
চট্টগ্রামে নিত্য যানজটে নাভিশ্বাস নগরবাসীর। যানজটের কারণে বিদেশগামী যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন, সড়ক দখল করে গাড়ি পার্কিং, উন্নয়ন কাজের জন্য যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি, লক্ষাধিক অবৈধ রিকশার দাপট, ফুটপাত দখল করে হকার বাণিজ্য এবং সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে চকবাজার, আগ্রাবাদ, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের আশপাশসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ বেশি থাকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা চালু হলে নগরীর যাটজটের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে।
এদিকে নগরীর যানজট নিরসন ও আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চসিকের সচিব মো. আশরাফুল আমিনের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।
চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়ে সড়ক নিরাপত্তা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি ও যান চলাচলের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম উন্নয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে। এরই আলোকে প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়নে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, প্রস্তাব তৈরিসহ দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করতে এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে।
যানজট নিরসন ও আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটি ডিপিপি প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে বলে জানান চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান সোহেল। তিনি বলেন, এখানে দুটো বিষয় রয়েছে। একটি হচ্ছে সড়কে নিরাপত্তার বিষয়; অন্যটি হচ্ছে যানজট নিরসন। আমাদের এই প্রকল্পের মাধ্যমে উভয় সমস্যা সমাধান হবে।
ওই অফিস আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর যানজট নিরসন ও আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘ডেভেলপমেন্ট অব স্মার্ট ট্রাফিক সিস্টেম ফর ডিফারেন্ট এরিয়াস অব চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সদ্যগঠিত চার সদস্যের ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন চসিকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব এবং সদস্যসচিব নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. শাফকাত বিন আমিন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ফখরুল ইসলাম।
কমিটির সদস্যসচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. শাফকাত বিন আমিন বলেন, আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগে একটি কনসালটেন্ট ফার্মকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এটার আর অগ্রগতি হয়নি। এখন নতুন করে ওই ফার্মের সাথে কথা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পাইলট বেসিসে কিছু জায়গা নির্ধারণ করে তারা শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। তারা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি এবং ড্রয়িং-ডিজাইনের কাজ করবে।
চসিকের ওই অফিস আদেশে কমিটির জন্য ছয় দফা কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ, বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণয়নে সুপারিশ তৈরি, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে খসড়া ডিপিপি তৈরি এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন। এছাড়া, কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মেয়র বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে নতুন সদস্য নিতে পারবে।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ট্রাফিক সিস্টেম সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য কাজ শুরু করেছি। আমরা একটা সিস্টেম দাঁড় করাবো। কিন্তু এটার তদারকি করতে হবে ট্রাফিক বিভাগকে। যানজট নিরসন ও আধুনিক নগর পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সিগন্যাল লাইটের কোন বিকল্প নেই। আমরা পুরো নগরীকে আধুনিক সিগন্যাল লাইটের আওতায় নিয়ে আসবো।