আজঃ সোমবার ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

৬৪ দিনের উৎকণ্ঠার অবসান

আবেগঘন পরিবেশে ২৩ নাবিককে বরণ করলেন স্বজনরা

বিশ্বজিৎ পাল, চট্টগ্রাম

সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ

অবশেষে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া আলোচিত জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। শ্বাসরুদ্ধকর ৬৪ দিনের যাত্রা শেষ করে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে নাবিকদের বহন করা জাহাজ এমভি জাহান মনি-৩ কে ছোট ছোট তিনটি টাগবোট পাহারা দিয়ে জেটিতে নিয়ে আসে। জাহাজটি জেটিতে ভিড়লে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূল থেকে তাদের নিয়ে রওনা দিয়েছিল জাহাজটি।
এদিকে এনসিটি-১ জেটিতে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন নাবিকদের স্বজনরা। জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতসহ কর্মকর্তারা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা মুক্ত নাবিকদের বরণে সেখানে সমবেত হয়েছিলেন।
জাহাজ থেকে জেটির কাছাকাছি দৃষ্টিসীমানায় আসার পর জেটিতে জড়ো হওয়া সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। জাহাজ থেকে নাবিকরা হাত নেড়ে উচ্ছ্বাসের জবাব দেন। এসময় নাবিক পরিবারের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিকে বন্দরের জেটিতে ২৩ নাবিককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।

 

জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, একটা মাস কী যে টেনশনে ছিলাম, বোঝাতে পারব না। ছেলের জন্য রাতদিন নামাজ পড়েছি, খেতেও পারিনি। ঈদও ভালো করে কাটাতে পারিনি আমরা কেউ। ছেলেকে কাছে পেয়ে ভালো লাগছে। ছেলে বলে রেখেছে আমার হাতের রান্না খাবে জাহাজ থেকে নেমে। বাসায় ছেলের পছন্দের সব খাবার রান্না করেছি। বাসায় সবাই অপেক্ষা করে আছে। আমার আত্মীয়-স্বজনরাও এসেছে।
জানা গেছে, জিম্মিদশায় জাহাজটিতে নাবিকদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার ও পানির সংকটসহ নানা কষ্টে দিন পার করেছেন নাবিকেরা। নাবিকদের ফিরে পাওয়ার আশায় উদগ্রীব ছিলেন সবাই। শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করছিলেন তাদের পরিবার-পরিজন। অবশেষে নাবিকদের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হলো।
কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত সাংবাদিকদের বলেন, একমাস ধরে আমরা অনেক উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করেছি। অবশেষে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের কাছে ফিরে এসেছেন। আমাদের নাবিকেরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সবাই যে কোনো ধরনের সহযোগিতা আমাদের দিয়েছেন। প্রথম দু’সপ্তাহ আমাদের তীব্র উৎকণ্ঠা ছিল যে, আমাদের নাবিকদের ওপর কোনো ধরনের চাপ বা নির্যাতন করা হচ্ছে কি না। কিন্তু যখন আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, সেরকম কিছু হচ্ছে না, এরপর আমরা মূলত আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে নাবিকদের জাহাজসহ মুক্ত করার ব্যবস্থা করি।
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, আমাদের প্রথম দিন থেকেই উদ্দেশ্যে ছিল ২৩ জন নাবিককে সুস্থভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা। সেটি আমরা পেরেছি। শুধু এক নাবিকের স্কিন র‌্যাশ হয়েছে। সেটি তেমন কিছু না। এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ এখনও কুতুবদিয়ায়। নাবিকরা এমভি জাহাজ মনি লাইটার জাহাজে করে ফিরেছে। কারণ আবদুল্লাহতে যে পণ্যগুলো আছে সেগুলো খালাস করতে দেরি হবে। নতুন নাবিকদের সেখানে পাঠিয়ে ওই ২৩ নাবিককে আপাতত নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা চেয়েছি তাদেরকে পরিবারের কাছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফেরত দেওয়া।
নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি ছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আমরা যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম নাবিকদের মুক্ত করতে তারা আমাদের কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। তারা যদি আমাদেরকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করতো তাহলে আমাদের কিছু করার ছিল না। আমাদের বিশ্বাস ও অভিজ্ঞতায় আমরা নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।
সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে বরণের পর নাবিকেরা ঘরে ফিরতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ সারা দেশে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থাও কোম্পানির পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।
জানা গেছে, সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে একমাস জিম্মি থাকার পর মুক্ত করা হয়েছিল এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে। মুক্তির একমাস পর গত সোমবার (১৩ মে) দুপুরে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় কক্সবাজারে পৌঁছে জাহাজটি। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ সেটা কুতুবদিয়ায় পৌঁছে নোঙ্গর ফেলে। জাহাজটিতে নতুন নাবিক পাঠানো হয়েছে। লাইটারেজ জাহাজে চড়ে নতুন নাবিকদের একটি দল জাহাজটির দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ওই ২৩ নাবিক।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি গত ১২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করা হয়। জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। নাবিকেরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুরুদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ জানান, তারা বরাবরই আশাবাদী ছিলেন। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, কোনো রক্তের বিনিময়ে তারা জাহাজ ফেরত চান না। আলাপ-আালোচনা এবং দস্যুদের সন্তুষ্ট করেই তারা সবাইকে নিরাপদে দেশে ফেরাতে চান। অবশেষে বীমা কোম্পানিসহ মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় বিপুল অর্থের মুক্তিপণ দিয়ে ৩৩ দিনের মাথায় নাবিকদের মুক্ত করা হয়। মুক্তিপণ পরিশোধের পর গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৮ মিনিটে জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পরই জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত উপকূল থেকে সোমালিয়ার সীমানা পার করে দেয়। জাহাজটি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় আল হামরিয়া বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছে। পরদিন সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নোঙ্গর করে জেটিতে। সেখানে ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কয়লা খালাসের পর ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় সেটি চুনাপাথর বোঝাই করার জন্য মিনা সাকার বন্দরে যায়। চুনাপাথর বোঝাই করে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে জ্বালানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল জাহাজটি দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট মিডিয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ্বাস যোগ্যতার সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে : মাহবুব মোর্শেদ

বিশ্বজুড়ে কর্পোরেট মিডিয়ার সংবাদ নিয়ে বিশ^াস যোগ্যতার সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। এ কারণেই বিবিসির মতো মৌলিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও ‘মোজো’ (মোবাইল জার্নালিজম) চালু করেছে। তারা বুঝেছে, সুপরিশীলিত সংবাদ থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাঁচা কিন্তু বাস্তব ভিডিও বা পোস্ট মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মোবাইল ও অন্যান্য নন কনভেশনাল মিডিয়ার কার্যকর ভুমিকার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর আধুনিক তথ্য প্রবাহকে গ্রহন করার জন্য আমরা এখনো মানসিকভাবে তৈরী নই। এক ধরণের পুরোনো সেকেলে গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে আছি। আমরা পত্রিকা পড়ব। কিন্তু নতুন প্রজন্মের সংবাদমাধ্যমকে গ্রহণ করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে “মুক্ত গণমাধ্যম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্র্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির, মুখ্য আলোচকের বক্তব্য দেন চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক।
বাসস’র প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহণ করার মধ্য দিয়েই আমরা সামনে এগোতে পারব। যেসব দিক নেতিবাচক, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। দমন, পীড়ন, নিয়ন্ত্রণ, বন্ধ করে দেওয়া, এই মানসিকতা ত্যাগ না করলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা যখন একটি প্রজন্মের ব্যবহৃত ডিভাইসকে শত্রু হিসেবে দেখি, তখন আসলে সেই প্রজন্মকেই বলছি; এই জায়গা দিয়ে দেশের মুক্তি আসবে না। কিন্তু ২০২৪-এ যে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, সেখানে আমাদের ওপেন, গণতান্ত্রিক মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কর্পোরেট ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত যে সংবাদপত্র-টেলিভিশনগুলো আছে, যেগুলো মূলত মালিক, সরকার ও আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এবং যাদের সাথে নৈকট্য বেশি আমরা সেসব গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই।

বাসস’র প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে আমরা অনেকেই অংশ নিয়েছিলাম। যদি আমরা স্মরণ করি, তখন প্রচলিত গণমাধ্যমের ভূমিকা কী ছিল, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিবন্ধিত পত্রপত্রিকা বা যেসব প্রতিষ্ঠানে আমাদের পরিচিতরা কাজ করেন, সেসব মাধ্যমে আমরা কি সেই অভ্যুত্থানের খবর যথেষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি ? একদমই কম পেয়েছি। প্রায় সবগুলো টেলিভিশনই ‘বিটিভি’ হয়ে গিয়েছিল। তারা যেন সরকারি প্রচারের মুখপাত্রে রূপ নিয়েছিল। প্রচলিত, নিবন্ধিত, কনভেনশনাল মিডিয়ার বৃহৎ অংশই হয় এই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে, নয়তো একে পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট করেছে। তাহলে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের খবরগুলো কে ছড়িয়েছে ?

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর এস. এম. নসরুল কদির বলেন, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে এসেও “মুক্ত গণমাধ্যম ও আগামীর চ্যালেঞ্জ” নিয়ে আমাদে;র আলোচনা করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা কী, মুক্ত কী, গণমাধ্যম কী, সংবাদ মাধ্যম কী, এসবের একটা বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আমরা প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেকের জায়গায় সৎ থাকি, তাহলেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

মুখ্য আলোচক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহীদুল হক বলেন, অবাধ তথ্যের কথা বলে অন্যের চরিত্র হরণ, অন্যের নামে অপবাদ দেওয়া, অপতথ্য-মিথ্যাতথ্য প্রচারের মত অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা রাখতে হবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বিশ^াসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রেল লাইনের মত সমান্তরালভাবে চলতে হবে।

আলোচনা সভার ধারণাপত্র উপস্থাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলী আর রাজী বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ চায় কারণ গণতন্ত্রের বেঁচে বা টিকে থাকার শর্তই হচ্ছে ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’। এরা পরস্পর ‘পারস্পরিকতাবাদ’ বা ‘মিউচুয়ালিজম’-এ আবদ্ধ। গণতন্ত্র ঠিকাতে হলে ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ চাই আর ‘মুক্ত সংবাদমাধ্যম’ ঠিকাতে চাইলে গণতন্ত্র চাই।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য গোলাম মাওলা মুরাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুস সাত্তার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সায়মা আলম, এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি ইঞ্জি. সেলিম মো. জানে আলম, এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, সিএমইউজের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, দৈনিক ইনকিলাবের ডেপুটি ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম সেলিম, দৈনিক আমার দেশের ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

অংশ নিয়েছে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী চট্টগ্রামে এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায়

বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে চট্টগ্রামের মুরাদপুরস্থ’ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র উদ্যোগে ১১তম বারের মতো “এনআইটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা-২০২৫” এনআইটি’র অডিটোরিয়ামে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ কারীগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্কভিউ হসপিটাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. এটি. এম. রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন এনআইটি’র চেয়ারম্যান আহসান হাবিব।

প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২৬৪টি বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনীমূলক প্রকল্প প্রর্দশিত হয়। এতে প্রায় ৬০০ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন বলেন, আজকের এই প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি বিজয়ীর খোঁজ নয়, বরং এটি আমাদের সবার জন্য একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সকলেই নতুন কিছু শিখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও বড় উদ্ভাবন নিয়ে আসার অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রতিযোগীতায় শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করেছে, আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্যেকটি প্রকল্পই আলাদা এবং একেকটি নতুন চিন্তার প্রতিফলন। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শুধু একটি ইভেন্ট নয়; এটি হলো কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির সবচাইতে কার্যকর মঞ্চ।

ড. এটি. এম. রেজাউল করিম বলেন,দক্ষতা একজন মানুষকে কর্মবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং তাকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করবে। উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সেই দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কার্যকরী সমস্যা সমাধানের রুপরেখা তৈরী করে। অধ্যক্ষ মো কামাল হোসেন বলেন, এই প্রতিযোগিতায় উত্থাপিত সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধানগুলো কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমাদের তরুণরা প্রমাণ করেছেন যে তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাই দেশকে ‘আধুনিক বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মূল চালিকাশক্তি।


ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির চেয়ারম্যান আহসান হাবিব বলেন, উদ্ভাবন শুধু প্রযুক্তির খেলনা নয়, উদ্ভাবন হল মানুষের জীবনকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করার হাতিয়ার। আজকের এই ছোট ছোট ধারণাগুলোই আগামী দিনের বড় বড় শিল্প ও সামাজিক পরিবর্তনের বীজ বপন করছে।প্রতিযোগীতায় মোট ২৬৪ টি প্রজেক্ট অংশ নেয়। প্রজেক্ট সমুহকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে বিভিন্ন মানদন্ডে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য মূল্যায়ন দলে ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. এ. কে. এম. মাঈনুল হক মিয়াজী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. এইচ.এম

. এ আর মারুফ,চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান মো. দিদারুল আলম মজুমদার। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর সিভিল ডিপার্টমেন্ট প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো জাহাঙ্গীর আলম, কম্পিউটার বিভাগের চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী মেহেদী, ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী সুজিত কুমার বিশ্বাস, মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এর চীফ ইন্সট্রাক্টর প্রকৌশলী নুরুননবী।

বিচারক প্যানেল প্রজেক্ট সমুহ মূল্যায়ন সম্পন্ন করেন। মূল্যায়নে প্রাপ্ত নাম্বারের ভিত্তিতে টপ টেন নির্ধারণ করে পুরস্কার হিসেবে ১ম,২য় ও ৩য় স্থান অর্জন কারীর মধ্যে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া ইমার্জিং প্রজেক্ট হিসেবে চতুর্থ থেকে ১০ম স্থান অর্জনকারীদেরও ৫ হাজার নগদ অর্থ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সমাপনী পর্বে সকল অংশগ্রহণকারীকে সনদ বিতরণ করা হয়।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ