আজঃ শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

বানিজ্যিক রাজধানী:

বুটিক ব্যবসা-টিউশনিতেই কোটিপতি এএসপিপত্মী

চট্টগ্রাম অফিস:

আইন আদালত:

শিক্ষকতা করেছেন তিন বছর। একইসঙ্গে করতেন টিউশনিও। পাশাপাশি পরিচালনা করেছেন বুটিক হাউস। এ তিন পেশায় যুক্ত থেকে গড়েছেন প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়াও স্বামীর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় নগরীর খুলশীতে রয়েছে চার তলা বাড়িও। অথচ ব্যবসার কোন অস্তিত্বই নেই। মূলত স্বামীর অবৈধ আয় বৈধ করতে ব্যবসায়ী ও শিক্ষকতার ফন্দি আঁটেন ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পুলিশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এএসপি আবুল হাশেমের স্ত্রী তাহেরিনা বেগম।

যদিও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি পুলিশের সাবেক এ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচ্য পুলিশ দম্পত্তির বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরমধ্যে এএসপি আবুল হাশেমকে দুটি মামলায় আসামি করা হয়। একটিতে আসামি করা হয় স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম। তিনি বলেন, ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আরেক মামলায় আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার তথ্য গোপন এবং ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।

১৯৮৮ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন রাউজানের আবুল হাশেম। ২০২২ সালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) পদে থাকাকালে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী খুলশী থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সড়কে রূপসী হাউজিং আবাসিক এলাকার পাঁচ কাঠা জায়গার ওপরে চারতলা ভবন তৈরি করেন। বর্তমানে তারা সেখানে থাকেন।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫ সালে খুলশীর রূপসী হাউজিং সোসাইটি এলাকার চারতলা বাড়ি নির্মাণ করলেও ওই সময় তাঁর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। স্ত্রীর আয় দিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন এমনটি বোঝানোর জন্য স্ত্রীকে সাজিয়েছেন বুটিক ব্যবসায়ী। এছাড়াও স্ত্রী টিউশনি করেছেন এমন দাবিও করেন। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধানে স্ত্রীর বুটিক ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মূলত অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে আবুল হাশেম বাড়িটি নির্মাণ করেন।

দুদক জানায়, ২০১৭ সালে পুলিশের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ায় ২০১৮ সালে আবুল হাশেম ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদবিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয় দুদক। পরে তারা সম্পদবিবরণী জমা দেন।
সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেম মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদক তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। এ হিসেবে তার দেওয়া সম্পদের বিবরণ অনুযায়ী তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করেন।
অন্যদিকে, স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুদক অনুসন্ধান করে তার মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। এর মাধ্যমে তাহেরিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেন। এ ছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে তার গ্রহণযোগ্য আয় মিলেছে ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। তাহলে তিনি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় হাত–পা বাঁধা অবস্থায় খাইরুন নেছা (৬০) নামের এক বয়স্ক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রামচন্দ্রপুর মানিকের বাঁধ এলাকার পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নারী হলেন ঐ এলাকার মৃত রজব আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, সকালেই মানিকের বাঁধের পাশে পানিতে ভেসে থাকা একটি লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ভেড়ামারা থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, তাঁকে হত্যা করে হাত–পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। তদন্তে যা বের হবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।


চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সংগীত ব্যক্তিত্ব যোগী স্বপন কুমার দাশ’র রচিত আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান নিয়ে ‘খুঁজি তাঁরে’ শীর্ষক গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সাংবাদিক কিরন শর্মার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলক ও প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম এর পরিচালক মো.মাহফুজুল হক। প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর প্রখ্যাত সাধক শ্রীমৎ স্বামী সত্যানন্দ ব্রহ্মচারী’জীকে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে ‘খুঁজি তাঁরে’ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযুদ্ধা রাখাল চন্দ্র ঘোষ (যুদ্ধকালিন কমান্ডার), আব্দুর রহিম (লোক ও মরমি শিল্পী), রূপম ভট্টাচার্য (সাংবাদিক), স ম জিয়াউর রহমান(সাংবাদিক), দিদারুল ইসলাম (সংগীত পরিচালক ও কন্ঠ শিল্পী), তন্দ্রা দাশগুপ্তা, সংগীত শিল্পী সঞ্জয় রক্ষিত সহ প্রমুখ। সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত

ছিলেন পাপিয়া আহমেদ (সংগীত প্রযোজক বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম), অপু বর্মন (সংগীত শিল্পী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এবং সংগীত শিক্ষক জেলা শিল্পকলা একাডেমি, চট্টগ্রাম), অপু সেনগুপ্ত (বিশিষ্ট গীতিকার বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন), দীপ্ত দত্ত সংগীত শিল্পী (বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন)।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন, খ্যাতনামা মরমি কন্ঠ শিল্পী শিমুল শীল, বাউল শিল্পী বাবুল শীল, অভিষেক দাশ, বাউল জুয়েল দ্বীপ, শিউলী চৌধুরী, আনন্দ প্রকৃতি(মো:তৌহিদুল ইসলাম), আধাত্মিক শিল্পী সুরনাথ, কাওয়ালী শিল্পী মেঘলা। ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি প্রতিযোগিতার সেরা কন্ঠ শিল্পী বাঁধন ঘোষ, ইন্দ্রিলা ঘরজা, মিম দাশ, অধরা চৌধুরী রাত্রি, আরাধ্যা মজুমদার, সৈয়দ রাসতিন, অরূপ কুমার শীল, ঊর্মি নাগ সংগীত পরিবেশন করেন।

যন্ত্র সংগীত শিল্পীতে ছিলেন- কীবোর্ডে রুবেল ঘোষ, অক্টোপ্যাডে পাপন, তবলায় উৎস, বাংলা ঢোলে হৃদয় বাঁশিতে নিলয়। সংগীত তত্বাবধানে যোগী স্বপন কুমার দাশ, অনুষ্ঠান তত্বাবধানে মো: মোহসীন(সাধারণ সম্পাদক, ওস্তাদ মোহনলাল দাশ স্মৃতি সংসদ)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মো: সাইফুর রহমান ও ববিতা ইসলাম।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ