
আফ্রিকা মহাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো সাইক্লিং দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর ইউসিআই রোড ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫। ২১ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সপ্তাহজুড়ে রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতা বিশ্ব সাইক্লিং মানচিত্রে আফ্রিকার অবস্থানকে নতুনভাবে তুলে ধরেছে।
১২৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইউসিআই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হলো আফ্রিকায়— যা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। বিশ্বের শতাধিক টেলিভিশন চ্যানেল এই প্রতিযোগিতা সরাসরি সম্প্রচার করেছে, আর কিগালির সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজারো দর্শক উপভোগ করেছেন রোমাঞ্চকর রেসের মুহূর্তগুলো।
ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া বহুবার এই আসর আয়োজন করেছে, কিন্তু আফ্রিকা এতদিন ছিল আড়ালে। এবার রুয়ান্ডা প্রমাণ করেছে— বড় ইভেন্ট আয়োজনেও তারা প্রস্তুত ও সক্ষম।
এই আসরে অংশ নেয় রেকর্ড ১০৮টি দেশ, যার মধ্যে ছিল ৩৮টি আফ্রিকান দেশ। প্রায় ১,০০০ রাইডার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। “ট্যুর দ্য রুয়ান্ডা” খ্যাত এই ইভেন্টে দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও শৃঙ্খলা ছিল প্রশংসনীয়।
ইউসিআই এখন রুয়ান্ডায় টেকসই সাইক্লিং সংস্কৃতি গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে। মুসানজে, বুগেসেরা ও রওয়ামাগানা এলাকায় নতুন রিজিওনাল ডেভেলপমেন্ট স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে অ্যাথলেট, কোচ ও টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
ইউসিআই সভাপতি ডেভিড লাপারতিয়াঁ বলেন, “রুয়ান্ডার ট্র্যাক ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও সবচেয়ে চমকপ্রদ পথগুলোর একটি।”
কিগালিতে এবারের আসরে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কেড়েছে আন্ডার-২৩ নারী বিভাগ ও জুনিয়র প্রতিযোগিতা। তরুণ ও নারী রাইডারদের দ্রুত, আক্রমণাত্মক ও কৌশলপূর্ণ রেস বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নারী ও পুরুষ প্রতিযোগিতাকে একই মর্যাদায় মূল্যায়নের যে লক্ষ্য ইউসিআই নিয়েছিল, রুয়ান্ডা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে, মোনাকোর প্রিন্স অ্যালবার্ট II, ও ইউসিআই সভাপতি ডেভিড লাপারতিয়াঁ। তাদের উপস্থিতি শুধু মর্যাদা বাড়ায়নি, বরং সাইক্লিংয়ের বৈশ্বিক গুরুত্বও নতুনভাবে দৃশ্যমান করেছে।
ইউসিআই ২০২৫ সফলভাবে আয়োজনের মাধ্যমে রুয়ান্ডা প্রমাণ করেছে— নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও নাগরিক অংশগ্রহণে এক দেশ কীভাবে নিজেকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এখন রুয়ান্ডাকে দেখছে ‘উদীয়মান ক্রীড়া ও ইভেন্ট হাব’ হিসেবে। দেশটির তরুণ প্রজন্ম বিশ্বাস করতে শুরু করেছে— তারাও একদিন বিশ্বের সেরা সাইক্লিস্টদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
ইউসিআই ২০২৫ শুধু একটি ক্রীড়া ইভেন্ট নয়, এটি ছিল আফ্রিকার আত্মপ্রকাশের মুহূর্ত। নতুন মুখ, নতুন জাতি ও নতুন চ্যাম্পিয়নদের উত্থান প্রমাণ করেছে— সাইক্লিংয়ের ভবিষ্যৎ এখন সত্যিই বৈশ্বিক।