আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

সরকারী হাসপাতালে কিট সংকট চট্টগ্রামে আড়াই মাসে চিকনগুনিয়া রোগী শনাক্ত ২ সহস্রাধিক: ছয় এলাকা ঝুকিতে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো:


  1. চট্টগ্রামে জ্বরে আক্রান্তদের বেশির ভাগের শরীরেই শনাক্ত হচ্ছে চিকুনগুনিয়া। তবে আক্রান্ত প্রায় ৬০ শতাংশ রোগীই স্বাস্থ্য প্রশাসনের তালিকায় আসছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আড়াই মাসে চিকনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ২৬১ জন।
  2. বেসরকারি হাসপাতালগুলোর পরীক্ষার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন কার্যালয় এই তথ্য দিলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকনগুনিয়ো রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। সরকারিভাবে প্রধান দুটি চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে নেই চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার কোনো সুযোগ। অথচ এই দুই হাসপাতালের ওপরেই নির্ভর করে এই অঞ্চলের প্রায় চার কোটি মানুষ।
  3. পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় সরকারিভাবে আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান সংরক্ষণে নেই। এ অবস্থায় এইডিস মশাবাহিত রোগ চিকনগুনিয়া সংক্রমণের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে নগরীর ছয়টি এলাকা চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর জুন মাসের একটি জরিপ এবং আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব এলাকা চিহ্নিত করার কথা বলেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
  4. সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বুধবার পর্যন্ত জেলায় ১২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। এরমধ্যে চলতি অগাস্ট মাসে ৫ জন এবং জুলাই মাসে ৭ জনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩৯ জন নগরীর এবং ৬৩৩ জন উপজেলাগুলোর বাসিন্দা।
    জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বৃহৎত্তম প্রতিষ্ঠান পার্কভিউ হাসপাতাল, এপিক হেলথ কেয়ার সেন্টার, মেট্রোপলিটন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এভারকেয়ার, শেভরন, সিএসসিআর, আগ্রাবাদ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই কেবল রোগী শনাক্তের তথ্য পাঠায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে।
  5. সরেজমিন চমেক হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতালসহ কয়েকটিতে গিয়ে চিকিৎসক দেখাতে আসা এমন অনেক রোগী পাওয়া গেছে, যারা স্থানীয়ভাবে চিকুনগুনিয়া শনাক্তের পর উন্নত চিকিৎসা করাতে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রাম নগরে।
  6. চমেক ও জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, প্রতিদিন জ্বর নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন তিন থেকে সাড়ে তিনশ রোগী। যাদের মধ্যে উপসর্গ ও শারীরিক জটিলতা থাকা অর্ধেকের বেশি রোগীকে পরীক্ষার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সরকারিভাবে সুযোগ না থাকায় পরীক্ষা না করেই ফিরতে হয় অনেককে। এ কারণে প্রকৃত রোগীর কোনো তথ্য সংগ্রহে নেই দুই হাসপাতালে। প্রধান দুই হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার গিয়েও এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরও আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি রোগী তালিকার বাইরে থাকছে।
  7. এদিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ওই ছয়টি এলাকায় এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে চিঠিও দিয়েছে আইইডিসিআর। একই সাথে নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।তবে বর্ষা শেষ হলেও নগরীতে এইডিস মশার ঘনত্ব নির্ধারণে স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো জরিপ শুরু করেনি।
    এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে নগরীর যে ছয়টি এলাকাকে চিকনগুনিয়া সংক্রমণের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হল- হালিশহর, বন্দর, বায়েজিদ, আগ্রাবাদ, ডবলমুরিং ও সদরঘাট।
  8. জানতে চাইলে চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, এবার নগরীর সবগুলো এলাকাতেই কম-বেশি চিকনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হচ্ছে। আইইডিসিআর এর করা জুন মাসের জরিপ এবং আক্রান্ত রোগীদের তথ্যের ভিত্তিতে কোন এলাকাগুলোতে বেশি ঝুঁকি তা উল্লেখ করে আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছি। চিকনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী প্রথম ১০ দিন জ্বর ও ব্যথায় বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। তবে মৃত্যুর ঘটনা নেই। ডাক্তারের পরামর্শ মত চিকিৎসা চালিয়ে গেলে আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠবেন।
  9. ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি জানিয়ে তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, উপজেলা পর্যায়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা বিলম্ব করা না হয়।জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এএসএম লুৎফুল কবির শিমুল বলেন, এখনও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত অনেক রোগী পাচ্ছি। প্রধান দুই সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় আক্রান্তদের ব্যাপারে কোনো রেকর্ড থাকছে না। এতে অজানা থাকছে আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত তথ্য। এ ছাড়া অনেকে স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা করালেও তাদের তথ্যও নিয়মিত পাচ্ছে না স্বাস্থ্য প্রশাসন। হাসপাতাল ও চেম্বারে আমরা প্রতিনিয়ত এমন অনেক রোগী পাচ্ছি, যারা ডাক্তার দেখান এক জায়গায়, আর পরীক্ষা করান আরেক জায়গায়।
  10. চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চট্টগ্রামে এবারের মতো এত বেশি চিকুনগুনিয়ার রোগী আর শনাক্ত হয়নি। তবে সরকারিভাবে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা না থাকায় তাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বৈঠক করে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানকে রোগী শনাক্তের প্রতিদিনের তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও সেটিও মানছে না তারা।চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, কিট না থাকায় চিকুনগুনিয়া পরীক্ষা করাতে পারছি না। কিটসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিলেও সাড়া পায়নি।
  11. জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ একরাম হোসেন বলেন, চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য নেই কোনো পিসিআর মেশিন, ল্যাব ও কিট। নেই দক্ষ জনবলও।জানা গেছে, সিটি করপোরেশন নগরীর ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ২২ নম্বর এনায়েত বাজার, ২৮ নম্বর পাঠানটুলি, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা এবং ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে।
  12. সিটি করপোরেশেনের এক কর্মকর্তা বলেন, মশক নিধনের এই এলাকাগুলোতে আমরা ক্রাশ প্রোগ্রামের আওতায় সকালে ও বিকালে দুই বেলা প্রত্যেক বাড়ি ও আশেপাশের এলাকায় কীটনাশক ছিটাচ্ছি, লিফলেট বিতরণ করছি ও মাইকিং করছি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ও মশার প্রজনন ক্ষেত্র বিনষ্ট করার জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের দোয়া মাহফিল খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায়

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রেস ক্লাবের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেন, দেশের গণমাধ্যমের উন্নয়ন, সাংবাদিক সমাজের কল্যাণ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদান চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ চিরদিন স্মরণ করবে। বক্তারা ঐতিহাসিক অবদান স্মরণ করতে গিয়ে উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৮ সালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।

১৯৮০ সালে বায়েজিদের শেরশাহ এলাকায় সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটি-তে ১৬ একর জমি বরাদ্দ দেন, যা ১৯৮১ সালে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সরকারের আমলে তা রেজিস্ট্রি করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রেস ক্লাবের আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তৎকালীন মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনুদ্দীন কাদেরী শওকত বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রেস ক্লাবের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন। আমি অতীতে তাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আবারও অনুরোধ জানাই—বেগম খালেদা জিয়াকে প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হোক।

দোয়া মাহফিলে দেশ ও জাতির শান্তি, কল্যাণ ও স্থিতিশীলতার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ আনিস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তী কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, প্রেস ক্লাবের সাবেক লাইব্রেরি সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।মাহফিল শেষে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যেগে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাইবার ভিত্তিক সংগঠন জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) চট্টগ্রাম দক্ষিণ উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপার্সন আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও পরিপূর্ণ সুস্থতা কামনায় জিয়া সাইবার ফোর্স- (জেডসিএফ), চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যেগে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত। গত শনিবার বাদে মাগরিব পটিয়া তৈয়াবিয়া এতিমখানা, হেজখানা, খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত দোয়া মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আহ্বায়ক মোঃ আবুল বশর চৌধুরী। সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব এডভোকেট আজিজুল হক।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী বাহাউদ্দীন ফারুক মুন্না। উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আরাফাত চৌধুরী, কাজী মোঃ বাদশা, নাবিদুর রহমান, মোঃ রবিউল হোসেন আলভী, মোহাম্মদ মাহিম, তানবির জিহান সহ দক্ষিণ জেলার সকল নেত্ববৃন্দ। দোয়া ও মোনাজাতে মহান আল্লাহর দরবারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য রোগ থেকে পরিপূর্ণ সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেও দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ