আজঃ সোমবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামে ভোট দিতে কি পারবে তিন লাখ নতুন ভোটার ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে তিন লাখ নতুন ভোটার। এরমধ্যে রয়েছে ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাগরিকও। আগামী বছরের মার্চ মাসে ১৮ বছর পূর্ণ হলে তারা ভোটার হিসেবে গণ্য হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তরুণদের ভাগ্যে কী হবে-এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এরপর নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে ওই দিন শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ৫ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানালেন, নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের তালিকা করা রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। তবে বড় কাজ সরঞ্জাম কেনা।

সরকারের সংকেত পেলে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কার্যক্রম শুরু করবে কমিশন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মতে নির্বাচনী আইনের কিছু সংস্কারের সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। তারমধ্যে ১৭ বছর বয়সী তরুণদের ভোটার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সরকারের। সরকারের নির্দেশনা পেলে তাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশের আইন মতে, ১৮ বছর পূর্ণ বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক ভোটার হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর হলেও, তা কমিয়ে ১৭ বছর করা উচিত।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, আগামী বছরের মার্চ মাসে ১৭ বছর বয়সী তরুণদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে। আইন অনুযায়ী তখনই তারা ভোটার হবেন। এখন আইন সংশোধন করে ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাগরিকদের ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবে কাজ করবে নির্বাচন কমিশন।তিনি বলেন, তরুণদের (ছাত্র-জনতা) গণ-অভ্যুত্থানে দেশে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে তাদেরও দাবি রয়েছে। তাদের দাবি মানা যুক্তিযুক্ত।

মো. বশির আহমদ আরো জানান, ভোটের কার্যক্রম অনেকটা গুছানো রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তালিকা করা হয়েছে। কিছু কেন্দ্র পরিবর্তন করা হতে পারে। ভোটারদের কাছ থেকেও আবেদন-আপত্তি গ্রহণ করা হবে। সব যাচাই-বাছাই করে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা হবে।

জানা গেছে, হালনাগাদ তিন লাখ ৪ হাজার ২৮৩ জন ভোটার। ২০২৬ সালের মার্চের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন না। কারণ ২ মার্চ ভোটার তালিকা ঘোষণা করা হয়। আইনে সংশোধন আনা হলে তারা ভোট দিতে পারবেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ভোটার ছিল ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ জন। সেই ভোটার তালিকা থেকে হালনাগাদে ৯৩ হাজার ৮৩৭ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর ২৪ হাজার ৭৯৯ জন ভোটার স্থান বদল করেছেন।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ২০২২টি। ভোটকক্ষ ছিল ১৩ হাজার ৮৫৭টি। গত নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে ২৭৫টি কেন্দ্র জরাজীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্ভাব্য এসব ভোটকেন্দ্রের দরজা-জানালা, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ সার্বিক অবস্থা সংস্কার-মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রামে যেভাবে হত্যা করা হয় মোবাইল মেকানিককে, গ্রেফতার-৩।

চট্টগ্রামে যেভাবে হত্যা করা হয় মোবাইল
চট্টগ্রাম মহানগরে পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে মোবাইল মেকানিক আকাশ ঘোষ হত্যায় প্রধান অভিযুক্তসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।কোতোয়ালী থানাধীন এনায়েত বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছিল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মো.সানি (২৪), মো.ইউছুফ (৩৫) ও শাকিল আলম ফয়সাল (২৬)।শনিবার দুপুরে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন র‌্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাওহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ১৪ নভেম্বর এনায়েত বাজার এলাকায় আকাশ ঘোষকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিম আকাশকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, আকাশ ঘোষ গোয়ালপাড়া পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা এবং পেশায় মোবাইল মেকানিক। একমাস পূর্বে অভিযুক্ত সানি ভিকটিম আকাশের দোকানে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে পরিবর্তন করা জন্য নিয়ে গেলে ভিকটিম মোবাইলের ডিসপ্লে পরিবর্তন করেন। মেরামতের ১৫শ’ টাকা পরিশোধের জন্য বলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত সানি তাকে কিছু টাকা পরিশোধ করে। গত ১৪ নভেম্বর আকাশ বাকি পাওনা টাকা আদায়ের জন্য অভিযুক্ত সানিকে চাপ দেয়।

সানি তাকে টাকা দেওয়ার জন্য রাতে কসাইপাড়া এলাকায় একটি গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে অভিযুক্ত সানি ও তার সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আকাশ ঘোষকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু

: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্দেশে নগরজুড়ে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে বিশেষ সমন্বিত ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে শনিবার চসিকের ১৮ নং ওয়ার্ডের কালা মিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক মশক নিধন, লার্ভা ধ্বংস, বর্জ্য অপসারণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়।

চসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, বছরের এই সময় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ায় নগরের ২৫টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করে সেখানে সক্রিয় মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক দল মাঠে কাজ করছে। তারা শুধু প্রাপ্তবয়স্ক মশা ধ্বংসই নয়, বাসাবাড়ি, ড্রেন, নালা, দোকানপাট ও বাজার এলাকার জমে থাকা পানিতে থাকা লার্ভা নিধন ও অবরুদ্ধ পানি অপসারণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছেন।

এ ছাড়া জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চসিকের পক্ষ থেকে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, ব্যক্তিগত সতর্কবার্তা প্রদানসহ এলাকায় এলাকায় বিশেষ নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যেখানে অনিয়ন্ত্রিত পানি জমে থাকা, পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন রাখা, বাসাবাড়ির ছাদে পানি সংরক্ষণসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
চসিক কর্মকর্তারা জানান, এই ক্রাশ প্রোগ্রামের মূল লক্ষ্য— মশক ঘনত্ব কমানো, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখা, নগরবাসীকে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসে সম্পৃক্ত করা।

অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন চসিকের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ), স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্ষা মৌসুমে বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন গলিতে পানি জমে থাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছিল। চসিকের এই ক্রাশ প্রোগ্রাম চালুর ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ভবিষ্যতেও চসিকের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ