
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫০৩ কোটি টাকার উপরে। ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বাস্তবায়ন করছে। এটি তাদের অগ্রাধিকার প্রকল্প। চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর প্রান্তের সাথে দক্ষিণ প্রান্তের সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতে দ্বিতীয় আউটার রিং রোড হিসেবে পরিচিত এ প্রকল্পটি গ্রহণ করে চউক। কর্ণফুলী নদীর তীরে সাড়ে ৮ কিলোমিটারের এই সড়ক চালু হলে বাকলিয়া-চান্দগাঁও-মোহরা এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যে কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। সহজ হবে নগরের উত্তর প্রান্তের সঙ্গে দক্ষিণ প্রান্তের সড়ক যোগাযোগ। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে এ সড়ক দিয়ে যান চলাচলের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে চউক। এতদিন সড়ক অবকাঠামোর অভাবে কর্ণফুলীর তীরবর্তী যেসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সড়কটি চালু হলে সেসব এলাকার জীবনমানের দ্রæত উন্নয়ন হবে। কর্ণফুলী নদীর তীরে তৈরিকৃত এই সড়কের ফলে কর্ণফুলীর তীরবর্তী এলাকাটি পর্যটকদের ঘুরে বেড়ানোর স্পট হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এদিকে ইতোমধ্যেই ভিড় বাড়ছে পর্যটকদের। ছুটির দিনে নদী তীরে ঘুরতে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হচ্ছে সেখানে।
জানা গেছে, প্রকল্পের অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে চার কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, বাস-বে, ফুটওভার ব্রিজ, যাত্রী ছাউনি, সড়ক রক্ষায় দুই পাশে রিটেইনিং ওয়াল ও ড্রেন। লাগানো হচ্ছে ১ হাজার ৮৪টি এলইডি সড়কবাতি। পর্যটকদের জন্য করা হচ্ছে নয়নাভিরাম। এ সড়ক ঘেঁষে চান্দগাঁও হামিদচরে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র মেরিটাইম বিশ^বিদ্যালয়। এছাড়া কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার দিকে একটি সংযোগও রাখা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যানবাহন এ আউটার রিং রোড হয়ে কালুরঘাট এলাকায় পৌঁছার সুযোগ পাবে। এ সড়কে যান চলাচল শুরু হলে চাপ কমবে মূল শহরে। সড়কটি শহর রক্ষাবাঁধ হিসেবেও কাজ করবে। বিশেষ করে সমদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় নির্মাণাধীন সড়ক কাম শহররক্ষা বাঁধের সুফল ইতোমধ্যেই মিলেছে।
এ বিষয়ে চউক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, কর্ণফুলী নদীর তীরের কালুরঘাট-চাক্তাই সড়কটি শহররক্ষা বাঁধ হিসেবেও সুফল দেবে। এটি এখন নগরের নতুন বিনোদন কেন্দ্র। এখনো কাজ শেষ হয়নি বটে, তবুও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নদী দেখতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী ভীড় করছে। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মদ্যে কাজ শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী নদী থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত চাক্তাই, রাজাখালী, বলিরহাট, ইস্পাহানি খালের পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাটি ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২২৭৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে দুই দফা মেয়াদকাল বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। সংশোধিত বরাদ্দে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে করা হয়েছে কার্পেটিং। বাকলিয়ার বলিরহাট, কল্পলোক এলাকার রাজাখালী খাল ও এর দুটি শাখা খাল, ফয়েজ খাল, নোয়াখালী খালের মুখে রেগুলেটর ও পাম্পহাউস স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ১২টি খালের মুখের ¯øুইস গেট। ফলে গত বর্ষা মৌসুমে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমেনি। বিশেষ করে ১২টি খালের মুখে ¯øুইস গেইট নির্মাণের ফলে নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-বক্সিরহাট, বৃহত্তর বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকার পানিবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। সেইসাথে এসব এলাকার যানজটেরও অবসান হবে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এ সড়ক দিয়ে যান চলাচলের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে।
এদিকে প্রকল্পের মাধ্যমে নগরের যানজট নিরসন, কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকার জীবনমান উন্নয়ন, পর্যটন, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে গুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক ও চউক এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ বলেন, আগামী বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদকালের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে। বর্তমানে সড়কবাতি লাগানো, যাত্রী ছাউনি ও নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।



















