আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরতে সিএমপি’র পুরস্কার ঘোষণা

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে ধরতে অবশেষে পুলিশ পুরস্কার ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেনকে আইনের আওতায় আনার জন্য তার অবস্থান সংক্রান্তে সঠিক তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা

করবে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। সংবাদদাতার সহায়তাকারীর পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। হত্যা, অস্ত্র,

চাঁদাবাজিসহ ১০টিরও বেশি মামলার আসামি তিন। বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে সাজ্জাদ। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত-শিবির ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলী খানের সহযোগী হিসেবে এই ‘ছোট সাজ্জাদ’ অপরাধজগতে পা রাখেন। বিদেশে বসেই সাজ্জাদ আলী খান নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করান তাকে দিয়ে।

সবশেষ গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন তিনি। ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবুও আমি হার মানবো না। দেখি, তোদের জোর বেশি না আমার। আরিফ তুই প্রস্তুত থাকিস। তোর উচ্চপদস্থ যারা আছে তাদেরকে বলিস।’ এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ওই ওসি।

জানা গেছে, গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার

সহযোগীদের আসামি করা হয়।একইবছরের ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে এই দুর্র্ধষ সাজ্জাদ বাহিনী।
এদিকে হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। সবশেষ গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। জামিনে বেরিয়ে এসে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার

কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া একইবছরের ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে সাজ্জাদ বাহিনী।

অন্যদিকে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযানে যায় পুলিশ। তাদের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয় তখন।

পুলিশ তখন জানিয়েছিল, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ওই দুজন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ