বেসরকারি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার সকালে দুদক-এর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক কমল চক্রবর্তী এ মামলা দায়ের করেছেন।একই মামলায় নদভীর স্ত্রীসহ আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুদক-এর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মামলার প্রধান আসামি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় প্রায় ২০ কাঠা জমি কিনে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট ‘আইআইইউসি টাওয়ার’ নির্মাণ করে। ২০১১ সাল থেকে সেখানে কার্যক্রম শুরু হয়।পরবর্তীতে ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর অনুসন্ধানে নামে দুদক।
অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন ও নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ট্রাস্টের সদস্যরা সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেন। ওই শ্রমের জন্য কোনো ধরণের সম্মানী, বোনাস, লভ্যাংশ, মোবাইল বিল, টিএ, ডিএ দেওয়ার নিয়ম ট্রাস্টের বিধিমালায় নেই।
কিন্তু আসামিরা আইআইইউসি টাওয়ার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ট্রাস্ট আইন ও বিধিবহির্ভূতভাবে পরস্পর যোগসাজশে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১২ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নদভী ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এর আগে তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়টিও ছিল জামায়াত নিয়ন্ত্রিত। নদভী সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরিচালনা পরিষদ থেকে জামায়াত নেতাদের বের করে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য আওয়ামী লীগের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ-কেও আসামি করা হয়েছে, যিনি একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও উপাচার্য ছিলেন।এছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে আরও যারা আসামি হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক ড.কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, চবি শিক্ষক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহর, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী, নদভীর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের ভাই মোহাম্মদ খালেদ মাহমুদ, অধ্যাপক ফসিউল আলম, অধ্যাপক আবদুর রহিম, ড. মো. শামসুজ্জামান, মোহাম্মদ বদিউল আলম, ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মুহাম্মদ শফীউর রহমান, অধ্যাপক ড. মাহি উদ্দিন, অধ্যাপক আফজল আহমদ এবং ড. মোজাফফর হোছাইন নদভী।