আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

রূপগঞ্জে অবৈধ গ্যাসে চলে ডাইনিং কারখানা।

মাহাবুবুর রহমান রনি,রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

রুপগন্জে অবৈধ গ্যাস সংযোগে চলছে এসকল ডাইং কারখানা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যত্রতত্র গড়ে উঠা ছোটবড় প্রায় অর্ধশত ডাইং কারখানা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চালিয়ে আসছে। একদিকে কারখানার বর্জ্যের পানি এলাকার আবাদি জমিতে ফসলে ব্যাপক

ক্ষতি সাধন করছে অআরাক দিকে পরিবেশ দূষন করে প্রায় ৭ শত একর ফসলি জমির আবাদ নষ্ট করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার বসবাসরত মানুষ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছে নিরব ভূমিকায়। ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে দেয়া সংযোগ প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতা না থাকায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলে কারখানাগুলো সরকারের কোন প্রকার অনুমোদন বা লাইসেন্স না থাকায় কারখানাগুলো থেকে সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে রূপগঞ্জে এ রকম শতাধিক ডাইং কারখানায় অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে।
জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল সাওঘাট কাতরারচক এলাকায় রয়েছে ফুজি ডাইং কারখানা, মিতা ডাইং কারখানা, গোলাকান্দাইল হাট সংলগ্ন পূর্বপাড়া রয়েছে হাসান ডাইং কারখানা, উত্তর পাড়া এলাকায় জামান ডাইং কারখানাসহ ইউনিয়নের হরগাও ও ডহরগাঁও এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড় ঘেষে গড়ে উঠেছে শতাধিক ডাইং কারখানা। এসকল কারখানার বর্জে পানিতে ব্রাহ্মপুত্রের পানি ও এলাকার পরিবেশ দূষনে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে গোলাকান্দইল পূর্ব পাড়া হাসান ডাইং ও উত্তরপাড়ার জামান ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে মালিকপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করো তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এসব ডাইং কারখানা পরিবেশ দূষনের জন্য যেমন দায়ী তেমনি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি করছে। এদের দূষিত বর্জ্যের পানি একদিকে নদীতে ফেলায় নদীর পানি নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকটি কারখানার বর্জ্য ফসলী জমিতে সরাসরি গিয়ে পড়ছে। এতে করে গোলাকান্দাইল, সাওঘাট, মাহনা, আধুরিয়া ও দড়িকান্দি এলাকার প্রায় ৭শ একর জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এসব জমিতে সারা বছর কালো পানি জমে থাকার কারনে কোন প্রকার ফসল ফলাতে পারছেনা কৃষকরা। এতে করে কম মূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।

গোলাকান্দাইল পূর্বপাড়া ও উত্তরপাড়া এলাকায় গ্রামের ভিতরে হাসান ডাইং ও জামান ডাইং কারখানা গড়ে উঠার ফলে এলাকাবাসী পড়ছে স্বাস্থ্য ঝুকিতে। এলাকার অনেকেই বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারখানার বর্জ্যের পানি সরাসরি টাটকী খালে গিয়ে পড়ছে। এতে গোলাকান্দাইল ও দড়িকান্দি মৌজার কয়েকশ একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কোন কর্ণপাত করছেনা কারখানা কর্তৃপক্ষরা। প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ডাইং কারখানা বন্ধের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে হাসান ডাইং কারখানার মালিক ও জামান ডাইং কারখানার মালিক পক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার না পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সুইটি জানান, এলাকায় বিভিন্ন ডাইং কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্যের পানি পুকুর, ডোবা, খাল-বিলে জমা হচ্ছে। আর এই পানিতে রোগবাহী মশা মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে চুলকানি ও ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষ। এসকল রোগিদের স্থানীয় হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, শিশুশ্রম বেআইনী। তাছাড়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের কারখানা নির্মাণ করে পরিবেশের ক্ষতি করা যাবে না। খুব শীঘ্রই হাসান ডাইং কারখানা ও জামান ডাইং কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এছাড়া শুধু ডাইং কারখানা নয় রূপগঞ্জের সাওঘাটে গড়ে উঠছে অবৈধ কেমিক্যালের দোকান। সেখানে বিস্ফোরক কেমিক্যাল বিক্রি করা হচ্ছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে সাওঘাটে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। আব্দুল্লাহ কেমিক্যাল নামের দোকানে অবৈধ কেমিক্যাল বিক্রি করা হয়। তার কোন লাইসেন্স নেই। সরকারকে কর ফাঁকি দিচ্ছে সাওঘাটে অবস্থিত আব্দুল্লাহ কেমিক্যালের পরিচালক ফজলুল হক।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন আমরা দু একদিনের মধ্যেই এ সকল অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী কারখানা গুলোতে অভিযান চালাবো।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ