
বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ। আর এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ১২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এটাই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শরণার্থী সাড়ে ৪৩ মিলিয়ন। বর্তমানে বিশে^র সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির বাংলাদেশে। উখিয়া-টেকনাফ ও ভাসানচরে আশ্রয় নিয়েছে ১২ লাখ রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এসব বাসিন্দা এখন বাংলাদেশের বোঝা হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, সুদান থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত, মধ্যপ্রাচ্য থেকে মিয়ানমার ও গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রসহ আরও অনেক জায়গায়, সংঘাত, জলবায়ুর বৈরী আচারণ এবং উত্থান-পতন মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে জোর করে সরিয়ে দিচ্ছে, যা গভীর মানবিক দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১২ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যার মধ্যে ৪৩.৫ মিলিয়ন শরণার্থী। এমতাবস্থায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ^ শরণার্থী দিবস।
সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পাননি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গত বছরের ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। বৈঠকে এক হাজার ১৭৬ রোহিঙ্গার পাশাপাশি আরও ছয় হাজার জনকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মতপার্থক্য থেকে যায়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ জন করে সপ্তাহের পাঁচ দিনে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে পাঠানোর কথা।
কুনমিংয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখাইনে আমন্ত্রণ জানায় মিয়ানমার। গত বছরের ৫ মে রাখাইনের মংডু পরিদর্শন করে ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল। তারা ফিরে এসে বেশকিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করে প্রত্যাবাসন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেয়। কিন্তু এরপরও একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আমরা চাই স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন। যত দিন পর্যন্ত তারা ফেরত যাচ্ছে না, তাদের দেখাশোনা আমরা করব। রোহিঙ্গা সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শরণার্থীদের বৈশ্বিক সংহতি এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের জীবন পুনর্নির্মাণের সুযোগ প্রয়োজন। পাশপাশি তাদের সমান সুযোগ, কাজ, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রয়োজন।
উদার আশ্রয়দানকারী দেশগুলো, যেগুলো মূলত নিম্ন বা মধ্যম আয়ের দেশ, তাদের শরণার্থীদের সমাজ এবং অর্থনীতিতে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত করতে সহায়তা ও সম্পদের প্রয়োজন।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। বাণীতে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন আমরা শরণার্থীদের সংঘাতগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিই, যাতে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া লোকেরা তাদের বাড়ি ফিরে যেতে পারে।