
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের দলের মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী নির্বাচনী দায়িত্বশীল সম্মেলনে জামায়াত আমিরের উপস্থিতিতে যে ‘রাজনৈতিক শালীনতাবিরোধী ও ঘৃণ্য’ বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে চট্টগ্রাম নগর বিএনপি। রোববার এক যৌথ বিবৃতিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ এবং সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান স্বাক্ষরিত এ বিবৃতি দেয়া হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন, ষড়যন্ত্রপ্রসূত এবং স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই মন্তব্য নির্বাচনী পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশাসনের প্রতি প্রকাশ্য হুমকি, নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত এবং ভোটাধিকার খর্ব করার উদ্দেশ্যে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক দায়িত্ববোধবর্জিত জঘন্য আচরণ। এটি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংসের পরিকল্পিত অপতৎপরতারই অংশ।
যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, শাহাজাহান চৌধুরীর বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। তার ভাষণে যে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ফুটে উঠেছে, তা অতীতের মানবতাবিরোধী শক্তির দমনপীড়নের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।মহানগর বিএনপি দাবি জানায়, শাহাজাহান চৌধুরীকে অবিলম্বে তার ‘অশালীন, ঘৃণ্য ও উস্কানিমূলক’ বক্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, এ ধরনের উস্কানিমূলক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বক্তব্যের জন্য তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে বরাবরই অটল থাকবে এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা পালন করবে।এর আগে শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনি দায়িত্বশীলদের সমাবেশে শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর জন্য আজকের এই সুযোগ ভবিষ্যতে আর আসবে না। দুর্নীতির টাকা বাদ দেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হিন্দুস্তান থেকে বস্তা বস্তা টাকা দেশে ঢুকবে। আর অস্ত্র ঢুকবে।
আমাদের আমিরে জামায়াত যদি থাকতো আমি বলতাম, নির্বাচন শুধু জনগণকে দিয়ে নয়। আমি ন্যাশনালি বলবো না, যার যার নির্বাচনি এলাকায় যারা প্রশাসনে আছে, তাদের অবশ্যই আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেফতার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তবে এ বক্তব্যের সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান মঞ্চে ছিলেন না।

শনিবার রাতেই ওই সমাবেশে দেওয়া শাহজাহান চৌধুরীর এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আগামী নির্বাচনে মাঠ প্রশাসনকে জামায়াতের পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার কথা ওই ভিডিওতে বলতে দেখা যায় তাকে।
বক্তব্যে কেন্দ্রীয় এক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রাইমারি স্কুলের মাস্টারকে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষককে দাঁড়িপাল্লার কথা বলতে হবে। পুলিশকে আপনার পেছনে পেছনে হাঁটতে হবে। ওসি সাহেব আপনার কী প্রোগ্রাম সকাল বেলায় জেনে নেবে, আর আপনাকে প্রোটোকল দেবে। টিএনও (ইউএনও) সাহেব যা উন্নয়ন এসেছে, সমস্ত উন্নয়নের হিসেব যিনি নমিনি (জামায়াতের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) তার থেকে খুঁজে বের করতে হবে।তিনি আরও বলেন, আমি আমার দক্ষিণ জেলায় অনেককে সহযোগিতা করেছি।
তখন ক্যান্ডিডেট হিসেবে আমার নামও ঘোষণা করা হয়নি। উপদেষ্টাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, লোহাগাড়ায় ১০০ কোটি, সাতকানিয়ায় ১০০ কোটি এবং বাস্তবায়ন করার জন্য লোহাগাড়ায় ১০ কোটি, সাতকানিয়ায় ১০ কোটি (দেওয়া হয়েছে)। আপনি যদি জনগণকে কিছু দিতে না পারেন, জনগণের অভাব, অভিযোগ, চাহিদা বুঝতে হবে। ডেকোরেশনের বয়দের নিয়ে কোনও সম্মেলন হয়েছে। আমরা তো তাদের ভোটারই মনে করছি না। সবাইকে নিয়ে সম্মেলন করতে হবে।
এদিকে ভাইরাল বক্তব্য প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, খণ্ডিত বক্তব্য প্রচারে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রচার/ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। শনিবার রাতে জামায়াতের দায়িত্বশীলদের বৈঠকে দেওয়া বক্তব্য ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় একটি গণমাধ্যমে তিনি আলোচ্য প্রতিক্রিয়া জানান। শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আসলে আমার গতকালকের দায়িত্বশীল সমাবেশে মুহতারাম মানবিক নেতা ড. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে- যেখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলনে আমি যে বক্তব্যটি রেখেছি- সেটা আমাদের টোটাল প্রশাসন আমাদের দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে কাজ করবে এবং আমাদের দেশের বর্তমান ইন্টেরিম গভমেন্টের অধীনে দেশের স্বার্থে পুলিশদেরকে কাজ করতে হবে।
আমি এটি বোঝাতে চেয়েছিলাম। আজকে যারা আমার এই খণ্ডিত বক্তব্যকে শুধুমাত্র আমাদের জামায়াত ইসলামীকে চিহ্নিত করছেন জিনিসটা পক্ষান্তরে তারা ফ্যাসিস্টদের সহযোগিতা ও উস্কানি দিচ্ছে। আমি যে বক্তব্য রেখেছি সেটা খণ্ডিত না শুনে পুরা শুনলে বুঝতে পারবেন আমি আমাদের পুলিশ বাহিনীকে দেশপ্রেমী হওয়ার জন্য এবং দেশের স্বার্থে কাজ করার জন্য, জনগণের কথা শুনার জন্য, জনগণের দেওয়ালে লিখন শুনার জন্য আমি বক্তব্যটা রেখেছি।












