আজঃ বৃহস্পতিবার ২২ মে, ২০২৫

ঐতিহ্যের আঞ্চলিক গান ও চট্টগ্রামী ভাষার কথামালায় চট্টগ্রামে জমজমাট চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব ছবি-১-২

আঞ্চলিক গান, মুনোমুগ্ধকর নৃত্য ও চট্টগ্রামী ভাষার কথামালার মাধ্যমে এবং হাজার হাজার নারী পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো জমজমাট চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি চত্বরে রং বেরং এর বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এম এ মালেক। পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সাম্পান, ঘোরার গাড়ী, বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন প্রদর্শন করে লালদীঘি, টেরিবাজার, আন্দরকিল্লাহ হয়ে পুনরায় লালদীঘি চত্বরে এসে শেষ হয়। উৎসব আয়োজন কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ এমপি। আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, প্রগতিশীল নাগরিক সমাজের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী চৌধুরী, উৎসব আয়োজন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল আইয়ের বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ, ডেকোরেশন মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো: সাহাব উদ্দিন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, আব্দুস সালাম মাসুম, রুমকি সেন গুপ্ত, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আজিম রনি, প্রণব চৌধুরী, বিপ্লব চৌধুরী সহ অনেকই।
গানে গানে আসর মাতিয়ে তুলেন খ্যাতিমান শিল্পী সনজিত আচার্য, কল্যাণী ঘোষ, শিমুল শীল, গীতা আচার্য, মোহাম্মদ হারুন, প্রিয়া মনি, আহসান হাবিবুল আলম, সুপ্রিয়া লাকি ও অনন্যা সেন নীপা। নৃত্য পরিবেশন করে সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমী, অনুশীলন নৃত্যকলা একাডেমী, গীতাঞ্জলি নৃত্যাঙ্গন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন এবং আমরাও বলি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আজকে ঈদ উৎসবকে উপলক্ষ করে “চাটগাঁইয়া ঈদ আনন্দ উৎসব” এর আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টন সবাই সামিল হয়েছেন। অর্থাৎ ধর্ম যার যার উৎসব যে সবার সেটি আসলে বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে এই উৎসবের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন প্রবারণা পূর্ণিমার সময় ফানুস উড়ানো হয় তখন সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসবে সামিল হয়, ছোটবেলা থেকে আমি নিজেও ফানুস উড়ানো উৎসবে সামিল হতাম। একইভাবে যখন দুর্গাপুজা উৎসব হয় তখনও সব সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে সামিল হয়। অর্থাৎ আমরা এখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবাই মিলেমিশে একাকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীষ্টান সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ রচিত হয়েছে, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই আজকে যারা এই উৎসবের আয়োজন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের ইতিহাস তুলে ধরে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা প্রথম জনসভা করে জনসমক্ষে ঘোষণা করেছেন এই লালদীঘির ময়দানে। এর আগে ছয় দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু জনসভা করা হয় ছয় দফার ওপরে এই লালদীঘির ময়দানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম থেকে প্রথম বঙ্গবন্ধুর পক্ষে পাঠ করেছিলেন এম এ হান্নান। মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারসহ অনেককে সাথে নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামকে কয়েকদিন স্বাধীন রেখেছিলেন। ১৮৫৭ সালে সুবেদার রজব আলী চট্টগ্রামের প্যারেড গ্রাউন্ডে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এই দেশে কোন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির স্থান হবে না। কেউ সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে, সবসময় করেছি, ভবিষ্যতেও করব। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।
সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, ‘মাতৃভাষা মাতৃভূমি ও স্বাধীনতাকে ভালবাসতে হবে। আজ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মানুষ কম। সংস্কৃতি চর্চা কমে গেছে বলে এই অবস্থা হয়েছে। তাই নতুন প্রজন্মকে চট্টগ্রামী ভাষার চর্চা ও স্বাধীনতার চেতনা ধারণে অগ্রগামী হতে হবে।’
পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রাজনৈতিক বীরত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সুনাম আছে সারা বিশ্বে। আজকের আয়োজন সেই ঐতিহ্যের একটি স্মারক হয়ে থাকবে।’ তিনি এই উৎসব আয়োজনের জন্য আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার প্রচার প্রসারে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।’ এই উৎসব চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রায়পুরাতে ব্র্যাক মাইগ্রেশন’র স্কুল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

রিইন্টিগ্রেশন অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ প্রজেক্ট , ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের সচেতনতা আনয়নে স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপদ অভিবাসন ও রেমিটেন্স ব্যবস্থাপনার উপর কুইজ প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্কুলের সাধারন শিক্ষার্থীদের নিয়ে।

আজ (১৮ মে) রবিবার সকাল ১১ টায় নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের শতদল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরনে অভিবাসীদের জন্য পরিচালিত প্রশিক্ষন, রেফারেলসেবা এবং সরকারি সেবাসমুহ সম্পর্কে ফিল্ড অর্গানাইজার মোছাঃ শরিফা আক্তার শিক্ষার্থীদের জানান। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে অভিবাসীদের কল্যানে কাজ করে আসছে। মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিদেশ ফেরতদের পুনরেত্রীকরণ এবং ভুক্তভোগীকে জরুরি সাহায্য প্রদানসহ নানা ধরনের আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী শিক্ষকা শারমিন আক্তার শিল্পী ও ব্র‍্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের ভলান্টিয়ার সোহানা আক্তার, মোস্তাকিমা আক্তার,চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের রেনু আক্তার’সহ প্রমুখ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতনে মারাত্মক আহত পুত্রবধূ-পলাতক শ্বশুর-শাশুড়ি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে শ্বশুর-শাশুড়ির নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জিয়াসমিন (৩২) নামের এক গৃহবধূ। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাথ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন। আহত জিয়াসমিন ওই গ্রামের আতিকুল ইসলামের স্ত্রী। তাঁর পিতার বাড়ি একই উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

তিনি মৃত জামাল উদ্দিন জুমুর মেয়ে। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকালে পারিবারিক কলহের জেরে শ্বশুর আলহাজ্ব সাইদুর রহমান মিয়া (৭০) ও শাশুড়ি আলহাজ্ব আয়েশা বেগম মিলে পুত্রবধূ জিয়াসমিনকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারান জিয়াসমিন। ধারণা করা হয়, তাঁরা তাঁকে মৃত ভেবে রেখে পালিয়ে যান। পরে

প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। জিয়াসমিনের পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্যাতন করে আসছিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। একাধিকবার এ নিয়ে সালিস হলেও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুইজন হজ করে এসে যদি মানুষ না হন, তাহলে সেটা সমাজের জন্য লজ্জার। একজন গৃহবধূকে এভাবে নির্যাতন করার অধিকার তাঁদের নেই। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। ঘটনার পর অভিযুক্ত সাইদুর রহমান ও আয়েশা বেগম পলাতক রয়েছেন।

তাঁদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় চাকলা গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঘটনাটি পারিবারিক কলহ থেকে ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। একটি পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, অন্য পক্ষও অভিযোগ দিতে পারে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ