আজঃ রবিবার ৯ নভেম্বর, ২০২৫

দুর্ভোগে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা

চট্টগ্রামে পরিবহণ ধর্মঘটে বিচ্ছিন্ন আশপাশের উপজেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গরমে তীব্র ভোগান্তি

চট্টগ্রামে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহণ ধর্মঘটে  ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। মহানগরী ও পাঁচ জেলায় শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে নগরী থেকে জেলা-উপজেলায় গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ আছে। একইভাবে জেলা-উপজেলা থেকে কোনো গণপরিবহণও নগরীতে ঢুকতে পারেনি। দূরপাল্লার গণপরিবহণেরও একই পরিস্থিতি। এর ফলে কার্যত চট্টগ্রাম অঞ্চল সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

গতকাল রোববার ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন রুটে কিছু বাস, মিনিবাস চলতে দেখা গেছে। অটোরিকশা চলাচল প্রায় স্বাভাবিক আছে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস মালিকদের আটটি সংগঠন আছে। এর মধ্যে সাতটি ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা জানালেও একটি সংগঠন জানায়নি। সে সংগঠনের বাসগুলো রাস্তায় চলছে।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির অভাবে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে কর্মস্থল ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। অনেকে গণপরিবহণ না পেয়ে ট্রাকে করে গন্তব্যে ছুটছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খোলার প্রথম দিনে দুর্ভোগে পড়েন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। নগরীতে রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করলেও বেশি ভাড়া দাবি করছিলেন চালকরা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর প্রতিবাদসহ চার দাবিতে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এ কর্মসূচি দিয়েছে। । ধর্মঘটের আওতায় আছে সব ধরনের বাস-মিনিবাস, অটোরিকশা, অটোটেম্পু ও হিউম্যান হলার।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের বাসগুলো রাস্তায় চলছে। যে ধর্মঘট চলছে, সেটাতে আমরা নেই। এর মধ্যে সকালে ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের শ্রমিকরা নগরীতে বাস-মিনিবাস চলাচল ঠেকাতে রাস্তায় নামেন। নগরীর বহদ্দারহাটসহ কিছু এলাকায় বাস ভাঙচুরের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর থেকে বাস-মিনিবাস চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে। তবে অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিচ্ছে না পরিবহণ শ্রমিকরা।
নগরীর চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল কবির বলেন, বহদ্দারহাট মোড়ে ধর্মঘটের মধ্যে গাড়ি চলাচল করা নিয়ে কয়েকজন পরিবহণ শ্রমিকদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাতাহাতি করতে গিয়ে হয়তো সামনের একটি বা দুটি কাঁচ ভেঙে যেতে পারে। ঘটনার পরপরই পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
শাহ আমানত সেতু এলাকায় নগরীর প্রবেশমুখে দেখা যায়, বিভিন্ন উপজেলা এবং বান্দরবান-কক্সবাজারমুখী শত শত যাত্রী সেখানে ভিড় করেছেন। গাড়ি না থাকায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না। অনেককে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বসে থাকতে দেখা গেছে। গরমে হাঁসফাঁস করছে শিশুরা। কক্সবাজার রুটে দুয়েকটি গাড়ি ছাড়লেও ৪২০ টাকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ অটোরিকশায়, কেউ ট্রাকে উঠে ছুটছেন গন্তব্যের পথে।
সুরাইয়া বেগম গত শনিবার সাতকানিয়া উপজেলা থেকে নগরীতে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। রাতে আত্মীয়ের বাসা ছিলেন। স্বামীসহ আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু সেতু এলাকায় এসে দেখেন, গাড়ি চলছে না।
বিপাকে পড়া সুরাইয়া বলেন, সাতকানিয়া যাব। দুই ঘণ্টা হয়েছে এখানে এসেছি। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কীভাবে যাব, জানি না। কাউন্টারে গিয়েছিলাম। গাড়ি চলবে না বলছে। গরমে খুবই খারাপ অবস্থা।
রুবেল নামে এক যাত্রী বলেন, কক্সবাজার যাব। ৪২০ টাকার ভাড়া ৭০০ টাকা। সব কাউন্টার বন্ধ।
সৈকত মিয়া নামে আরেক যাত্রী বলেন, আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। চট্টগ্রাম মেডিকেলে এক রোগীকে রক্ত দিতে যাচ্ছি। কিন্তু কোনোভাবেই যেতে পারছি না। এটা তো ভালো হচ্ছে না। মামলা-হামলা হলে দেশে আইন আছে। এরা তো আইনের বাইরে কাজ করছে। এদের ডাবল শাস্তি দেওয়া উচিত। হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে আছে। কেউ শহরে সুখে আসেনি। সবাই বিভিন্ন কাজে এসেছে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ আছে। অলঙ্কার, একে খান মোড়, সিটি গেট, কদমতলী থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ছাড়ছে না। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। শহরে বাস চলছে। কোথাও তেমন কোনো গণ্ডগোলের খবর আমরা পাইনি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঐক্য পরিষদে যুক্ত সংগঠন পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, আমাদের ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। দূরপাল্লার বাস কোথাও চলছে না। চট্টগ্রাম শহরে যে বাসগুলো চলছে সেগুলো চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক সমিতির। তারা ধর্মঘটের সঙ্গে নেই। তাদের ১৫০-২০০টি বাস আছে। সেগুলো হয়তো নগরে চলছে।
ধর্মঘট আহ্বানকারী সংগঠনের দাবির মধ্যে আছে চুয়েটে দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও তিনটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার। চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি নিবন্ধিত ছিল কি না, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কি না, তিনজন একইসঙ্গে মোটরসাইকেলে ওঠার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কি না ও তারা মাদকাসক্ত ছিল কি না— এসব বিষয় তদন্তে কমিটি গঠনের দাবিও রয়েছে তাদের। চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওয়েবিল চেকার-লাইনম্যানসহ পরিবহণ শ্রমিকদের গণগ্রেফতার বন্ধের দাবিও জানিয়েছে তারা।
এর আগে ২২ এপ্রিল বিকেলে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগর এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে শাহ আমানত পরিবহণের একটি বাস মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেলে আরোহী ছিলেন চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই শান্ত সাহা (২০) ও তৌফিক হোসেন (২১) নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। শান্ত চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০ ব্যাচের ও তৌফিক ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় আরেক শিক্ষার্থী জাকারিয়া হিমু গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার দুদিন পর ২৪ এপ্রিল ঘাতক বাসের চালককে পুলিশ গ্রেফতার করে।ঘটনার পর ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে ২৫ এপ্রিল রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছিলেন। আন্দোলনের মধ্যে ২৫ এপ্রিল বিকেলে চুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চুয়েটের পরীক্ষাসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতে ছাত্রদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের শুক্রবার সকাল ৯টার মধ্যে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।এ ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা চত্বর ও মূল ফটকে রাখা শাহ আমানত পরিবহণের দুটি বাসে তারা আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এ সময় উপাচার্য, সহউপাচার্য ও রেজিস্ট্রার প্রায় দুঘণ্টা ওই ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ২০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকে বসে প্রশাসন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ও হলত্যাগের নির্দেশনা পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দেয় চুয়েট প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হলে থাকারও অনুমতি দেওয়া হয়।এরপর রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে করে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন। এর মধ্য দিয়ে অবরোধ তুলে নিলে চার দিন পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি ক্যাবের : ৪৮ ঘণ্টার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম। গতকাল রোববার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, গণপরিবহণ, শ্রমিক ও মালিকরা দেশের আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বারবার দেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করার কারণে তারা বেপরোয়া হয়ে গণপরিবহণের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চাইলেই মানুষকে জিম্মি করে ঘর্মঘট ডাকবে, এটা নিছক বর্বরতা ছাড়া কিছুই নয়। তারা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাসী হয়, তাহলে আইনিভাবেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে তার প্রতিকার চাইতে পারত।
বিবৃতিতে ক্যাবের নেতারা নিরাপদ গণপরিবহণের দাবিতে চুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। নেতারা আরও বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বা অন্য যারা এই ব্যবসায় যুক্ত, সবাই সরকারি দলের নেতা বা কর্মী। আর তারাই বিভিন্ন সময়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে বারবার জিম্মি করেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সরকার দলীয় নেতাকর্মী হিসেবে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকা উচিত।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, মো. সেলিম জাহাঙ্গীর ও দক্ষিণ জেলার সভাপতি আবদুল মান্নান যুক্তভাবে এ বিবৃতি পাঠিয়েছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

রাউজানে সরকারি রাস্তার ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ: প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি স্থানীয়দের

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম গুজরা এলাকায় সরকারি রাস্তার ওপর অনুমোদনবিহীন নকশায় বহির্ভূত ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, জাল কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি রাস্তার ওপর ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় জনসাধারণ ভবনটি ভেঙে রাস্তা উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাফর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাউজানের নোয়াপাড়া পশ্চিম গুজরার আহমদুর রহমানের বাড়ির আলাউদ্দিনের পুত্র নুরুল ইসলাম ও তার পুত্ররা— মো. জাহেদুল ইসলাম, মো. শাহেদুল ইসলাম, নিজামুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম— যৌথভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি রাস্তা বন্দোবস্তে নিয়ে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আসছেন।

তবে সরকারি নথি অনুযায়ী, উক্ত জায়গাটি পশ্চিম গুজরা এলাকার মৃত আছদ আলীর পুত্র হাজী আকাম উদ্দিন বন্দোবস্ত মামলা মূলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বৈধভাবে বন্দোবস্তে নিয়েছিলেন। এটি মূলত সরকার ঘোষিত জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হওয়ায় তিনি জীবদ্দশায় রাস্তা দখল না করে সাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রেখেছিলেন।

১৯৯৭ সালের ২ মার্চ আকাম উদ্দিন নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে জায়গাটির কোনো ওয়ারিশ না থাকায় তা স্থানীয় জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত সরকারি রাস্তা হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, দুই বছর আগে নুরুল ইসলাম নিজেকে মৃত আকাম উদ্দিনের পালকপুত্র দাবি করে উক্ত জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ শুরু করেন। স্থানীয়রা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নির্মাণ বন্ধের অনুরোধ করলেও তিনি তা অগ্রাহ্য করে জোরপূর্বক দুই তলা ভবন নির্মাণ করেন এবং এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় মো. জাফর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (উত্তর), চট্টগ্রামে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৭ ধারায় মামলা (নং-৭২/২০২৫, রাউজান) দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী এস.এম. ছানাউল করিম তদন্ত পরিচালনা করে ২৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উক্ত তফসীলোক্ত জায়গাটি সত্যিই আকাম উদ্দিন বন্দোবস্তে নিয়েছিলেন, তবে নুরুল ইসলাম তার কোনো ওয়ারিশ নন। আর.এস. ও পি.এস. রেকর্ড অনুযায়ী জায়গাটি “রাস্তা” শ্রেণিভুক্ত সরকারি সম্পত্তি। সুতরাং ব্যক্তিগত মালিকানা দাবি করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ আইনত অপরাধ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “তফসীলোক্ত জায়গাটি আর.এস. ও পি.এস. জরিপ অনুযায়ী সরকারিকৃত রাস্তা হিসেবে চিহ্নিত। উক্ত জায়গায় নির্মাণাধীন ভবন আইনগতভাবে অননুমোদিত, যা চলাচল ব্যাহত করছে। অতএব, বন্দোবস্ত বাতিল করে ভবন উচ্ছেদপূর্বক জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভবন নির্মাণের কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী, মসজিদ ও মাদরাসামুখী মুসল্লি এবং সাধারণ পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন বিকল্প পথে চলাচল করতে।

এ প্রসঙ্গে এলাকার সচেতন মহল বলছেন, “রাস্তাঘাটের ওপর ব্যক্তিগত দখল বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন। রাস্তা জনগণের সম্পদ— একে কেউ ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে না।”

তারা আরও বলেন, “প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপে উক্ত রাস্তা দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। সকলের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাস্তা যেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে না থাকে, সে বিষয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।”

সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী, সরকারি রাস্তার ওপর কোনো স্থাপনা নির্মাণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন— দ্রুত তদন্ত সমাপ্ত করে ভবনটি উচ্ছেদ, রাস্তা দখলমুক্ত করা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

চলাচলের জন্য উন্মুক্ত সরকারি রাস্তা সকলের মৌলিক অধিকার— এই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এখন প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে রাউজানবাসী।

কালিয়াকৈরে অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

গাজীপুরের কালিয়াকৈর বাস টার্মিনাল এলাকায় শুক্রবার সকালে অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান।

তিনি বলেন, অটোরিকশা চালক ও শ্রমজীবী মানুষ দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপি সব সময় পাশে থাকবে।

এ সময় গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মিনার উদ্দিনসহ শ্রমিক ফেডারেশনের বিভিন্ন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ