
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বৈরী সময় ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস ও চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা হলেও শুধুমাত্র সাংগঠনিক কাঠামোর সুদৃঢ় ও শক্তিশালী ভিত্তির কারণে আওয়ামী লীগ টিকে আছে ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীক পুরাণের মিথ ফিনিক্স পাখির মতন ছাইভস্মের মধ্যেও বার বার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস যেমন জনগণ আওয়ামী লীগের ভিত্তি ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির উপরই।
তিনি গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম সেনা কল্যাণ কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার আওতাধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখনো পর্যন্ত যে সকল ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন হয়নি জুলাই মাসের মধ্যেই এগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠন অবশ্যই করে ফেলতে হবে। আগস্ট মাস যেহেতু শোকের মাস, এসময় আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের অবকাশ নেই। সেপ্টেম্বর মাসকে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ধরে নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে আড়ম্ভরপূর্ণভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের জেলা স্তরের যে সাংগঠনিক কমিটিগুলো রয়েছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি অন্যতম শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বরাবরই তার সাংগঠনিক সক্ষমতার দক্ষতা দেখিয়েছে এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলের শক্তিশালী ভিত্তিকে সুদৃঢ় রেখেছে। এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিকে সুদৃঢ় ও বিস্তৃত করার প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই ব্যক্তির পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়টি কখনো মুখ্য হতে পারে না। নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার মধ্যেই হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা সংগঠনের বিভিন্ন ধাপ ও স্তরগুলোতে নেতৃত্ব যদি সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে দলীয় ঐক্য, শৃঙ্খলা ও শক্তির পরিমাপ ও ঘনত্ব ভারি হয়। নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাভোটির বিষয়টি থাকলে কেনা-বেছা হওয়ার সুযোগ থাকে এবং পারস্পরিক বিভক্তি সৃষ্টিরও আশঙ্কা দেখা দেয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেছেন, আওয়ামী লীগ টানা চারবার ক্ষমতায় আছে- এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ধ্বস নামানো বিজয় অর্জিত হয়েছিল প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এই প্রতিপক্ষ ছিল নেতৃত্বহীন বিএনপি নামক একটি প্লাটফর্ম এবং স্বাধীনতা ও দেশ বিরোধী রেজিমেন্টাল জামায়াতে ইসলামী ও প্রতিক্রিয়াশীল ডান ও অতিবাম শক্তির মোর্চা। কিন্তু পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনগুলোতে আমাদের কোনো প্রবল প্রতিপক্ষ না থাকলেও দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি খুব একটা শক্তিশালী হয়নি। বরং নিজেদের মধ্যে কলহ, বিবাদ ও বিভক্তি বেড়েছে। আরো বেড়েছে দলের মধ্যে হাইব্রীডের প্রবল স্রোত। প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন, নিজস্ব গ্রুপ ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধির জন্য বাইরে থেকে ভিন্ন মতের মানুষ দলে ঢুকানোর কোনো প্রয়োজন নেই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ এমপি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন সম্পর্কে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির আওতাধীন ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ১৫ টি থানার মধ্যে একটি থানা আওয়ামী লীগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের যে সকল কমিটির সম্মেলন হয়নি সেগুলো মূলত পরিস্থিতিগত কারণে নয়, স্থানীয় নেতৃত্বের অনীহা ও আন্তরিকতার অভাবের কারণে। আমরা মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি থেকে এ সকল ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সম্মেলন কেন হয়নি এ ব্যাপারে তারা অবগত আছেন। তবে এটাও ঠিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্ব যদি ঐকমত্যে না পৌঁছে সেখানে কিছুতেই জোর করে সম্মেলন করতে হবে এমন মনোভাব চাপিয়ে দেয়া যায় না। স্থানীয় নেতৃত্ব যখন যেখানে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করে গেছে। তিনি আরো বলেন, আজ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৫৯ তম কার্যকরী কমিটির সভা সম্পন্ন হতে চলেছে। এর আগে অনুষ্ঠিত কার্যকরী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আলোচনা, তর্ক, বিতর্ক হয়েছে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই এক তরফা বা একছেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত বা অধিকাংশের মতামত সাপেক্ষে গৃহিত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরণের প্রশ্ন ওঠার অবকাশ নেই। তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করেন যে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে যায়নি এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সকল সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় অনুযায়ী জুলাই মাসের অবশিষ্ট ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে আরম্ভরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সকল কর্মপন্থা চূড়ান্ত করা হবে। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দ ও স্বস্থির দিন। কেননা এই দিনেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগসহ তার অধীনস্থ সকল ধাপ ও স্তরের সাংগঠনিক কমিটিগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাতে প্রত্যেক নেতাকর্মীর মনোভল চাঙ্গা হয়েছে। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাড. সুনীল কুমার সরকার, অ্যাড. মো. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, এম. জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব বদিউল আলম, উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য এ.কে.এম বেলায়েত হোসেন, আলহাজ্ব শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সম্পাদকমন্ডলির সদস্য সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, আলহাজ্ব শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, জুবাইরা নার্গিস খান, আবু তাহের, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য আবুল মনসুর, সৈয়দ আমিনুল হক, আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ, গাজী শফিউল আজিম, কামরুল হাসান বুলু, বখতিয়ার উদ্দিন খান, গোলাম মো. চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আহমদ ইলিয়াছ প্রমূখ।