
আগুন লেগে কিছু সময় পরে আবার নিভে যায়। হঠাৎ দিনের আলোতে পরিবারের লোক ও প্রতিবেশীদের সামনে এমন ঘটনা ঘটছে। কখনো আসবাব পত্রে, কখনো পরিধানের জামা কাপড়ে এবং ঘরের ছালের মধ্যে লেগেছে আগুন। এমনিভাবে পার হয়েছে প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস।
কি কারণে আগুন লাগছে এর কোন রহস্য কেউ বলতে পারেনি। একাধিক কবিরাজ দিয়ে তাবিজ লাগিয়ে এবং গরু কেটে মিলাদ ও দোয়া পড়িয়ে রেহাই পাচ্ছে না। এমন অদৃশ্য আগুন আতংকে গ্রামবাসী। আর এ ঘটনায় বর্তমানে ঘরের বাহিরে অবস্থান করতে হচ্ছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিন ইউনিয়নের পূর্ব দায়ছারা গামের শাহাদাত হোসেন পাটওয়ারী পরিবারের।
রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই বাড়ীতে অবস্থান করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে অদৃশ্য আগুন ঘটনার সত্যতা মিলে। এই বিষয়ে কথা হয়েছে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার সাথে।

শাহাদাত পাটওয়ারীর পেশায় কৃষক। তার স্ত্রী, ৪ ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। বাড়ীতে তার স্ত্রী, এক ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতিকে পাওয়াগেছে। তারা দিনের বেলায় বাড়ীতে থাকলেও রাতে অন্য স্থানে ঘুমাতে হয়।
গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল করিম ও মান্নান খান বলেন , এমন আগুনের ঘটনা কখনো দেখিনি। শাহাদাত পাটওয়ারী ঘরের ফিরেজের মধ্যেও আগুন লেগেছে। কেউ দেখতে গেলে তাদের গায়েও আগুন লাগে। বিভিন্ন চেষ্টা করেও পরিবারটি রেহাই পাচ্ছে না।

তাছারা কামরুল হাসান বলেন, রাতে আগুন লাগে না। আর আগুনে কোন আসবাবপত্র পুরোটা পুড়ে যায় না। আংশিক পুড়ে যায়। আবার কিছু সময় পরে নিভে যায়। কবিরাজ দিয়ে তাবিজ লাগিয়ে কোন কাজ হয় না। আগুন লাগে আবার কয়েকদিন বন্ধ থাকে আবার একই ঘটনা।
এলাকার নোয়াব আলী বাড়ীর এমরান হোসেন বলেন গত কয়েক সপ্তাহ আগুন লাগার ঘটনা বেড়েছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) আগুন লাগে। গ্রামের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন লোক এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগে একবার দমকল বাহিনীর লোকও আসে। আগুন লাগার পরে ঘরের আসবাবপত্র ও জামা কাপড় পাশের মসজিদে নিয়ে রাখে। সেখানে মসজিদের ভিতরেও আগুন লেগে যায়।
এছারা রামদাসের ভাগ গ্রামের ওসমান খান ও ফয়সাল বলেন , এই ঘটনা জানতে পেরে আমরা দেখতে এসেছি। এই পরিবারের করুন এই দৃশ্য দেখতে অনেকেই আসছে। আবার অনেকে আতংকে বাড়ীতে প্রবেশ করে না। কারণ অনেকে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার পর শরীরের আগুন লেগে যায়।
আর ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান আমরুল বলেন, আমি শাহাদাত হোসেনের বাড়ীর পাশে বেশি সময় থাকতে হয়। কারণ এখানে আমার একটি পোল্টি খামার আছে। গত ৭-৮ মাস আগ থেকেই এই আগুনের ঘটনা। আমরা বহুবার আগুন লাগার পরে বড়িতে গিয়েছি। কিন্তু আগুনের কোন সূত্রপাত পাইনি। আমাদের ধারণা এটি কোন অদৃশ্য বিষয়। আল্লাহর অশেষ রহমত ছাড়া এই পরিবারের কোন রক্ষা দেখি না। এই শীতের মধ্যে তারা গায়ে জামা কাপড় রাখতে পারে না এবং ঘরে ঘুমাতে পারে না।
শাহাদাত হোসেন পাটওয়ারী বলেন, আমি গত ৭-৮ মাসে আগুনের ঘটনায় খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। আমার বয়স ৭০ বছরের বেশী। আগুনের ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে বহুভাবে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রেহাই মিলছে না। বেশী কথা বলতে পারি না। আমি সকলের দোয়া চাই।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর গ্রাহক প্রতিনিধি (পরিচালক) আলী আজম রেজা বলেন, ঘটনাটি পূর্বে থেকে শুনে আসছি। প্রথমে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি নিজে যখন গিয়ে দেখলাম এবং আমাদের সামনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই বিশ্বাস করেছি। বৈদ্যুতিক কোন সমস্যা আছে কিনা সেটিও আমি পরীক্ষা করিয়েছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ শতভাগ সঠিক। এই পরিবারটি এখন খুবই অসহায়। গ্রামবাসীও আতংকে। বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুসন্ধান করে দেখার অনুরোধ করছি।
ফরিদগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কামরুল হাসান জানান, গত ১২ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে শাহাদাত পাটওয়ারীর বাড়ীতে আগুন লাগলে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে যাওয়ার পূর্বেই স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন জিনিসপত্র আমরা দেখতে পেয়েছি। ওই বাড়ীর অনেক কিছুতে আগুনে লেগেছে বলে জানতে পারি। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে এই আগুন কেউই বলতে পারছে না।