বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র দীর্ঘদিনের রাজনীতিক ও রামগড় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফরহাদ) তাঁর বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। শনিবার (তারিখ উল্লেখযোগ্য) খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ তোলেন।
লিখিত বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম ফরহাদ বলেন,
“আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০১১ সালে রামগড় পৌরসভার মেয়র পদে, ২০১৪ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এবং ২০১৮ সালে খাগড়াছড়ি-২৯৮ আসনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। প্রহসনের সেই নির্বাচনে আমি ৫১,২৮১টি ভোট পাই।”
তিনি বলেন, তাঁর পিতা মরহুম সাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া ব্যবসায়ী হয়েও বৃদ্ধ বয়সে জেল খেটেছেন, মা হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও পুলিশের নির্যাতনের শিকার। ১৯৯৯ সালে তাঁদের পৈতৃক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ১৭ বছরে তিনি ৩০টিরও বেশি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এলাকায় থাকতে পারেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে তাঁর বাড়িতে একাধিকবার হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। “আওয়ামী সন্ত্রাসের কারণে জাতীয় দিবসে পর্যন্ত আমি পতাকা উত্তোলন করতে পারিনি,” বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ অভিযোগ করেন,
“২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর ওয়াদুদ ভূঁইয়া আমাকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে অসাংগঠনিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু করেন। ২০১৯ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে রামগড় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আমার নাম বাদ দিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের নাম বসিয়ে হুবহু আরেকটি কমিটি প্রকাশ করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব বরাবর অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পাননি। পরবর্তীতে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার একক সিদ্ধান্তে তাঁকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক-১ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার একটি রেজুলেশন ছড়ানো হয়।
ফরহাদ বলেন, ওয়াদুদ ভূঁইয়া তাঁর আপন চাচা। ২০২৩ সালে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ভাড়া করে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। সেই ঘটনার সাক্ষাৎকারের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ নিপু তাঁর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
তিনি দাবি করেন, সেই মামলার তথ্য রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কিছু কর্মকর্তার মাধ্যমে সংগ্রহ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালানো হয়। “২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তা ও ওয়াদুদ ভূঁইয়ার লোকজন আমার চট্টগ্রামের বাসা, শ্বশুরবাড়ি ও দুই শ্যালিকার বাড়িতে একযোগে অভিযান চালায়। আমাকে না পেয়ে আমার স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। স্ত্রীর সঙ্গেও অসদাচরণ করা হয়,” বলেন ফরহাদ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ওয়াদুদ ভূঁইয়া আমাকে বিএনপি থেকে সরাতে ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য তৃণমূল বিএনপি বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর প্রলোভন দেন। আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রীর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়, ফলে তিনি সন্তান নিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।”
সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ জানান,
“৫ আগস্ট রাতে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার নির্দেশে তাঁর সন্ত্রাসীরা আমার রামগড়ের বাড়ি ও বাবার বাড়ি ভাঙচুর করে। ওইদিন আমার সমর্থকদের বিজয় মিছিলে হামলা চালিয়ে পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোতাহের হোসেন মিলনসহ কয়েকজনকে আহত করা হয়।”
তিনি বলেন, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মামলায় তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা হয়। এমনকি আশুলিয়ার একটি বৈষম্যবিরোধী মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর নামও জুড়ে দেওয়া হয়। এসব মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য তিনি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেন। দলের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ১৫ জুলাই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর সালাউদ্দিন খান পিপিএমের স্বাক্ষরিত দুটি চিঠি পাঠানো হলেও এখনো কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
ফরহাদ বলেন,
“চৌদ্দ মাস ধরে আমি মিথ্যা মামলার হয়রানিতে আছি। আমাকে চাপে রেখে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার জন্যই এই কর্মকাণ্ড।
তিনি দাবি করেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের জন্য দল ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। “আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের সামনে বক্তব্য রাখার সুযোগ চাই,” বলেন ফরহাদ।
শেষে তিনি মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে বলেন,
“আমাকে দলের সিনিয়র নেতাদের সামনে আমার বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিন।”