আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রামের উজ্জ্বল নক্ষত্র

মাস্টার তেজেন্দ্র লাল রায়

ডাঃ উদয় শংকর রায়

সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী

আমি ডাঃ উদয় শংকর রায়( উত্তম কুমার)। আমার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়ন ও লালানগর গ্রামে।আমাদের বাড়ীটা আমার
বাবার নামে খ্যাত। আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়। আমার বাবার পরিবার আমরা তিন ভাই ও তিন বোন আমি ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়।আমি ঐ পরিবারে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেকটা গর্বিত মনে করি।তিনি বৃটিশ আমলে চট্টগ্রাম শহরের প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুলে পড়াশুনা করতেন তখন আমার বাবার চাল চলন-হাব-ভাব দেখে বৃটিশ সরকার আমার বাবাকে রায় উপাধিতে ভূষিত করেন।বৃটিশের তৈরী এই প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুলটিকে জেল স্কুল বলা হত।এই স্কুলে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়ম-নীতি শিখানোও হত। স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ড শৃঙ্খলা মতো পরিচালিত হতো।কথাগুলো আমার বাবার মুখেই শুনেছি। স্মৃতির পাতায় গেথে রেখেছিলাম বলেই তা আজ সর্ব সমক্ষ্যে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায় প্রবর্তক সঙ্ঘ স্কুল থেকে থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করে বোয়ালখালীতে কানুনগো পাড়া কলেজে পড়াশুনা করতেন।। সেই সময় নিয়মিত পড়াশুনা করে সেই কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। অতপর চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করেন। গ্রামে বাড়িতে যখন গিয়েছিলেন। তদানিন্তন আমলে আমার বাবাকে অনেক লোকজন দেখতে গিয়েছিলেন।
তখন গ্রামে খুব একটা গ্রেজুয়েট ছিল না বললেই চলে।
১৯৪২ ইংরেজিতে যখন মাষ্টার আশরাফ আলী তালুকদার ঐসময় উত্তর রাঙ্গুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই মাষ্টার আশরাফ আলী তালুকদার
আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ মহোদয়ের কাছে এই কথা বলেছিলেন,- আপনার ছেলে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছে এটা শুধু আপনার একার গর্ব না, এই গর্ব অত্র গ্রামের গর্ব। এই সমগ্র রাঙ্গুনিয়া থানার অধিবাসীদের গর্বের বিষয় বলে আমি মনে করি।

আপনি যদি আপনার ছেলেকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার অনুমতি দেন তাহলে খুবই ভালো হবে। অত্র এলাকার ছেলে মেয়েরা শিক্ষা লাভ করতে পারবে।।প্রত্যুত্তরে আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ মহোদয় বলেছিলেন আমার ঘরে আলো জ্বলবে আর সবার ঘর অন্ধকার থাকবে সেটা আমি কখনো চাই না। তখন আমার ঠাকুর দাদা বলেছিলেন আমার ছেলে উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েে বিনা টাকায় শিক্ষা দান করবে।সেই সময় আমার ঠাকুর দাদা রজনী কান্ত নাথ (মহাজন) নানিয়া চর বাজারে মুদি দোকান করতেন।সেই সময় মুদি দোকান করে অনেক সম্পদশালী হয়েছেন। তদানিন্তন আমলে বাবার অমতে
ছেলে মেয়েরা কিছুই করতে পারতো না।অর্থাৎ ছেলে মেয়ে মা বাবার বাধ্য ছিল। সেই থেকে আমার বাবা সুদীর্ঘ জীবন এই স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষা প্রদান করেছিলেন।শিক্ষকতা করার সময়কালে বাড়ির কাছে আমাদের দুই অংশীদারত্বের পুকুরের পাড়ে। ১৯৪৩ ইং
সালে আমার বাবার একক উদ্যোগে গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় একটা মাটিয়া কোটা তৈরী করেন। সেই মাটিয়া কোটার নামকরণ করেছিেলেন লালানগর বালিকা বিদ্যালয়। আমার বাবার নিজের অর্থায়নে স্কুলের যাবতীয় সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা করেছিলেন।তখন থেকেই স্কুলের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আমার বাবাই করে এসেছিলেন। সুদীর্ঘ বছর পর যখন স্কুলটা সরকারি করণ হলো তখন কতগুলো স্বার্থান্বেষী মানুষের চক্ষুশূল হওয়ার কারণে থানা অফিসারকে উৎকোচ দিয়ে রাতের অন্ধকারে জোর করে স্কুল গৃহটি ভেঙ্গে আমাদের বাড়ি পূর্ব পাশের সিকদার পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে রাতারাতি প্রতিস্থাপন করেন।তারপর ওখানেই সরকার কর্তৃক প্রদত্ত স্কুলটি পাকা দালানকোঠা নির্মিত হয়।আমার বাবার অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার প্রতিফলনকে দূবৃত্তরা জোর খাটিয়ে নিয়ে গেছে।কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার।অর্থাৎ Might is Right. তাই আমার ভাষায় বলি, কার ঘরে কে থাকে, কার গাড়ি কে চালায়,কার অধিকার কে ছিনিয়ে নিয়ে ভোগ করে।এটাই বড়ই৷ পরিতাপের বিষয়। এসবের বিচার সৃষ্টি কর্তার হাতে ন্যস্ত রইলো। মানুষের আাদালতে বিচার যদি সুষ্ঠু নাহি হয়। স্রষ্টার বিচার সুষ্ঠু হবে জেনো সুনিশ্চয়।
এছাড়াও ধামাইর হাট সংলগ্ন ভি,এইচ,ডি মিলন সঙ্ঘ
ক্লাবটিও আমার বাবার উদ্যোগে লালানগর ও রাজানগর গ্রামের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সহযোগিতায় তদানিন্তন আমলে প্রতিষ্ঠা লাভ হয়।আমার বাবার মুখে শুনেছিলাম তাদের নাম।প্রথমে ভূমি দাতা আহম্মদ কবির চৌধুরীর নাম না বললে নয়।উনি যদি সর্বাগ্রে ভূমি দান না করতেন, তাহলে আমার বাবার নেওয়া উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্য্যবশিত হতো বলে আমার সুদৃঢ় ধারনা। এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা লগ্নে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করছি, সর্বশ্রী
১. আহম্মদ কবির চৌধুরী, ২ মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়. ৩.ডাক্তার সতীশ চন্দ্র দাশ.৪ মাষ্টার দলিলুর রহমান.৫.মাষ্টার নুরুল হুদা,৬ বিমল দেওয়ানঞ্জী.৭.চিত্ত
দেওয়ানঞ্জী.৮.ডাক্তার বিনয় রঞ্ন দাশ। আরও অনকে
যাদের নাম আমার বিস্মরণ হয়েছে।এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা সম্পাদক ছিলেন আমার বাবা মাষ্টার তেজেন্দ্র লাল রায়। এই ক্লাবে একটি লাইব্রেরীও ছিল। লাইব্রেরীটা ছিল আমার মায়ের ছদ্মনামে, স্মৃতিরেখা পাবলিক লাইব্রেরী। আমার প্রায়শই কলিকাতা যেতেন।তখন ছিল অবিভক্ত পাক্ ভারত। কলিকাতা থেকে বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের লেখা কবিতার বই, গল্পের বই,ও উপন্যাসের বই নিয়ে এসে এই লাইব্রেরীতে দান করেছেন,তার কোন ইয়ওা নেই। আমার বাবা ছিলেন সাহিত্য প্রেমী ও সাংস্কৃতিক মনা মানুষ। এই লাইব্রেরীর বই পড়ে গ্রামের অনেক মানুষ জ্ঞান সম্পদে সমৃদ্ধি লাভ করেছেন। এই ক্লাবে একটা থিয়েটার মঞ্চ ছিল।এই মিলন সঙ্ঘ ক্লাবের সদস্য ও অনেক বছরে তিনটি বই মঞ্চস্থ হতো খুব ঝাঁকঝমক ভাবে। এই থিয়েটার দেখার জন্য অনেক দূর দূরান্ত থেকে মানুষের সমাগম হতো। আমিও ছোট অবস্থায় আমার বাবার অভিনয় দেখেছি এবং আমিও দুই তিনটা বইয়ে অভিনয় করেছি। বড়ই পরিতাপের বিষয়,এখন এই ভি,এইচ,ডি মিলন সংঙ্ঘ ক্লাব ও স্মৃতিরেখা পাবলিক লাইব্রেরীটার আজ অবহেলিত হয়ে জরাজীর্ণ ও অভিভাবক হীনতায় পড়ে আছে।এখনও এই প্রতিষ্ঠানের জায়গাটা প্রতিষ্ঠা সম্পাদক হিসেবেই আমার বাবার নামেই দলিলটি রয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

আজ বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি নাসির আহমেদ এর ৭৩ তম জন্মদিন ।। 💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️💚♦️


আজ (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) একাত্তরের পদাবলী, তোমার জন্য অনিন্দিতা, বৃক্ষমঙ্গলের কবি নাসির আহমেদ এর ৭৩ তম জন্মদিন। কবির জন্মভূমি দ্বীপজেলা ভোলায় আজ যথাযথ আয়োজনে দিনটি উদযাপন করবে – জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলা এবং জলসিঁড়ি সাহিত্য আসর ।


ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি গ্রামের হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে আজ বিকেল ৪ টায় “কবি নাসির আহমেদের জীবন ও সাহিত্য” শীর্ষক এক মূল্যবান আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ ও কবিতার গান অনুষ্ঠিত হবে ।

অনন্য এই আয়োজনটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- ভোলা জেলা কালচারাল অফিসার জনাব হাসানুর রশিদ মাসুদ । কবি নাসির আহমেদ এর জীবন ও সাহিত্য শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাধারণ সম্পাদক ও জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের নির্বাহী সভাপতি সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান । স্বাগত বক্তব্য রাখবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সহ-সভাপতি কবি মিলি বসাক ।


সভাপতিত্ব করবেন- জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সভাপতি ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সিনিয়র সহ-সভাপতি শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন- জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক কবি মহিউদ্দিন মহিন । কবি নাসির আহমেদ কে নিয়ে কথা বলবেন ও কবিতা পাঠ করবেন- জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি আল মনির, কবি গবেষক নীহার মোশারফ, জলসিড়ির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি, জলসিঁড়ির কোষাধ্যক্ষ কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ, নির্বাহী সদস্য কবি চৌধুরী সাব্বির আলম , কবি কামরুন্নাহার , কবি মাহে আলম আখন প্রমুখ ।

❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙❤️💙

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ