
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫। এবার এ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮২.৮০ শতাংশ। গতবারেরর চেয়ে এবার পাসের হার প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।আর জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ৮২৩ জন পরীক্ষার্থী। তবে জিপিএ ফাইভ গতবারের চেয়ে কমেছে। গতবার জিপিএ ফাইভ ছিল ১১ হাজার ৪৫০ জন। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজার মিলিয়ে এবার পাসের হার ৮২.৮০ শতাংশ। গতবছর ছিল ৭৮.২৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র পাসের হার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ। এবছর জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার ৭৩ জন ছাত্র ও ৫ হাজার ৭৫০ জন ছাত্রী।বিজ্ঞান বিভাগে পাশের হার সবচেয়ে বেশি, ৯৪.৫২ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার সবচেয়ে কম, ৭৩.৪১ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার ৮৪.১১। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৫৮৯, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯৭ জন আর মানবিকে ১৩৭ জন। চলতি বছর চট্টগ্রাম মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোতে পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। মহানগর বাদে জেলায় পাশের হার ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৭২ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বান্দরবান জেলায় ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এ দিকে পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে সীতাকুণ্ডের হাজী তোবারাক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রফিকুল ইসলাম রাব্বি। বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনায় দুই হাত হারিয়ে ফেলেছিল সে। তাই পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রাব্বি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভাটিয়ারী ইউনিয়নের বজলুর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম রাব্বি ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় স্কুল থেকে ভাটিয়ারী বাজারে ফুট ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে যাওয়ার বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তার দুই হাত হারায়। এরপর অদম্য রাব্বি প্রথমে মুখ দিয়ে ও পরে পা দিয়ে লেখা আয়ত্ত করে।
রাব্বি জানায়, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে মনোবল অটুট ছিল। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় আমি ভালো ফলাফল করেছি। ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই।
রাব্বির বাবা বজলুর রহমান বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আমার ছেলে কঠোর পরিশ্রম করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ভাটিয়ারী হাজী তোবারক আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য্য বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও রাব্বি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়েছে। বিত্তবানরা যেন তার পড়ালেখায় সহযোগিতা করে, সেটাই প্রত্যাশা।
পরীক্ষাকেন্দ্র ফৌজদারহাট খয়রাতি মিঞা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, তাকে নিয়ম অনুযায়ী ৩০ মিনিট সময় অতিরিক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়তি সময় সে নেয়নি।
সীতাকুণ্ডের শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছাফা বলেন, রাব্বিকে সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমরা মুখ দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য পেতে দেখেছি।