের অধিকার ও মালিকানা কায়েম করতে। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার কবর তৈরি করে সেই ধ্বংস স্তূপের ওপর আল্লাহর কুরআনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের বিগত দিনগুলো শুধু উন্নয়নের গল্প শুনানো হয়েছে। কিন্তু নিজেরাই হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।

সাধারণ কেটে খাওয়া মানুষের কোন পরিবর্তন হয়নি। এই তো উন্নয়ন। বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। এসময় তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।
সমাবেশে ৮ দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমির আলহাজ¦ মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম

সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আলাউল্লাহ আমিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আলহাজ¦ শাহজাহান চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ-সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম এবং বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমির মাওলানা জিয়াউল হোসাইন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ