
কারবালার শিক্ষা ও আহলে বাইতের মর্যাদা:-
হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইসলাম ও সত্যের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। তিনি ইয়াজিদের অন্যায় বায়াত গ্রহণ না করে শহীদ হন। ইসলামের স্বরূপ ও মর্যাদা রক্ষায় ইমাম (রা.)’র ভূমিকা অনন্য।
কুরআন ও হাদিসে নবী (দ.) পরিবারের (আহলে বাইত) মর্যাদা বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। পবিত্র আহলে বাইতকে ভালোবাসা ঈমানের অংশ।
রাসূল (দ.) বলেন, হাসান ও হোসাইন (রা.) জান্নাতী যুবকদের নেতা। তাঁদের ভালোবাসা মানে ইসলামের ত্যাগ ও সত্যের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করা।
✦ আহলে বাইতের প্রেম ও কারবালার অনুপ্রেরণা:-
কারবালার আত্মত্যাগ শুধু ইতিহাস নয়, বরং ন্যায়ের প্রতীক। এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মবিসর্জনের প্রতীক।
রাসূল (দ.) এর বহু হাদিসে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা, তাদের মর্যাদা ও শাফায়াতের কথা বলা হয়েছে।রাসূল (সা.) বলেন:“হুসাইন আমার থেকে, আমি হুসাইন থেকে। যে হুসাইনকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবেন।” (তিরমিজি)।
★কারবালা প্রসঙ্গে রাসূল (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী:-
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদতের পূর্বাভাস দেন। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ)-কে রাসূল (সা.) জানালেন—জিবরাঈল (আঃ) এসে বললেন, তাঁর নাতি হুসাইন (রাঃ) কারবালার ময়দানে শহীদ হবেন এবং সেই জমিনের মাটিও রাসূল (সা.)-এর কাছে পৌঁছে দেন। (মুসনাদ আহমদ)।
♦ কারবালার ইতিহাস (সংক্ষেপে):-সময়: ১০ মহররম, ৬১ হিজরি (১০ অক্টোবর, ৬৮০ খ্রিঃ)।ইমাম হুসাইন (রাঃ) কুফাবাসীদের ডাকে সাড়া দিয়ে পরিবারসহ কারবালায় পৌঁছান। সেখানে তাঁকে ফাঁদে ফেলে পানিবঞ্চিত করা হয়।১০ মহররম রোযা অবস্থায় ইমাম (রাঃ) ও তাঁর সাথিরা নির্মমভাবে শহীদ হন।ইয়াজিদের বাহিনী তাঁর মুবারক মাথা কেটে দামেশকের রাজপ্রাসাদে পাঠায়।
✦ হাররার করুণ ইতিহাস:-
ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের পর ইয়াজিদের সেনারা মদিনায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়, যাকে হাররার ঘটনা বলা হয়। অসংখ্য সাহাবা ও তাবেঈ শহীদ হন। মুসলিম ইবনে ওকবা’র বাহিনী মদিনায় তিনদিন ধরে লুট, হত্যা ও নির্যাতন চালায়। সিরাত লেখকগণ বর্ণনা করেন বিশেষ করে কুরতুবী বলেন মদীনাবাসীদের মদিনা থেকে বাইরে চলে যাওয়ার কারণ এই হারার মর্মান্তিক ঘটনা যে সময় মদিনা শরীফ অবশিষ্ট সাহাবা এবং তাবেঈদের দ্বারা পরিপূর্ণ এবং লোক বসতিতে ভরপুর এবং তার চিত্তাকর্ষক সাদৃশ্য বিদ্যমান মদীনাবাসীদের ওপর একের পর এক বিপর্যয় এবং অঘটন নেমে আসে ফলে তারা মদিনা ছেড়ে বাইরে চলে যায় । দুষ্ট ইয়াজিদ মুসলিম ইবনে ওকবা র নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী যুদ্ধ করার জন্য মদিনায় প্রেরণ করে। ওই সৈন্যবাহিনী কমবক্ত লোকেরা এই হারার নামক স্থানে নিতান্ত নির্মমতা এবং অবমাননার সাথে এই মহাত্মা গণের শহীদ করেন। তারা তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববীর সম্মান হানির কাজে লিপ্ত ছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রাক্কালে এজিদের কুচক্রী দল শিশু এবং মেয়ে লোক ব্যতীত ১২৪৯৭ জন লোককে হত্যা করে। যার মধ্যে ছিল ১৭০০ মুহাজির, আনসার, তাবেঈ,ওলামা ১০ হাজার সাধারণ লোক ৭০০ হাফেজে কুরআন ৯৭ জন কুরাইশ। ওই ঘটনায় এজিদের সৈন্যবাহিনী নানা প্রকার অত্যাচার অনাচার ও ধৃষ্টতাপূর্ণ অপকর্মে লিপ্ত হয় যেনার মত ভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্ণিত আছে এই ঘটনার পর ১০০০ মেয়েলোক অবৈধ সন্তান প্রসব করে। যেসব সাহাবায়ে কেরামকে মদিনায় জোরপূর্বক অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ফেরেস্তা স কর্তৃক গোসল প্রাপ্ত হযরত হানজালার পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ, তিনি সাত পুত্র সহ শহীদ হন।এই ঘটনায় প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী সর্বশেষ লাঞ্ছিত হন এজিদ বাহিনীর হাতে। বর্ণিত আছে এই গুন্ডাবাহিনী তার দাড়ি মোবারক গোড়া থেকে উচ্ছেদ করে ফেলে। লোকেরা তার দাড়ির এই অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করতেন আপনি কি দাড়ি নিয়ে খেলছেন এবং দাড়ি উচ্ছেদ করে ফেলেছেন? তিনি উত্তর দিতেন না। বরং ওই শাওন দেশীয় লোক গুলো আমার উপর অত্যাচার করেছে তাদের একদল লোক আমার ঘরে প্রবেশ করে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র নিয়ে যায় তারপর আরেকদল প্রবেশ করে কোন আসবাবপত্র না পেয়ে তারা আমার দাড়ি নিয়ে টানা হেচরা করে যার পরিণতি তোমরা এখন দেখছো। এই দুষ্টু লোকেরা এভাবে আরো কত যে অবর্ণনীয় নিপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
✦ ইসলামের নীতিবোধ ও ইয়াজিদি বর্বরতা:-
ইসলামে অন্যায়, অবিচার, হিংসা, চুরি, নারী নির্যাতন, মদ্যপান ইত্যাদি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । অথচ ইয়াজিদের বাহিনী এসবের সকল সীমা অতিক্রম করেছিল।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ কিছু লোক কারবালা এবং ওই ঘটনা নিয়ে মহরম মাস আসলে "শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো"এজিদের সাফাই গেয়ে নিজেদেরকে এজিদের উত্তরসূরী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত। যা চরম ভাবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী। অপরদিকে কেহ আহলে বাইতের প্রেম-ভালবাসা দেখালে তাদেরকে শিয়া নামে অপপ্রচারে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আমার বর্ণিত সত্য ঘটনা গুলোতে কারো সন্দেহ হলে সে যেন যুগের শেষ মুহাদ্দিস হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী লিখিত "জজবুল কুলুব ইলা দিয়ারেল মাহবুব"কিতাবখানা পড়ে দেখেন।
♥ হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) বিখ্যাত ভাষণ:-“অপমান আমাদের ধাতে নেই। আমি তরবারি বেছে নিয়েছি। আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।”
★ কারবালার শহীদগণ:-হাশেমি পরিবার:-
আলী আকবর (রাঃ), আলী আসগর (রাঃ), হযরত আব্বাস (রাঃ), কাসিম (রাঃ), আউন (রাঃ), মুহাম্মদ (রাঃ)।সাহাবা ও তাঁদের বংশধর:-মুসলিম ইবনে আওসাজা, হানী ইবনে উরওয়া, যুহায়ের ইবনে কায়ন, জোন, নাফে ইবনে হিলাল, হুর ইবনে ইয়াজিদ (তওবা করে শহীদ), সহ মোট ৭২ জন শহীদ হন ।
✦ আধুনিক মুসলিমদের শিক্ষা:-
আজকের মুসলিম সমাজের অধঃপতনের কারণ হলো আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, সত্যকে গোপন করা এবং ন্যায়বিচার ভুলে যাওয়া।কারবালার শিক্ষা হলো সত্যের পক্ষে অটল থাকা ও মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করা। আত্মত্যাগ, ধৈর্য, তাকওয়া ও ন্যায়পরায়ণতার শিক্ষা।আহলে বাইত ও ইমাম হুসাইনের (রাঃ) ভালোবাসা রাখা—ঈমানের অপরিহার্য অংশ।
✦ উপসংহার:-
কারবালা শুধু ইতিহাস নয়; এটি ন্যায়, আত্মত্যাগ ও সত্যের প্রতীক। রাসূল (সা.) এর হাদিসসমূহ আমাদের জানান যে, আহলে বাইতকে ভালোবাসা ও সম্মান জানানো ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।কারবালার ত্যাগ আমাদের জীবনে সত্য, ন্যায় ও আল্লাহর পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। কারবালা মানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, সত্যের পথে অবিচল থাকা এবং প্রকৃত ইসলামি জীবন গড়া। আশুরার আত্মত্যাগের শিক্ষা গ্রহণ করে ইসলামি জীবনধারা গড়ার তরে বিশ্ব মুসলিম উম্মার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সেই ত্যাগ ও প্রেমের আদর্শ অনুসরণ করার তৌফিক দিন—আমিন।