
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় আরও দুটি নতুন বুথ স্থাপন করা হয়েছে, ফলে মোট বুথ সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ১০টিতে। বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তত্ত্বাবধানে থাকা এই টোল প্লাজায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নতুন এই দুটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মূলত ঈদুল আজহার পূর্বে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দিতে এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী যাত্রীদের সুবিধার্থে নতুন এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত টোল প্লাজায় এসব বুথ স্থাপন করা হয়।
সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ চৌধুরী জানিয়েছেন, নতুন বুথগুলো চালু হওয়ায় এখন আর আগের মতো যানজট হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, শাহ আমানত সেতু, যা তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নামেও পরিচিত, কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম এক্সট্রাডোজড টাইপ সেতু। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে এবং শেষ হয় ২০১০ সালের জুলাই মাসে। এটি
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৯৫০ মিটার এবং প্রস্থ ২৪.৪৭ মিটার। এটি চার লেনবিশিষ্ট এবং দুই পাশে রয়েছে ১.৫ মিটার প্রশস্ত ফুটপাত। সেতুর নকশা করে যুক্তরাজ্যের রেনডেল পামার অ্যান্ড ট্রিটন (জবহফবষ চধষসবৎ ্ ঞৎরঃঃড়হ) এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং এতে কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কঋঅঊউ) অর্থায়ন করে।

সেতুর নির্মাণে মোট ব্যয় হয় প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৭২ কোটি টাকা ছিল কুয়েত ফান্ডের ঋণ সহায়তা। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩৩৬ কোটি টাকা, এবং বাকি ব্যয় সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য সহায়ক অবকাঠামোর পেছনে ব্যয় হয়। সেতুটি নির্মাণের পর থেকেই এটি চট্টগ্রাম মহানগরী ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বিশেষ করে আনোয়ারা, বাঁশখালী, পটিয়া,
চন্দনাইশ ও কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক সংযোগ নিশ্চিত করে চলেছে। এটি চট্টগ্রাম নগরীর উপর থেকে ভারী যানবাহনের চাপ কমিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।
টোল আদায়ের দিক দিয়ে সেতুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ
আয়ের উৎস। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেতু দিয়ে চলাচল করেছে ৭ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৬টি যানবাহন এবং ওই মাসে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৭১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৬ টাকা। ২০২৩ সালে বার্ষিক টোল আদায় হয়েছে ৭৯ কোটি ১৯ লাখ ৮ হাজার ৩৮৭ টাকা এবং যানবাহনের সংখ্যা ছিল ৯১ লাখ ২ হাজার ৪২৫টি। বর্তমানে টোল আদায়ের পুরো প্রক্রিয়াটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, যা স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

নতুন দুটি বুথ চালু হওয়ায় সেতুর টোল প্লাজায় যান চলাচল আরও দ্রুত ও সহজ হবে এমনটি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অতীতে যেসব সময় দীর্ঘ যানজটে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হতো, এখন তা অনেকটাই কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে। ঈদসহ যেকোনো জাতীয় ছুটি বা উৎসবের সময়ে এই অতিরিক্ত বুথগুলোর কার্যকারিতা আরও বেশি দৃশ্যমান হবে। সেতুটি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক প্রবাহকে আরও গতিশীল করে তুলছে।