
চট্টগ্রামে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে তিন লাখ নতুন ভোটার। এরমধ্যে রয়েছে ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাগরিকও। আগামী বছরের মার্চ মাসে ১৮ বছর পূর্ণ হলে তারা ভোটার হিসেবে গণ্য হবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তরুণদের ভাগ্যে কী হবে-এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এরপর নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে ওই দিন শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের ঢাকা ও চট্টগ্রামের অন্তত ৫ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানালেন, নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি গুছিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্রের তালিকা করা রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। তবে বড় কাজ সরঞ্জাম কেনা।
সরকারের সংকেত পেলে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটার কার্যক্রম শুরু করবে কমিশন। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মতে নির্বাচনী আইনের কিছু সংস্কারের সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। তারমধ্যে ১৭ বছর বয়সী তরুণদের ভোটার করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সরকারের। সরকারের নির্দেশনা পেলে তাদের ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশের আইন মতে, ১৮ বছর পূর্ণ বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক ভোটার হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ বছর হলেও, তা কমিয়ে ১৭ বছর করা উচিত।
চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, আগামী বছরের মার্চ মাসে ১৭ বছর বয়সী তরুণদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে। আইন অনুযায়ী তখনই তারা ভোটার হবেন। এখন আইন সংশোধন করে ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাগরিকদের ভোটার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবে কাজ করবে নির্বাচন কমিশন।তিনি বলেন, তরুণদের (ছাত্র-জনতা) গণ-অভ্যুত্থানে দেশে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে তাদেরও দাবি রয়েছে। তাদের দাবি মানা যুক্তিযুক্ত।
মো. বশির আহমদ আরো জানান, ভোটের কার্যক্রম অনেকটা গুছানো রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তালিকা করা হয়েছে। কিছু কেন্দ্র পরিবর্তন করা হতে পারে। ভোটারদের কাছ থেকেও আবেদন-আপত্তি গ্রহণ করা হবে। সব যাচাই-বাছাই করে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত করা হবে।
জানা গেছে, হালনাগাদ তিন লাখ ৪ হাজার ২৮৩ জন ভোটার। ২০২৬ সালের মার্চের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন না। কারণ ২ মার্চ ভোটার তালিকা ঘোষণা করা হয়। আইনে সংশোধন আনা হলে তারা ভোট দিতে পারবেন।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে ভোটার ছিল ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৩৯৩ জন। সেই ভোটার তালিকা থেকে হালনাগাদে ৯৩ হাজার ৮৩৭ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আর ২৪ হাজার ৭৯৯ জন ভোটার স্থান বদল করেছেন।
গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ২০২২টি। ভোটকক্ষ ছিল ১৩ হাজার ৮৫৭টি। গত নির্বাচনে ব্যবহৃত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে ২৭৫টি কেন্দ্র জরাজীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্ভাব্য এসব ভোটকেন্দ্রের দরজা-জানালা, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ সার্বিক অবস্থা সংস্কার-মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।