
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের একমাত্র এমআরআই মেশিন বন্ধে প্রতিনিয়ত রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রায় চার বছর ধরে নষ্ট রয়েছে মেশিনটি। এতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করাতে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগছে। ফলে গরিব রোগীরা পরীক্ষাটি করাতে পারছেন না।
জানা গেছে, দুই হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতালে গড়ে দিনে রোগী ভর্তি থাকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন অন্তত তিন হাজার রোগী। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এত বড় হাসপাতালে এমআরআই মেশিন মাত্র একটি। তাও সেটি বছরের পর বছর অকেজো। কোনো সভ্য দেশে এমন হতে পারে না। রোগীদের ভোগান্তির দায় এড়াতে পারে না কর্তৃপক্ষ।
তবে চমেক কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এমআরআই মেশিন সচল করতে বিভিন্ন দপ্তরে অন্তত ৪০ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু সচল হচ্ছে-হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দায় সারছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ফলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি ১৫ উপজেলার অসংখ্য রোগীর কপাল পুড়ছে। সরকারিভাবে যেখানে মাত্র তিন হাজার টাকায় পরীক্ষা হয়, সেখানে কয়েক গুণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় ১০ কোটি টাকার জাপানি হিটাচি ব্র্যান্ডের (১.৫ টেসলা) এমআরআই মেশিন চমেক হাসপাতালকে দেয়। ঢাকার মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেড এটি সরবরাহ করার পর ওই বছরের ২৪ অক্টোবর হৃদরোগ বিভাগের নিচতলায় স্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয় কার্যক্রম। তিন বছরের ওয়ারেন্টির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ২০২০ সালের অক্টোবরে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সাত মাস পর ২০২১ সালের মে মাসে মেরামত করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। তবে মাস না যেতে আবারও অকেজো হয়ে যায়। সেই থেকে হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে এমআরআই সেবা।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, অত্যন্ত জরুরি এমআরআই মেশিন সচলের জন্য চিঠি চালাচালি করে তারা নিজেরাই এখন বিরক্ত। মেরামতে প্রায় সাত কোটি টাকা লাগবে। আবার নতুন মেশিন কিনতে গেলে লাগবে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। অর্থ বরাদ্দের বিষয় চূড়ান্ত না হওয়ায় এটি নষ্ট রয়েছে বলে জানান তিনি।
কয়েক মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালানো পঙ্গু রমিজ হোসেন তাঁকে নিয়ে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। চিকিৎসক দেখে এমআরআই করতে বলেন। কিন্তু বাবা-ছেলে এমআরআই কক্ষের সামনে গিয়ে দেখেন, তালা ঝুলছে। পরে
হাসপাতালের লোকজন জানান, চার বছর ধরেই তালা ঝুলছে এমআরআই কক্ষে। বাইরে খবর নিয়ে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকার কথা শুনে আর পরীক্ষা করা হয়নি। রমিজ হোসেন বলেন, এক টাকা দিয়ে পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য নেই। এ জন্য বেশ কয়েকবার হাসপাতালে এসেছি। প্রতিবার ফেরত গেছি। ছেলের সুস্থতা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
আরেক রোগীর মেয়ে জিন্নাত আরা বলেন, মা অন্যের বাসায় কাজ করেন। হঠাৎ এক দিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে বাসের ধাক্কায় মাথা, হাত, বুক ও পায়ে আঘাত পান। চিকিৎসক এমআরআই করতে দিয়েছেন। বেসরকারিতে করার সামর্থ্য নেই। চমেক হাসপাতালে অনেকবার এসেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছি।