
আঞ্চলিক গান, মুনোমুগ্ধকর নৃত্য ও চট্টগ্রামী ভাষার কথামালার মাধ্যমে এবং হাজার হাজার নারী পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো জমজমাট চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি চত্বরে রং বেরং এর বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এম এ মালেক। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাম্পান, ঘোরার গাড়ী, বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন প্রদর্শন করে লালদীঘি, টেরিবাজার, আন্দরকিল্লাহ হয়ে পুনরায় লালদীঘি চত্বরে এসে শেষ হয়। উৎসব আয়োজন কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ এমপি। আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী চৌধুরী, উৎসব আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ, ডেকোরেশন মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো: সাহাব উদ্দিন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, আব্দুস সালাম মাসুম, রুমকি সেন গুপ্ত, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি, প্রণব চৌধুরী, বিপ্লব চৌধুরী সহ অনেকই।
গানে গানে আসর মাতিয়ে তুলেন খ্যাতিমান শিল্পী সনজিত আচার্য, কল্যাণী ঘোষ, শিমুল শীল, গীতা আচার্য, মোহাম্মদ হারুন, প্রিয়া মনি, আহসান হাবিবুল আলম, সুপ্রিয়া লাকি ও অনন্যা সেন নীপা। নৃত্য পরিবেশন করে সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমী, অনুশীলন নৃত্যকলা একাডেমী, গীতাঞ্জলি নৃত্যাঙ্গন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন এবং আমরাও বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আজকে ঈদ উৎসবকে উপলক্ষ করে “চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব” এর আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টন সবাই সামিল হয়েছেন। অর্থাৎ ধর্ম যার যার উৎসব যে সবার সেটি আসলে বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে এই উৎসবের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন প্রবারণা পূর্ণিমার সময় ফানুস উড়ানো হয় তখন সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে সামিল হয়, ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও ফানুস উড়ানো উৎসবে সামিল হতাম। একইভাবে যখন দুর্গাপুজা উৎসব হয় তখনও সব সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে সামিল হয়। অর্থাৎ আমরা এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবাই মিলেমিশে একাকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ রচিত হয়েছে, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই আজকে যারা এই উৎসবের আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের ইতিহাস তুলে ধরে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রথম জনসভা করে জনসমক্ষে ঘোষণা করেছেন এই লালদীঘির ময়দানে। এর আগে ছয় দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু জনসভা করা হয় ছয় দফার ওপরে এই লালদীঘির ময়দানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করেছিলেন এম এ হান্নান। মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ অনেককে সাথে নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামকে কয়েকদিন স্বাধীন রেখেছিলেন। ১৮৫৭ সালে সুবেদার রজব আলী চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাউন্ডে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এই দেশে কোন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান হবে না। কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে, সবসময় করেছি, ভবিষ্যতেও করব। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।
সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, ‘মাতৃভাষা মাতৃভূমি ও স্বাধীনতাকে ভালবাসতে হবে। আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মানুষ কম। সংস্কৃতি চর্চা কমে গেছে বলে এই অবস্থা হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্মকে চট্টগ্রামী ভাষার চর্চা ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণে অগ্রগামী হতে হবে।’
পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রাজনৈতিক বীরত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সুনাম আছে সারা বিশ্বে। আজকের আয়োজন সেই ঐতিহ্যের একটি স্মারক হয়ে থাকবে।’ তিনি এই উৎসব আয়োজনের জন্য আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার প্রচার প্রসারে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ এই উৎসব চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।