আজঃ সোমবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

আজ ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

ডেস্ক নিউজ:

জাতীয়:

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১৭ মে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ নির্বাসন জীবন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কোলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

১৯৭৫ সালের ১৫আগস্ট কালরাতে বিপদগামী একদল সেনা কর্মকর্তার নির্মম বুলেটের আঘাতে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এসময় বিদেশে থাকায় আল্লাহর অশেষ রহমতে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী।

বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক তেমনি এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অনুপ¯ি’তিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতক গোষ্ঠী। খুনি সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন শেষে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও সেদিন লাখ লাখ মানুষের মিছিলকে গতিরোধ করতে পারেনি। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলা নগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা বাংলাদেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম পিতৃ হত্যার বদলা নেব’; ‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভে”ছায় স্বাগতম’।
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার, স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
সে দিন বিকেল সাড়ে চারটায় আকাশে যখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি দেখা যায় তখন সকল নিয়ন্ত্রণ আর অনুরোধ আবেদন অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ বিমান বন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিমানটি অবতরণ করে। জনতা একেবারেই বিমানের কাছে চলে যায়। বহু চেষ্টার পর জনতার ¯্রােতকে কিছুটা সরিয়ে ট্রাকটি ককপিটের দরজার একেবারে সামনে নেয়া হয়। এই সময়ে শেখ হাসিনা ভেতর থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন।
বেলা ৪টা ৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা বিমান থেকে সিঁড়ি দিয়ে ট্রাকে নেমে আসেন। কুর্মিটোলা থেকে শেখ হাসিনার শেরেবাংলা নগরে এসে পৌঁছতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। এই সময় ঝড় বৃষ্টিতে নগর জীবন প্রায় বিপন্ন। রাস্তাঘাট স্বাভাবিক জীবন যখন ব্যাহত তখন সেখানে অপেক্ষা করে কয়েক লাখ মানুষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি গণসংবর্ধনা মঞ্চে উপ¯ি’ত হন।

১৯৮১ সালের ১৭ মে ঝড়-বাদল আর জনতার আনন্দাশ্রুতে অবগাহন করে শেরে বাংলা নগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্টের পর যখন প্রবঞ্চক বিশ্বাসঘাতক খুনি দেশদ্রোহীরা প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলেছিল আমাদের জাতীয় জীবন যখন জাতিদ্রোহীদের অত্যাচারের প্রচন্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত তখন শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল শ্রাবণের বারিধারার মতো পাহাড় সমান বাঁধা জয়ের অনন্ত অনুপ্রেরণা। সে দিন বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অশ্রু-বারিসিক্ত জন্ম ভূমিতে সঙ্কটজয়ের বীজ রোপিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত অগ্নি শপথের রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হয়েছিল বাঙালি জাতি।

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরব”িছন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাঁকে তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। শত প্রতিকূলতাতেও হতোদ্যম হননি কখনো। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বার বার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন। আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে।
আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতো সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তালাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।

রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশে^র অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আপন কর্ম মহিমায় হয়ে উঠেছেন-নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা; হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথি। বিশ্ব রাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা-আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিছিয়ে পড়া দেশ-জাতি জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র হিসেবে বিশ্বনন্দিত নেতা। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ‘নীলকণ্ঠ পাখি’ মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। তিমির হননের অভিযাত্রী মানবতার মা, আত্মশক্তি-সমৃদ্ধ সত্য-সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল-মোহনা। এক কথায় বলতে গেলে সাগর সমান অর্জনে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন।
শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৪৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এই পথচলা কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা, ছিল কণ্ঠকাপূর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাঁকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কিš‘ তিনি বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। জনগণের ভালবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয় বারসহ চতুর্থ বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যখনই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তখন এদেশের মাটি ও মানুষের কল্যাণে বাস্তবায়ন করেছেন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতি অগাধ প্রেম এবং অক্ষয় ভালোবাসাই হলো তাঁর রাজনৈতিক শক্তি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী সম্পৃক্ততা, সচেতনতা কার্যক্রম এবং সহজলভ্য বিকল্প সরবরাহের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বিশেষ করে মেয়েদের কাগজ, পাট বা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন। সুবিধানির্ভর সংস্কৃতি ত্যাগ করে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে এলে তা শুধু প্লাস্টিক দূষণ কমাবে না; পাটসহ স্থানীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত করবে, জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করবে এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে। শনিবার রাজধানীর বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের র‌্যাডিসন ব্লু চাটগাঁ বে ভিউতে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত “টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ” শীর্ষক ” অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং অ্যান্ড ডিসেমিনেশন ক্যাম্পেইন” -এ তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার থেকে টেকসই বিকল্পে যেতে সময়, পরিশ্রম এবং ভোক্তাদের আচরণগত পরিবর্তন অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে গড়ে ওঠা ভোক্তা-অভ্যাস রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক সামগ্রী বাদ দিয়ে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার প্রয়োজন।
একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিস্তৃত ব্যবহারের বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ভোক্তাদের প্লাস্টিকনির্ভরতা মূলত সুবিধা এবং “ফ্রি” ধারণাজনিত ভুল বোঝাবুঝির ফল। বাস্তবে, প্লাস্টিক উৎপাদনে শ্রম, বিদ্যুৎ, আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালসহ নানা খরচ জড়িত থাকে, যার গোপন মূল্য পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাকেই দিতে হয়।
রিজওয়ানা হাসান চার বছর মেয়াদি প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে প্রশংসা করেন এবং প্রকল্পের সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আজ শিক্ষার্থীদের মাঝে যে পরিবেশশিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের পরিবেশগত ফলাফল নির্ধারণ করবে। অতীত প্রজন্মের টেকসই জীবনধারা এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ত্যাগের আর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জানানো অত্যন্ত জরুরি।

উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে অধিকাংশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর বিকল্প বিদ্যমান, যদিও ডিসপোজেবল কলমের মতো কিছু পণ্যের সম্পূর্ণ টেকসই বিকল্প এখনও উন্নয়নাধীন। বাংলাদেশের রয়েছে পাট, কাপড়সহ সহজলভ্য স্থানীয় উপাদান, যা দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের কার্যকর বিকল্প হতে পারে। শিক্ষার্থীদের বিকল্প ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে তিনি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন।

বঙ্গোপসাগর বিশ্বের নবম সর্বাধিক প্লাস্টিকদূষিত সামুদ্রিক অঞ্চল হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি বাংলাদেশে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের কারণে নয়; বরং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উজান থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যের ফল। তিনি সতর্ক করে বলেন, পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) সমাধান হিসেবে জনপ্রিয় হলেও এটি অত্যন্ত জ্বালানি-নির্ভর ও রাসায়নিকভাবে জটিল। তাই প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা এবং উৎপাদকদের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

উপদেষ্টা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত কিছু কার্যকর উদাহরণ—যেমন কেনাকাটার ব্যাগের জন্য বাধ্যতামূলক মূল্য গ্রহণ, বোতলের ডিপোজিট-রিটার্ন ব্যবস্থা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ—বাংলাদেশে অভিযোজনযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্লাস্টিকসহ সকল ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে দ্রুত আধুনিকায়নের দিকে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, উপাচার্য, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী, উপাচার্য, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। স্পেশাল গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. আসিফুল হক, ডিন, সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, চুয়েট; ড. ফাহমিদা খানম, অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; এবং প্রফেসর ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক, প্রধান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চুয়েট।

লালমোহনে জনতার উপচেপড়া ঢলে সংবর্ধিত হয়েছেন মেজর হাফিজ ।

 

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১৭ ভোলা ৩ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর  লালমোহন সরকারি শাহবাজপুর কলেজ মাঠে ১৫ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার দুপুরে জনতার উপচে পড়া ঢলে সংবর্ধিত হয়েছেন ছয়বারের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী মেজর ( অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।

লালমোহন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি আয়োজিত গণসংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ জাফর ইকবাল। দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাদল পাঞ্চায়েত ।

সংবর্ধনা মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- লালমোহন পৌরসভা বিএনপির সভাপতি সাদেক মিয়া জান্টু ,লালমোহন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ মোঃ ফরিদ উদ্দিন, যুগ্ম আহবায়ক ও লালমোহন প্রেসক্লাব সভাপতি সোহেল আজীজ শাহীন, সফিউল্লাহ হাওলাদার, আ ন ম ফয়সাল তালুকদার , লালমোহন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী অরুণ সহ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

জনগনের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে- সংবর্ধিত প্রধান অতিথি, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন- আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের দেখায় এতোবড়ো জনসমাবেশ লালমোহনের মাটিতে আর হয়নি।

আপনারা আমাকে ভালোবাসেন বলেই আমি আপনাদের মাঝে বারবার ফিরে আসি । যে স্বপ্ন ও আশা বুকে নিয়ে আপনারা আজ এখানে হাজির হয়েছেন- আপনাদের সেই স্বপ্নপূরণে আমি সর্বাত্মক
চেষ্টা করবো।

গত সতেরটি বছর যে দুঃশাসনের যাঁতাকলে আপনারা পিষ্ট হয়েছেন, সেই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে মুক্ত বাতাস আপনাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা কথা বলতে পারেন নি ; আপনারা ভোট দিতে পারেন নি , আপনাদের নাগরিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আপনাদের জীবন দুর্বিষহ করা হয়েছে : আপনাদের জীবন নিয়ে আর কোনো সন্ত্রাসীকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না।

জনগণকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন- শুধু দল আমাকে মনোনয়ন দিলে হবে না । আপনারা আমাকে মনোনয়ন দিতে হবে । তবেই আমি নির্বাচনের মাঠে নামবো ।এসময় বিশাল জনসমাবেশে হাত উঁচিয়ে তাঁকে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ