
চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সপ্তাহ খানেক আগেও ২৯শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল মসলাজাত পণ্যটি।তবে আবারও ডিও চক্রের কারসাজিতে সপ্তাহেরও কম সময়ে এলাচের দাম বেড়ে গেছে ৫-৬শ টাকা পর্যন্ত।ডিও (সরবরাহ আদেশ) চক্রে চার হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া এলাচের দাম প্রায় হাজার টাকা কমে যায় কোরবানির ঈদের পর। কিন্তু গতকাল খাতুনগঞ্জে ৩৫শ থেকে ৩৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
হঠাৎ এলাচের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, এলাচের দাম হাজারের মত কমেছিল, এখন সেটা ৩৫শ থেকে ৩৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এটা মূলত সোনা মিয়া মার্কেট থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, এর পেছনে রয়েছেন ডিও ব্যবসায়ীরা। চক্রে দুই শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। তবে মূলে আছে একাধিক শীর্ষ ব্যবসায়ী।
ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদের আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধি পায় ডিও বেচাকেনা। বাড়তি লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা এলাচসহ নানা মসলাজাত পণ্য মজুত করতে শুরু করেন। এতে চার হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায় এলাচের দাম। সেসময় ৪ হাজার ৫০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
ডিও চক্রে এলাচের দাম বাড়লেও প্রকৃত দামেই পণ্যটি বিক্রির কথা বলছেন খাতুনগঞ্জে এলাচের অন্যতম বড় আমদানিকারক ও বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি অমর কান্তি বণিক। তিনি বলেন, দাম বাড়ছে সোনা মিয়া মার্কেট থেকে, সেখানে খোঁজ নিলে আসল কারণ জানা যাবে। এখন কেউ ৩৭শ বলতেছে, কেউ ৩৮শ, তবে আমি সেসবে মাথা দিচ্ছি না। আমি সেসব কেনাবেচা বন্ধ রাখছি। আমার কাছে যা আছে, আমি ২৮শ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি।
এই বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চাহিদা নেই, দাম বাড়ার কোনো কারণও নেই। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীরা মর্জিমাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। অনেকে নানা আইন-কানুনের কথা বলেন, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এখানে কারও তদারকি নেই।
গেল সপ্তাহের শুরুতে খাতুনগঞ্জে সবচেয়ে ভালো মানের এলাচ ২৯শ’ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল বলে জানান চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন।
এদিকে কোরবানির ঠিক আগে নূর ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাজিম উদ্দিন এলাচসহ কয়েকটি পণ্যের ডিও বিক্রির পর পণ্য সরবরাহ না করে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। এরপর ধস নামে ডিও ব্যবসায়। আর্থিক জালিয়াতির পর প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে মসলা বেচাকেনা। ঈদের পর এরসঙ্গে যোগ হয় জুন ক্লোজিংয়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পক্ষের দেনা-পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। এতে বড় দরপতন ঘটে পণ্যটির। দাম কমে যায় হাজার টাকার বেশি। কয়েক দফায় হাজার থেকে এক হাজার ৭০ পর্যন্ত টাকা কমে যায় দাম। তবে জুন ক্লোজিংয়ের পর ফের দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন ডিও ব্যবসায়ীরা। তাদের তৎপরতায় চাহিদা না থাকার পরও পণ্যটির দাম বেড়ে যায় ৫-৬শ টাকা।