
ডা. জাফরুল্লাহ একজন মানবতাবাদী ছিলেন এবং তার জীবনকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত করেছিলেন। তার সমগ্র জীবন অনুসরণীয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী নাগরিক স্মরণসভা আয়োজন কমিটি উদ্যোগে স্মরণ সভায় মুক্তিযুদ্ধকালে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশের চিকিৎসা খাতে ডা. জাফরুল্লাহ অবদানের কথা তুলে ধরে বক্তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের নাম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে নামকরণের দাবি জানান। আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক শেখ মোজাফ্ফর আহমদের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাষ্টি আন্তর্জাতিক চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন। তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি। অনেকেই বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান, কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাননি। ডা. জাফরুল্লাহ আজীবন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হননি।
উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হায়াত হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক-ই আজম বীরপ্রতীক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক, অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা ডা. মনজুর কাদের। বক্তব্য রাখেন গণ সংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার খান, বিশিষ্ট আইনজীবী এড. ফাহিম শরীফ খান, সাংবাদিক শামসাদ সাত্তার, অধ্যক্ষ মুছা সিকদার, ভানুরঞ্জন চক্রবর্ত্তী, নুরুল আবছার মজুমদার স্বপন প্রমুখ।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কর্তৃক প্রণীত ওষুধ নীতির কল্যাণে বাংলাদেশের মানুষ সুলভ মূল্যে ওষুধ কিনতে পারছে। তিনি বলেন, অনেকেই বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান, কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ তার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাননি। বরং তিনি আস্থা রেখেছিলেন তার নিজের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ওপর, যা ছিল তার দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ।
ডা. জাফরুল্লাহর স্ত্রী ও নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে গর্ববোধ করলেও তার কিছু আফসোসও ছিল। তিনি বলেন, জাফরুল্লাহ যখন গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন, তখন একজন রিকশাচালকের বোন হাসিনা বেগমও তার বিছানার পাশে ডায়ালাইসিস নিচ্ছিলেন। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আপনি আপনার ডায়ালাইসিসের পরবর্তী সেশনের জন্য কবে আসবেন। উত্তরে হাসিনা বলেছিলেন, তিনি জানেন না তার ভাই কখন তার ডায়ালাইসিসের জন্য টাকার ব্যবস্থা করতে পারবেন। শিরিন বলেন, আমি সেদিন জাফরুল্লাহকে ডায়ালাইসিসের পরে কাঁদতে দেখেছি। ডা. জাফরুল্লাহকে উদ্ধৃত করে শিরিন হক বললেন, কেন যুদ্ধ করেছিলাম যদি হাসিনারা ডায়ালাইসিস সুবিধা না-ই পায়। একজন রিকশাওয়ালা এভাবে বদলে দিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক হায়াত হোসেন বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ ছিলেন এ দেশে নারী ক্ষমতায়নের পথিকৃৎ।নাগরিক স্মরণসভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নানা শ্রেণিপেশার বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
