আজঃ বুধবার ১২ মার্চ, ২০২৫

বৈষম্য দুর করতে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে মালিক-শ্রমিকদের সাথে যাত্রীর প্রতিনিধিত্ব চাই

এম মনির চৌধুরী রানা

পরিবহনে বৈষম্য দুর করতে পরিবহন পরিচালনা ও সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছে সমাজের বিশিষ্টজনেরা।

আজ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শুক্রবার দেশের রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় উপরোক্ত দাবী উঠে আসে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে যাত্রী অধিকার দিবস উপলক্ষে “ বিগত সরকারের প্রণীত সড়ক আইনে যাত্রী স্বার্থ উপেক্ষিত ” শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। উল্লেখ্য যে, যাত্রী হয়রানী, ভাড়া নৈরাজ্য, পরিবহনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, সড়ক দুর্ঘটনা, অন্যায্য ও অগ্রহণযোগ্য কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের প্রতীকি দিবস হিসেবে বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ বারের মতো এই দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ পরিবহনে বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্য কিছুতেই থামছে না। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবীতে দেশের ইতিহাসে সারা জাগানো সর্ববৃহত ছাত্র আন্দোলনের পরে, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার সড়ক পরিবহনের নতুন আইন করলেন। আইন বাস্তবায়নও হলো। কিন্তু পরিবহনে বিশৃংঙ্খলা কেবল বাড়ছেই। পরিবহনখাতসহ দেশের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার শত সহশ্র তাজা প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন সেক্টরেও দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রী সাধারণ ছিল বঞ্চিত। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে তাদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। পরিবহনের প্রধানতম স্টেকহোল্ডার দেশের জনগন তথা যাত্রী সাধারণ হলেও, আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত ১৬ বছর পরিবহন পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান স্টেকহোল্ডার যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধিত্ব বাদ দিয়ে সরকারের অনুগত লেজুরভিত্তিক একটি বাস মালিক সমিতি ও একটি পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্বে পরিবহন সেক্টর পরিচালনা করতে গিয়ে সবকিছু যেন লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তৎকালীন সরকার। ফলে পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা, ভাড়া নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানী অস্বাভাবিক হারে কেবল বেড়েছে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে যাত্রী সাধারণের সাথে সরকারের যোগাযোগের কোন উপায় ছিল না। পরিবহন সেক্টরে যাত্রী স্বার্থের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হতো বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশন গুটিকতেক নেতাদের প্রেসক্রিপসনে। ফলে রাজধানীর কোন বাসে একজন ভদ্রলোকের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে যাতায়াতের পরিবেশ নেই। সিটি সার্ভিসগুলোর কোন বাসের আসনে বসা যায় না। পরিস্কার-পরিচ্ছনতার বালাই নেই। সিট ভাঙ্গা, দরজা জানালা ভাঙ্গা, বাসের ছালতা উঠে গেছে বহুযুগ আগে। এসব মেয়াদোর্ত্তীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস উচ্ছেদের নামে নানান তাল বাহানা, নানান আশ্বাস, নানান কমিটি করে মিডিয়ার সামনে আইওয়াশ করতো তৎকালীন সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ফলে তিনি ধারাবাহিকভাবে চার মেয়াদে ১৫ বছর সড়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেও দেশের মানুষকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শান্তি ও স্বস্থি দিতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছেন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের সংকটকে পুঁজি করে বিগত ১৫ বছরে দেশের সড়ক যোগাযোগে উন্নয়নের অবকাঠামো নির্মাানের জন্য নেওয়া হয়েছে একের পর এক মেগা প্রকল্প, উদেশ্য ছিল মেগা লুটপাট। পরিবহনে মালিক-শ্রমিক নেতাদের তোষামোদি করার মাধ্যমে যাত্রীদের পকেট কাটার নৈরাজ্য চলেছে। চাঁদাবাজির নামে শতশত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা চাঁদাবাজির অংশীদার থাকায় কোন প্রতিবাদ করা যায়নি। এই বৈষম্য দুর করতে হলে, পরিবহন আইন সংশোধন করে যাত্রী ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, হাজারো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে আজ পরিবহনে চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি বন্ধ হলেও পণ্যমূল্য কমছে না, বাস ভাড়া কমছে না। আওয়ামীলীগের সিন্ডিকেট পালিয়েছে এখন সিন্ডিকেট করছেন কারা। এখন পরিবহনে চাঁদাবাজি করছেন কারা। তার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্ছার হতে হবে। অবশ্যই পণ্যমূল্য ও বাস ভাড়া কমাতে হবে। গত ১ মাসে সড়ক উপদেষ্টা জনগন সরাসরি উপকৃত হয় এমন কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম হাতে নিতে পারেনি।

নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, সড়কে বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্য থামাতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে দায়িত্ববান হওয়া জরুরী। আইনের সুশাসন ও পরিবহনের কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আসা জরুরী।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার রফিকুল হোসেন কাজল বলেন, ঢাকা শহরে চলাচলকারী প্রতিটি বাস মোটরযান আইন অনুযায়ী ফিটনেসের অযোগ্য। মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে এসব বাস রাস্তায় চলে। এসব বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে। পরিবহনের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা না গেলে চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। তাই এইখাত আমুল সংস্কার করা এখন সময়ের দাবী।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমম্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ, ড্রাইভার ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা তাওহিদুল হক লিটন, এম মনিরুল হক, মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

দেশব্যাপী নারী হেনস্থার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মানববন্ধন

দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে কেন্দ্র ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।

আজ সোমবার (১০ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করেছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এবং পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদল । এসময় প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা মোঃ আরমান হোসেন, মোঃ মানিক রতন তানিম, সামির হায়দার, হৃদয় মোল্লা, আহসান আলমগীর চৌধুরী, সামিরা নুর সহ নেতৃবৃন্দ।

পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা
রিয়াদুল হক রিয়াদ, আতিক, জিসান সহ ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক কল্যাণ ও অপরাধ সভা অনুষ্ঠিত

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হেডকোয়ার্টারে সোমবার (১০ মার্চ) আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মাসিক কল্যাণ ও অপরাধ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. মো.নাজমুল করিম খান।

উক্ত কল্যাণ সভায় পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারগণ এবং উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ পুলিশের সার্বিক কল্যাণ এবং শৃঙ্খলা নিয়ে তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন। এছাড়াও গত মাসে পুলিশের ওয়ারেন্ট তামিল এবং ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মাননীয় পুলিশ কমিশনার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অর্থ পুরস্কার বিতরণ করেন।

পুলিশ কমিশনার ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে এবং ছিনতাই প্রতিরোধে জিএমপি পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি মুলতবি মামলার দ্রুত নিষ্পন্ন করণ এবং ওয়ারেন্ট তামিলে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। সাধারণ মানুষ যাতে কোন ভাবেই হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে সবাইকে নির্দেশনা দেন। পরিশেষে সকলের সর্বাঙ্গীর মঙ্গল কামনা করে অনুষ্ঠান সমাপ্তি করেন।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ