মেঘনা আর তেতুলিয়ার কোলে শুয়ে আছে ভোলা, যেন প্রকৃতির আঁচলে বাঁধা এক অনিন্দ্যসুন্দর রাণী। সবুজ শ্যামলে ভরা এ দ্বীপ যেন স্বপ্নের দোলা। সোনার মাটি, নদীর গীতিময় স্রোত আর ফসলি জমিতে দুলে ওঠা সোনালী ধান মিলে ভোলাকে বানিয়েছে প্রকৃতির এক মহিমান্বিত চিত্রপট।
ভোলার সকাল জাগে পাখির ডাকে। শিশিরভেজা হাওয়া যখন মাঠের বুক ছুঁয়ে যায়, তখন কৃষকের ঘামে ভিজে ওঠে শস্যশ্যামলা জমি। ধানের শীষে ঝরে পড়া সোনালি রোদ আর কৃষকের হাসি যেন একে অপরের পরিপূরক। মেঘনার ঢেউয়ে ইলিশের নৃত্য আর জেলেদের জালে স্বপ্ন ধরা—এই ভোলার নিজস্ব ঐশ্বর্য।
এ দ্বীপের আকাশে-বাতাসে মিশে আছে বক, মাছরাঙা, শালিক ও টিয়ার কিচিরমিচির। প্রকৃতির এমন সুরেলা কলতানে মন ভরে ওঠে মুগ্ধতায়। কাশবনের নরম দোলা, নদীর বুকে ভাটিয়ালি গানের সুর, আর নৌকার পাল মেলে বাতাসে ভেসে চলা—সবই ভোলার সৌন্দর্যের অনন্য উপাখ্যান।
ভোলা শুধু প্রাকৃতিক রূপে নয়, প্রাণের টানে রাণী। এখানে সমুদ্রের নোনা হাওয়া মাটির গন্ধে মিশে এক অদ্ভুত আবেশ ছড়ায়। কাঁকড়ার হাঁসি, ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, আর জেলেদের উচ্ছ্বসিত গান মিলে ভোলার সুরের মূর্ছনা তৈরি করে। জোছনার আলোয় নদীর বুকে ভেসে থাকা স্বপ্ন যেন হৃদয় জুড়ে এক অমলিন কবিতা হয়ে বাজে।
ভোলা জেলার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে রঙিন মায়া, নদীর আঁকাবাঁকা পথ ধরে ছুটে চলে জীবনের স্রোত। তাই তো একে দ্বীপের রাণী বলা হয়। এ রাণীর সৌন্দর্য শুধু চোখে ধরা পড়ে না, হৃদয়ের গভীরে চিরকাল বেজে চলে।যেথায় যাই, মন পড়ে থাকে এই নদী-নদীর দেশে, কাশবনের বাতাসে, ইলিশের নৃত্যে, কৃষকের সোনালি হাসিতে। ভোলা শুধু একটি জেলা নয়, সে এক স্বপ্ন, এক ভালোবাসা—এ যে আমাদের প্রিয় দ্বীপের রাণী।