আজঃ শনিবার ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

নেত্রকোনা:

পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

রিপন গুন নেত্রকোনা প্রতিনিধি:

কমলকান্দা:

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আর এতে ঢলের পানিতে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

সরেজমিনে দেখাগেছে, টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে ৮টি ইউনিয়নের ৬৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দা সদর, বরখাপন ও পোগলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এবং কৈলাটি, রংছাতি ও খারনৈসহ বাকি পাঁচটি ইউনিয়নের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কাঁচা পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার উব্দাখালীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪৭ সেমি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। পানি ঢুকতে শুরু করেছে সদর ও বারহাট্টা উপজেলার লোকালয়েও।

জেলার কলমাকান্দার মহাদেও, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, নেত্রকোনা সদরের মগড়া, বারহাট্টার কংস ও খালিয়াজুরির ধনুসহ বিভিন্ন ছোট-বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে বলে জানিয়েছে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কলমাকান্দা উপজেলা সদরের ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা মনোরঞ্জন শীল বলেন, পাহাড়ি ঢলে উব্দাখালীরনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা সদর লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা, নাগডোরা এলাকায়ও বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার তাতিয়র গ্রামের বাসিন্দা নেওয়াজ আলী বলেন, আমাদের এলাকাটি তিন নদীর মোহনা হওয়ায় সবদিক থেকেই বিপদে আছি আমরা। এবার ফসলের কোন ক্ষতি না হলেও গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে আমাদের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে এবং চলাচলের মূল রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন আমরা খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

কলমাকান্দা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের লাগোয়া গ্রাম রাজাপুর, ভোটপাড়া, মনতলা, ঘোষপাড়া, গোজাকুনিয়া, নোয়াগাও, হরিণতলা নাগডোরা সহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, গত সোমবার থেকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৩৯৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই সময়ে, অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও জারিয়াঝাঞ্জাইল স্টেশনে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে জেলার ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে কলমাকান্দা পয়েন্টে উব্ধাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ওই উপজেলার মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এছাড়া কংশ, ধনু ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়েছে। এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীর লোকালয়ে উজানের পানি ঢুকতে শুরু করেছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনো খাবার, আশ্রয়কেন্দ্র, উদ্ধারকারী দল, মেডিকেল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজসহ মোট ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশরপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচটি পরিবারের ২০ জনের মতো আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে গৃহপালিত প্রাণীগুলোকেও নিরাপ স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ইরান ওমান উপসাগরে একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করেছে । তেলবাহী জাহাজটিতে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার ১৮ নাবিক রয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়- ছয় মিলিয়ন লিটার চোরাচালানকৃত ডিজেল বহনকারী একটি তেলবাহী জাহাজ ওমান উপকূলে আটক করা হয়েছে।

চট্টগ্রামে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার রান্নার লাখ টাকা জরিমানা গুনল কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁ।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম মহানগরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার রান্নার দায়ে একটি রেস্তোরাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের টিমের সমন্বয়ে নিয়মিত বাজার তদারকিকালে ওয়াসা মোড়ের কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁকে এ জরিমানা করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার রান্নার দায়ে ওয়াসা মোড়ের কুটুমবাড়ি রেস্তোরাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, জনস্বার্থে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ তদারকি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

সোশ্যাল শেয়ার কার্ড

এই কার্ডটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ