আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

আটকের পর দুই চোরচক্রের হোতাকে ছেড়ে দিল থানা পুলিশ।

পাবনা প্রতিনিধিঃ

পাবনার শরিফ হাসপাতালে ডাক্তার-মালিকের যোগসাজশে নবজাতক চুরি-

পাবনা প্রতিনিধিঃগত ২৩ জুন রাতে ভাঙ্গুড়া থানার খানমরিচ ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান তার প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত দশটার দিকে তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অভিযোগ উঠেছে, অপারেশনের সময়ই ডাক্তার সাবরিন ইসলাম, ডাক্তার নাসিম এবং ক্লিনিকের মালিক শরিফ ও শরিফের স্ত্রী যোগসাজশ করে শিশুটিকে চুরি করে পাবনার আওতাপাড়া এলাকার মিনা খাতুন নামের এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেন।

প্রেসক্লাব পাবনার সদস্যরা এই ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধানে নামেন। তাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বাচ্চাটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং তার প্রকৃত মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এই বিষয়ে ডাক্তার সাবরিন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন এবং এড়িয়ে যান। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অপারেশনের সময় ডাক্তার সাবরিন ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে শরীফ হাসপাতালের মালিক শরিফ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়া, ডাক্তার নাসিমও এই ঘটনার সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ শরিফ হাসপাতালের বিষয়ে জানান, নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত ৪ মে ২০২৫ তারিখে শরীফ হাসপাতালকে নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা হয়। যেহেতু কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়া পুনরায় হাসপাতাল চালু করেছে তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চুরি হওয়া নবজাতকের বাবা সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার চারটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পুত্র সন্তানের আশায় প্রহর গুনছিলেন তিনি। একমাত্র পুত্র সন্তান চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, আজ আপনাদের জন্য আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি, আপনাদের কোটি কোটি ধন্যবাদ। মায়ের সন্তান মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।

ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান আরো জানান, চোরচক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া কালে পাবনা সদর থানা পুলিশ তাকে নানা ধরনের হুমকি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে মামলা করতে বাঁধা দেয়। এমনকি সিজারিয়ান অপারেশনের চিকিৎসাধীন স্ত্রী ও সদ্য প্রসূত সন্তানকে দ্রুত হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে।

এই ঘটনায় চোরচক্রের মূল হোতাদের ছেড়ে দেওয়া ও ভুক্তভোগী বাবাকে হয়রানির বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটককৃত আসামি মিনা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে চোরচক্রের মূল হোতা মিনার বিষয়ে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি একজন ডাক্তার। যিনি ডাক্তারি পেশার সাথে জড়িত তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী বানিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ায় আইনের সুবিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রেসক্লাব পাবনার সকল সদস্য এই মানবিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনা পাবনার চিকিৎসা খাতে চরম অবহেলা ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে। চোরচক্রের এই ঘটনায় জড়িত সকল দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ