আজঃ বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রাজশাহী:

রাজশাহীর বাগমারায় অবৈধ ভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন থামছেই না

সাইফুল ইসলাম বাগমারা রাজশাহী:

বাগমারা:

রাজশাহীর বাগমারায় অবৈধ ভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন থামছেই না। সম্প্রতি প্রভাবশালী একটি চক্র কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন। প্রভাবশালী ওই চক্রের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছেনা।

কৃষি জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করায় আবাদি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে এবং চাষাবাদ হুমকীর মুখে পড়ছে। কৃষি জমিতে অবৈধ পুকুর খনন না করার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া পুকুর খননের মাটি নিয়ে যত্রতত্র ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করায় সড়কের বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের সামনে দিয়ে অবৈধ জমিচাষের ট্রাক্টর মাটি বহন করলেও তারা যেন দেখেও না দেখার ভান করে চলেছে। সবার এমন উদাসীনতায় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাস্তা বছর না পেরোতেই ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাগমারায় বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে পুকুর খনন চলছিল। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার মাহমুদু হাসান ফসলি জমিতে পুকুর খনন বন্ধের বেশ ভূমিকা পালন করেন। উপজেলা সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে রংপুর সদরে যান।
এ সুযোগে শুষ্ক মৌসুমে এখন পুকুর খননের হিড়িক পড়ে যাচ্ছে। পুকুর ও দীর্ঘি কাটার চক্রের হোতারা ভেকু (মাটিকাটা মেশিন) ভাড়া করে এনে পুকুর খননে আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে চুক্তি করা শুরু করছে। তারা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও দলীয় কিছু নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে পুকুর খননে নেমে পড়েছে।
উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের,হাটগাঙ্গোপাড়া, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ীগ্রাম, নিমাই বিলে মাড়িয়া ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এর মধ্যেই দীর্ঘি ও পুকুর খনন শুরু হয়েছে। গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন কনোপাড়া ও ভবানীগঞ্জ-হামিরকুৎসা রাস্তার পাশে তিন ফসলী জমিতে দিনরাত চলছে অবৈধ পুকুর খনন।
স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ পুকুর খননের মাটি নামমাত্র মূল্যে কিনে নিচ্ছে ভাটা মালিকরা। আর এসব মাটি ট্রাকে করে ভাটায় নিয়ে যাওয়ার ফলে ট্রাক থেকে মাটি পড়ে রাস্তা একাকার হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের নিমাই বিলে ৮০-৯০ বিঘা, ধানী জমিতে বানাইপুর তলহারী গ্রামের জয়নাল নামে এক প্রভাবশালী, বাড়িগ্রামের সরকারি রাস্তার ধারে,আউচপাড়া ইউনিয়নের মজোপাড়া বিলে, গোয়াকান্দি এলাকার কনোপাড়ার খামার পাড়া এলাকার ৪০ বিঘার তিন ফসলি জমিতে দিনরাত পুকুর খনন করছে সোহেল নামে কয়েকজন দালাল।
তারা ক্ষমতার জোর ও বাগমারার মাননীয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙ্গীয়ে দাপট দেখিয়ে ওইসব এলাকায় একের পর এক পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব মাটিও তিনি আশেপাশের ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে সোহেলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি উল্টে এই প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
ভবানীগঞ্জ বাজারের একাধিক ভ্যানচালক ও পথচারী এই প্রতিবেদককে জানান, বুধবার সকাল থেকে উপজেলার প্রধান সড়ক বাজারের মধ্যে ডজনখানিক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে চলাচল করে। যত্রতত্র ট্রাক্টর চলাচলে রাস্তায় তীব্র যানজট ও অহরহ ঘটেছে দূর্ঘটনা। সড়কের উপর পড়ছে কাদামাটি। আর এসব ট্রাকের গতিও থাকছে বেপরোয়া। চরম আতংঙ্ক সৃষ্টি করে তারা রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
গত ৪/৫ দিন ধরে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে ও ভবানীগঞ্জ বাজারে এমন বেপরোয়া ট্রাক্টরের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে। বাজারের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানান, এসব মাটি আউচপাড়া, শুভডাঙ্গা, গোবিন্দপাড়া গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়ার খামারপাড়া অবৈধ পুকুর খননের মাটি। মাটি গুলো মাড়িয়া, দ্বীপপুর, বাসুপাড়া ও বাইগাছা, গোবিন্দপাড়া, বিগোপাড়া এলাকার কয়েকটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এভাবে ট্রাক ভর্তি করে মাটি নিয়ে যাওয়ার ফলে আউচপাড়া, হাটগাঙ্গোপাড়া, শুভডাঙ্গা বাড়ি গ্রাম, গোবিন্দপাড়ার,মাড়িয়া ও জিল্লুর মোড়, ভবানীগঞ্জ- হামিরকুৎসা, ভবানীগঞ্জ-দ্বীপপুর ও ভবানীগঞ্জ-হাটগাঙ্গোপাড়া রাস্তায় ট্রাক্টর গুলো চলায় অন্যান্য যানবাহনের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। ওভারলোড মাটির ট্রাক্টর চলাচল করায় এবং ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে এরি মধ্যে রাস্তার বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
সিএনজি চালক রেজাউল করিম এই প্রতিবেদককে বলেন, যেভাবে মাটি ভর্তি ট্রাক্টর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাতে সিএনজি নিয়ে চলাচলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত এসব ট্রাকের না কোন রোড পারমিট না আছে কোন বৈধ কাগজপত্র। তারা পুলিশ সহ পৌরসভার অবৈধ টোল আদায়কারীদের টাকা দিয়ে রাস্তায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।

উপজেলা প্রকৌশলী খলিলুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, গত মিটিংয়ে আমি এই বিষয়ে তুলে ধরেছি। কোন ভাবেই যেন মাটি পরিবহনের ট্রাক্টররের কারণে রাস্তার ক্ষতি না হয় আমরা সে বিষয় লক্ষ্য রাখছি। থানার ওসি রবিউল ইসলাম জানান, এভাবে ট্রাক্টর করে মাটি পরিবহনে সাধারণ পথচারীদের দূর্ভোগ বাড়ছে রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখবে।
এ বিষয়ে সদ্যই যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, উপজেলা সমন্ময় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অচিরেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

মোঃ সাইফুল ইসলাম
বাগমারা রাজশাহী

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

সাদা রং দিয়ে ঢেকে দেয়া হলো শেখ মজিবরের ম্যুরাল

সারা দিন রং করে ঢেকে দেওয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় সারা দিন রং করে ঢেকে দেওয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।

রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে নির্মিত শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ম্যুরালটি সাদা রং করে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। রোববার সকাল থেকে কয়েকজন রংমিস্ত্রি এই কাজ শুরু করেন। সন্ধ্যার আগেই পুরো ম্যুরালটি ঢেকে দেওয়া হয়। তবে এই কাজের জন্য কারা ভাড়া করেছিলেন, তা ওই রংমিস্ত্রিরা বলতে পারেননি।

রাজশাহী জেলা পরিষদের জায়গায় ম্যুরালটি নির্মাণ করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এই ম্যুরালের উচ্চতা ৫৮ ফুট। তবে মূল অংশের উচ্চতা ৫০ ফুট। আর চওড়া ৪০ ফুট। নির্মাণের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এটিই দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় ম্যুরাল।

ম্যুরালটির সীমানাপ্রাচীরের দুই পাশে ৭০০ বর্গফুট টেরাকাটার কাজ করা হয়। এক পাশে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের লোকজ সংস্কৃতির নানা চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যও তুলে ধরা হয়েছিল। ল্যান্ডস্কেপিংয়ে গ্রানাইট দিয়ে সজ্জিত করা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই ম্যুরাল ও টেরাকাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা যায়নি।

রোববার সকাল থেকে সাদা রঙের প্রলেপে ম্যুরাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে দেখা যায়, নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে একজন অনেক বড় মই দিয়ে ওপরে উঠে ব্রাশ দিয়ে রং করছেন। নিচ থেকে তাঁর দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছিল, একজন মানুষের তুলনায় ম্যুরালটি কত বড়। এ সময় নিচে আরও কয়েকজন সহযোগী তাঁকে সহযোগিতা করছেন। এ সময় রাস্তা দিয়ে যাঁরা যাচ্ছিলেন, তাঁরাই তাকিয়ে দেখছেন।

সন্ধ্যায় সেখানে আবার গিয়ে দেখা যায়, মিস্ত্রিরা চলে গেছেন। সেখানে একদল নারী শাক কাটছিলেন। তাঁরা বিকেলে চারটার দিকে সেখানে এসে বসেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা এসে কোনো রংমিস্ত্রি দেখতে পাননি। বোঝা গেল, এর আগেই মিস্ত্রিরা চলে গেছেন। চত্বরে তরুণ-তরুণীরা আগের মতোই আড্ডায় মেতেছেন। সবাই তাকিয়ে দেখছেন। কিন্তু কেউ কোনো মন্তব্য করছেন না।

এর আগে গত ৫ আগস্টই রাজশাহীতে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের বেশির ভাগ ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি ‘জিতবে আবার নৌকা’ গানের তালে তালে বুলডোজার দিয়ে রাজশাহী কলেজে থাকা ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

রাণীশংকৈলে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদের উদ্বোধন 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে রবি ২০২৪-২৫ মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় বোরো ধান (উফশী) সমলয় ব্লক প্রদর্শনীর রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।  কাশিপুর ইউনিয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আয়োজনে ৫০ একর জমিতে চারা রোপণের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করা হয়। 

এসময় ইউএনও রকিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, কৃষি প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, জামায়াতের সেক্রেটারি রজব আলী, কৃষক আফজাল হোসেন আফাজ প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসার সহিদুল ইসলাম বলেন,সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে উৎপাদন খরচের অতিরিক্ত সময় ও ব্যয়ের  হাত থেকে রক্ষা করতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষাবাদ ভূমিকা রাখছে।কৃষিতে যান্ত্রিকীকায়ণের ফলে সমলয় চাষাবাদে কৃষির উৎপাদন খরচ অর্ধেকের কম নেমে এসেছে ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
এ সময় শতাধিক স্থানীয় কৃষক কৃষানি উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপসহকারী কৃষি অফিসার সাদেকুল ইসলাম।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ