আজঃ বৃহস্পতিবার ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

নোয়াখালী:

মাদ্রাসা সুপারের দুর্নীতি ১০ বছর বয়সে দাখিল পাস: জাল জালিয়াতির মহা কারখানা

রিপন মজুমদার স্টাফ রিপোর্টার:

সেনবাগ:

নোয়াখালীর সেনবাগে জাল জালিয়াতির মহা কারখানা হিসেবে চিহ্নিত কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ।

এরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উপাত্ত জানতে ও অনুসন্ধান করতে গিয়ে থমকে যায় সাংবাদিক ! কেঁচো খুড়তে বেরিয়ে এলো অজগর সাপ। ইসলামের লেবাসধারী এই মাও. আবদুল কুদ্দুছের জন্ম তারিখ ০১/০৩ /১৯৬৪ ইং সালে তিনি দাখিল পরীক্ষা পাস করেছেন ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে নাকি এ সনদ দেয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও অভিভাবক সহ সকলের দৃষ্টি ঐ মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছের উপর। তাঁরা জানতে চায় কী ভাবে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১০ বছর বয়সের একজন ছাত্র দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে ? মাদ্রাসা বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে সেনবাগের কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার অভিভাবক সহ আমজনতা! শুধু এরকম সনদ দিয়ে মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দীর্ঘদিন জাল জালিয়াতির মহা কারখানায় নামে বেনামে বিভিন্ন রেজুলেশন, প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজের নাম দিয়ে রেজুলেশন লিখা এবং মাদ্রাসায় ঢুকতে দেয়ালের উপরে লিখা প্রতিষ্ঠাতা: মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর সাইনবোর্ড সকলের নজরে পড়ে। এরকম বিভিন্ন অনিয়ম কে নিয়ম করে নিজের ইচ্ছে মতো মাদ্রাসা পরিচালনা করে গত ২৯/০২/২০২৪ ইং তারিখে অবসরে যান। এক শিক্ষকের আবেদনে প্রতিষ্ঠাতার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তফা হোসেন গত ০২/০৭/২০২৪ইং তারিখে ১২টি রেজুলেশন পর্যালোচনায় মাও. আবদুল কুদ্দুছ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার প্রমান না পাওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্পষ্টভাবে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেন ঐ সুপার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নয়। সুপার জালিয়াতি করে ম্যানেজিং কমিটির অগোচরে রেজুলেশন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা সাজিয়ে এ মাদ্রাসা কে লুটেপুটে খাওয়ার পায়তারা করছেন। এটা তার বড় ধরনের অপরাধ নয় কী ? এরকম জালিয়াতকারী শিক্ষক থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? শিখবে জালিয়াতির ফাঁকফুকুর! তারপরও দীর্ঘদিন মাদ্রাসার সুপার পদে দায়িত্ব পালন করার সময় কালে সুপারের নিজ হাতের লেখা একখানা রেজুলেশন, পত্র বা নোটিস মাদ্রাসার রেকর্ডে নেই। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সুপার পদে থাকা অবস্থায় কখনো চক, বোর্ড ব্যবহার করেন নি। সিনিয়র শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষকের বর্ণনামতে। এতে বুঝা যায় যে তিনি কামিল পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন কী না? নাকি অন্যের দ্বারা ফক্সি দিয়ে অর্জিত সার্টিফিকেট ? এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।

আরো বেরিয়ে এলো বর্তমানে স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী’র বিরুদ্ধে বিগত ০১/০৩/২০১০ইং তারিখে মিথ্যা বানোয়াট মূলক রেজুলেশন করে, কিন্তু এসম্পর্কে ঐ সময়ে মোঃ আইয়ুব আলী কিছুই জানেন না। পরে কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী জানতে পেরে গত ২৪/০৬/২০২৪ ইং তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট মানহানীর সুবিচারের জন্য আবেদন করেন। এভাবে নীল নক্সা করে রেখেছে ঐ সুপার, যেন ভবিষ্যতে প্রভাবশালী কেউই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হতে না পারে!
এব্যাপারে কাউন্সিলর মোঃ আইয়ুব আলী মিয়াজী কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন – আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মাও. আবদুল কুদ্দুছ রেজুলেশন করেছে কিন্তু ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা আপনার সম্পর্কে এমন কোন রেজুলেশন করিনি। এব্যাপারে আইয়ুব আলী মিয়াজীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে রেজুলেশন করায় মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, এ মাদ্রাসাটির জায়গা দিয়েছেন কাদরার আবু তাহের ভূঁঞার ভাই রফিক ভূঁঞা, তারপরও এলাকার বিভিন্ন দানবীর ব্যক্তিদের দান-অনুদানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠাতা হন? সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এরকম দূর্নীতিবাজ ও জাল জালিয়াতকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

বিগত ২৩/১১/২০০৬ ইং সালে ঐ সুপারের ছেলে রিয়াদ – কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ সানা উল্যাহ বিএসসি কে প্রাণ নাশের হুমকি ও অশোভন আচরণের কারণে সুপার নিজে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষকগণের উপস্থিতিতে ছেলের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে লিখিত মুচলেকা দেন, মাদ্রাসার ব্যাপার তার ছেলে রিয়াদ ভবিষ্যতে কোন শিক্ষকের সাথে এমন আচরণ আর করবে না। এরপরও কীভাবে ১৫/০৬/২০২২ তারিখে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে ঐ সুপারের ছেলে মোঃ আবদুল্লাহিল মাসুম প্রকাশ রিয়াদ কে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে দাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়?

জালিয়াতির মহাকান্ডে আরো বেরিয়ে এলো সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসা থেকে ফক্সি পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার সময় ঐ সুপারকে ২০১২ সালের ১৪/০২/২০১২ ইং তারিখে দাখিল পরীক্ষায় ( নুর নাহার এর পরিবর্তে আছমা আক্তার কে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দেয়ায় ) সেনবাগ ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সহ হাতে নাতে ধরে সেনবাগ থানায় ১৬/০২/২০১২ ইং তারিখে ১৭ নং মামলায় ধারা ৪২০,৪৬৫,৪৬৭,৪৬৮,৪৭১ ও ১৯৭ দঃবিঃ তৎসহ ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৬,১২ ও ১৩ ধারায় মামলা দেয়া হয়। মামলার বাদী ছিলেন, তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুর রহিম।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে দেখা গেলো নিজ মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার পর তার মেয়ের হাজিরা খাতায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ০৭ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত জাল স্বাক্ষর দিয়ে উপস্থিত দেখিয়ে এমপিও’র সরকারি বেতন গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষককে তিনি রীতিমতো বি়ভিন্ন হুমকি দমকীর মাধ্যমে
কোণঠাসা করতে গিয়ে তার মেয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা রজু করবে। ঐ শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে আবেদন করার পরও তাঁকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে জেলের ঘানি টানাবে বলে এখনো হুমকি দমকী দিয়ে যাচ্ছে ঐ সুপারের ছেলে রিয়াদ। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সাংবাদিকদেরকেও দেখে নেয়ার হুমকি ও মামলা হামলা করবে বলে রিপোর্ট প্রকাশে বাধাগ্রস্হ করে যাচ্ছে এবং ঐ সুপারের জামাতা জাকির হোসেন, এনটিভির অনলাইন ডেক্সে ঢাকায় কর্মরত কিন্তু জাকির হোসেন অনুসন্ধানী এ প্রতিবেদককেও মামলা হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক জাল জালিয়াতির অনুসন্ধানে বাধাগ্রস্থ করছে।

গত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু নাছের ভিপি দুলাল বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা আপনার অবগত আছেন য়ে – আমি শিক্ষা বান্ধব ব্যক্তি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালনের ফলশ্রুতিতে কয়েকবার জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সহ চট্টগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ সভাপতির পুরষ্কার প্রাপ্ত হই। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আমার পৌরসভায় কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসাটির অবহেলিত অবস্থা দেখে মাদ্রাসাটির উন্নয়নকল্পে সভাপতি হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করলে মাদ্রাসার সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ আমাকে সভাপতি হিসেবে মেনে নিতে গড়িমসি করার পর স্হানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার প্রেরণের কারণে সভাপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোনয়ন দেন। সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে মাদ্রাসার সুপার মাও. আবদুল কুদ্দুছ ম্যানেজিং কমিটির সভা সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে আমি স্বাক্ষর করি। আমি যখন ব্যস্ত থাকি, ঠিক সে সময়ে বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসে,অনেক সময় পড়ে দেখার সময় থাকে না। বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে দেই। ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ নির্বাচনের জন্য মাদ্রাসার ভোটার তালিকা প্রণয়ন কালে মাও. আবদুল কুদ্দুছ নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা ভোটার দাবি করলে, এক শিক্ষকের আবেদনে আপনারা সাংবাদিক মহল সকল বিষয়ে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে বেরিয়ে আসে উনার লেবাসধারীর আড়ালে জাল জালিয়াতির ফাঁকফুকুর। আমার মতে এই মাও. আবদুল কুদ্দুছ দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতির রোল মডেল। যেহেতু সুপার মাদ্রাসা কাগজপত্র স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসে,ঐ সকল কাগজপত্রের মাঝে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রেজুলেশনে মাও. আবদুল কুদ্দুছ নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে,যা আমি ইতোপূর্বে জানি নাই। সাংবাদিক ভাইদের নিকট থেকে ও রেজুলেশনে কপি দেখে আমি রীতিমতো বিশ্বাস করতে পারছি না- ইসলামের এই লেবাসধারী মাও. আবদুল কুদ্দুছ আসলে একজন দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতকারী ব্যক্তি। আপনারা জানেন আমি কাদরা বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার পূর্বে ২০১২ সালে ফক্সি পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেয়ার প্রাক্কালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পাশা ( বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার) হাতেনাতে মাও. আবদুল কুদ্দুছ কে ধরে- তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবদুর রহিম বাদী হয়ে মাও.আবদুল কুদ্দুছের বিরুদ্ধে মামলা দেন।
আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দূর্নীতি ও জাল জালিয়াতকারী মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।

এ প্রতিবেদক মাও. আবদুল কুদ্দুছ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেনি।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ী তানিয়া হিরোইনসহ গ্রেফতার।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কার্যালয় কর্তৃক অভিযান চালিয়ে শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ী তানিয়া খাতুন (৩১) কে হিরোইনসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুর ১২.২০ মিনিটের সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যলয়ের উপপরিদর্শক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রামকৃষ্টপুর এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে, দুই গ্ৰাম হিরোইন সহ তাকে গ্ৰেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত নারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রামকৃষ্টপুর মহল্লার মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী ও গেলুনুর ওরফে গেলের মেয়ে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যলয়ের উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান জানান।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য চোরাচালান ও বিক্রয়ের অপরাধে, উপ পরিদর্শক মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।

চট্টগ্রামে কৃষককে ব্যবসায়ী সাজিয়ে ঋণ নিয়ে টাকা পাচার, দুদকের মামলা।

সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাগুলো করা হয়েছে বলে জানান সংস্থাটির চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ।

প্রান্তিক চার কৃষককে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলাগুলো করা হয়েছে।এসব মামলায় দণ্ডবিধির ৪০৬/৪-৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ১৯৪৭ এর ৫(২) ও মানিলান্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা গ্রামের সহজ-সরল চার কৃষক ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক মো. ইউনুস, নুরুল বশর, ফরিদুল আলম ও মো. আইয়ূবের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তাদের অজ্ঞাতে তাদের নামে ভুয়া ও অস্তিত্ববিহীন একাধিক প্রতিষ্ঠান খোলেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ব্যাংক হিসেব খুলে ঋণ অনুমোদন করে সেই টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেন।

চার মামলার মধ্যে মো. ইউনুসের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করার মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ভাই ও ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী, আরেক ভাই সাবেক পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী এবং সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ চৌধুরী, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইমতিয়াজ মাহবুব, বজল আহমদ, এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ, নুরুল ইসলাম ও বিএন্ডবি ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান, দিদারুল আলম, মো. সুমন। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাঈনুদ্দিনের করা এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামি বশির আহমদের প্রতিষ্ঠান বিএন্ডবি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে কৃষক ইউনুসকে ইউনাইটেড ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজিয়ে আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করেন।

একইভাবে মো. আইয়ুব নামে আরেক কৃষককে মোহাম্মদীয় এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ইলেকট্রনিক্স ও ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জন আগের মামলারও আসামি। আরও দুই আসামি হলেন- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী ইউসিবিএল’র সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান ও বোন সাবেক পরিচালক রোকসানা জামান চৌধুরী। মামলাটি করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক সজীব আহমেদ।

নুরুল বশর নামে আরেক কৃষককে বশর ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক রুবেল আহমেদ। ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, স্ত্রী রুকমিলা জামান, ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী ও আসিফুজ্জামান চৌধুরীসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন- ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ, আব্দুল আউয়াল, আবু বকর খান, জামাল উদ্দিন, জিয়াউল করিম খান, জাহিদ হায়দার, বজল আহমদ, এম এ সবুর, ইউনুছ আহমদ ও নুরুল ইসলাম চৌধুরী এবং আরামিট সিমেন্টের কর্মকর্তা মিছবাহুল আলম ও জাহাঙ্গীর আলম, আলোক ইন্টারন্যাশনালের প্রদীপ কুমার বিশ্বাস, বশির আহমদের প্রতিষ্ঠান বিএন্ডবি ইলেকট্রনিকসের কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান ও দিদারুল আলম।
এছাড়া ফরিদুল আলম নামে এক কৃষককে ইউনিক এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিকস ও ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সাজিয়ে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান। ওই মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী রুকমিলা জামান, ভাই আনিসুজ্জামান রনি, আসফিকুজ্জামানসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রয়াত শিল্পপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড়ো ছেলে। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। সেখান থেকে বাবু একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাবেদ প্রথমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী হিসেবে পারিবারিক ব্যাবসা আরামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক লিমিটেড দেখাশোনা করতেন। ব্যবসায়ী সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও একই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
২০১২ সালে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের রাজনীতিতে অভিষেক হয়। সরাসরি সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন পেয়ে ‘খালি মাঠে গোল দেন’। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে প্রথমবার প্রতিমন্ত্রী ও দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। ২০২৪ সালে আবারও মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে টিআইবি তার ‘ভালো মানুষের’ জারিজুরি ফাঁস করে দেওয়ায় মন্ত্রিসভায় আর জায়গা হয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে লন্ডনে তার অবস্থানের তথ্য প্রকাশ হয় গণমাধ্যমে।

এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিরুদ্ধে ১৪০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মানিলন্ডারিং আইনে ছয়টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য আসামি হিসেবে আছেন।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ