
চট্টগ্রামের রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এবার পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে মামলাটি দায়ের করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত দোকান কর্মচারী মো. ফারুক (৩২)’র পিতা নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানা নিবাসী ও বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজারের বাসিন্দা মো. দুলাল (৫৬)। মামলায় তাকে দুই নম্বর আসামী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই নিয়ে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলাসহ মোট ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও এই মামলায় সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাসির উদ্দিনসহ ২৬৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০/৪০ জনকে আসামী করা হয়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আখতারউজ্জামান। যার থানা মামলা নম্বর-৩১। মামলাটি তদন্ত করবেন সংশ্লিষ্ট থানার এসআই মো. এনামুল হক। মামলার মামলার এজহারে , গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন মুরাদপুরে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী চলাকালে বিবাদী হাসান মাহমুদ, ফজলে করিম ও নওফেলের নির্দেশনা ও পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনাস্থলে অপরাপর বিবাদীসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন
আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রায় ২০০০ শিক্ষার্থী
ও সাধারণ জনতার উপর এলোপাতাড়িভাবে বোমা বিস্ফোরণ, দা-কিরিচ, লোহার রড, চাপাতি দিয়ে আঘাত,
শাটারগান, পিস্তল ইত্যাদি প্রাণঘাতি মরনাস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে বহু ছাত্র জনতাকে আহত করে। উক্ত ঘটনার মধ্যে
উল্লেখিত বিবাদীদের ছোড়া গুলিতে বাদীর ছেলে মো. ফারুক (৩২) বুকে, পেটে ও পায়ের উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে। উপস্থিত লোকজন সহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা গুরুতর আহত অবস্থায় ফারুককে বিকাল পাঁচটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী সরকার পতনের পর রাউজানে একছত্র অধিপত্যে বিস্তারকারী আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীসহ ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সর্বপ্রথম মামলা দায়ের করেন পশ্চিম গুজরা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লাহ। পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানো, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, এবাদতখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, নগদ অর্থ, প্রয়োজনীয় দলিলপত্র ও সম্পদ লুট, অগ্নিসংযোগ, হত্যার চেষ্টাসহ নানা অভিযোগে ২৩ আগস্ট ও ২৫ আগস্ট রাউজান থানায় দুটো মামলা দায়ের হয়। মামলা দুটো দায়ের করেন যথাক্রমে ত্বরিকত ভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের ১০৩ নম্বর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন ও ২০৪ নম্বর শাখার সহ সভাপতি মো. জোহেল উদ্দিন। ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন রাউজানের বিনাজুরী ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসতিয়াক হোসেন প্রকাশ বজল। ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নাজিম উদ্দিন। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট নগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের হয়।