আজঃ শনিবার ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

লামায় সাবেক মন্ত্রী তাজুলের বাগানে এলজিইডি’র দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ ও রাস্তা

বিপ্লব দাশ,বান্দরবান প্রতিনিধিঃ

বান্দরবানের লামায় সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের সুবিধার্থে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে স্থানীয় এলজিইডি অফিসের কর্মকতা, কর্মচারী বিশেষ করে কুমিল্লা সিন্ডিকেটের যোগসাজসে নির্মাণ করা হয়েছে ২কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যায়ে দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ।

অনুসন্ধানে জানা যায়,বান্দরবান জেলা এলজিইডি অফিস কর্তৃক উপজেলার সরই ইউনিয়নের জনশূন্য এলাকায় সাবেক মন্ত্রীর ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের সুবিধার্থে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একটি ব্রীজের দরপত্র আহবান করা হয়। সে সময় ২কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যায়ে কাজটি বাস্তবায়নের অফিস কার্যাদেশ পেয়েছিলেন ইনু কনস্ট্রাকশন। আরো জানা যায়,ব্রীজের দুপাশে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি টাকায় রাস্তা। এছাড়া ও বিশাল সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে সরই ইউনিয়নে ১০০ একরের বেশি জায়গা কিনেছেন তিনি। মন্ত্রীত্বের প্রভাব খাটিয়ে আরও ৫শ একরের বেশি অসহায় মানুষের জায়গা জবর দখল করে নিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক ব্যাক্তি জানান, সাবেক মন্ত্রীর এ সকল অপকর্মের অন্যতম সহযোগি লামার এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা ও সাবেক মন্ত্রী একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের মধ্যে ছিল খুব সখ্যতা। প্রায় ১যুগের ও বেশি সময় ধরে বহাল তবিয়তে একই কর্মস্থলে। তার আধিপত্যের কাছে অসহায় ছিল স্থানীয় বাসিন্দা ও তার অফিসের অন্যান্য কর্মকতা,কর্মচারীরা। এর মধ্যে বিগত ২৮-১২-২০২২ সালে বিভিন্ন অভিযোগের কারনে তাকে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর এলাকায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হলেও সাবেক মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় এখনো তিনি লামা এলজিইডি অফিসে কর্মরত রয়েছে।

জানা যায়,নামমাত্র মূল্য দিয়ে ফৌজিয়া ইসলামের নামে ১শ একরের বেশি জায়গা কেনা হয়েছে। জমি কেনায় সরই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো.ইদ্রিস ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগও আছে। জমিতে যাতায়াতের রাস্তা,বৈদ্যুতিক সংযোগ, সীমানা পিলার মাছের প্রজেক্ট,গবাদিপশুর খামারসহ তৈরি করা হয়েছে থাকার জন্য বিলাস বহুল বাড়ি।

ভূমি অফিসের রেকর্ডরুমে ফৌজিয়া ইসলামের নামে অসংখ্য জায়গার জমানবন্দি রয়েছে। সম্প্রতি এসব জায়গার কাগজ দিয়ে নিজ নামে নিয়েছেন রাজার সনদও। এতে থেমে যায়নি সাবেক মন্ত্রী এই তাজুল ইসলামের দাপট। শতাধিক একর জায়গা ক্রয় করলেও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় আশপাশের অসংখ্য গরিব ও অসহায় মানুষের জায়গা।

সরই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ছবুর বলেন,আমাদের তাজুল ইসলামের লোকজন বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে। জায়গাজমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। মামলা দিয়ে এলাকায় থাকতে দেয়নি। দীর্ঘদিন অন্যত্র পালিয়ে ছিলাম। সরকার পতন হওয়ার পর আমরা নিজ বাড়িতে এসেছি। আমাদের জবর দখল করা জায়গা ফেরত চাই।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা হালিমা খাতুন বলেন, বাইরের লোক বান্দরবানে এসে জায়গা কিনতে না পারলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান,মেম্বারদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে জায়গা ক্রয় ও আমাদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। আমরা দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি চাই,আমাদের জায়গা ফেরত চাই।

এলজিইডি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ জাকির হোসেন মোল্লা বলেন,আমার বাড়ি কুমিল্লা এটি ঠিক আছে কিন্তু সাবেক মন্ত্রীর সাথে আমার মত এত ছোট কর্মচারীর ব্যাক্তিগত সখ্যাত থাকার প্রশ্নই উঠে না। আমি ২০১১ সালের মে মাসে লামায় এলজিইডি অফিসে যোগদান করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সত্য নয়।

লামা উপজেলার ৫নং সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন,প্রত্যেক ইউনিয়নে জায়গার একটা হোল্ডিং নাম্বার থাকে। আমরা হোল্ডিং নাম্বার দেখে সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রীর নামে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। তবে আইনগত জায়গা কেনার বিধান না থাকলেও ক্ষমতার প্রভাবে চাপে পড়ে সনদ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

লামা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন,সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাগানে নির্মাণ করা ব্রীজটি বান্দরবান জেলা এলজিইডি অফিসের নির্দেশে তত্বাবধান করেছি।এর বাহিরে কিছু আপাতত বলার সুযোগ নাই।

বান্দরবান জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার বলেন,স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যাক্তিগত বাগানে যাতায়াতের রাস্তাটি সরকারি গেজেট ভুক্ত রাস্তা। এখানে নির্মিত ব্রীজটিতে কোন মন্ত্রী বা ব্যাক্তি বিশেষ উপকৃত হল কি হলনা সেটি এলজিইডির দেখার বিষয় নয়।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় সোহাগ হোসেন নামের এক রাজমিস্ত্রির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল ও একটি ওয়ান শুটারগান উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওসমানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওসমানপুর কলপাড়া গ্রামে এই অভিযান চালান সেনাসদস্যরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় খোকসা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশাররফ হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সেনাক্যাম্পের রওশন আরা রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি দল ওসমানপুর গ্রামের সোহাগ হোসেন নামের এক যুবকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়ি তল্লাশি করে দুটি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, গুলি, দেশীয় চাকু ও হাঁসুয়া পাওয়া যায়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সোহাগ হোসেন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাঁর বাবার নাম আশরাফ হোসেন।

পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার করা অস্ত্র থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ভোলায় জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত ।

দ্বীপজেলা ভোলার আধুনিক সাহিত্য সংগঠন জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে ।গতকাল ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ সন্ধ্যায় ভোলা সদরের গঙ্গাকীর্তি হারুন অর রশিদ স্মৃতি পাঠাগারে অনুষ্ঠিত জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের সাধারণ সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম এর সভাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ রোদসী কৃষ্টিসংসারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র প্রভাষক কবি রিপন শান, জাতীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট ভোলা জেলা শাখার সদস্য সচিব প্রভাষক কবি মিলি বসাক, জলসিঁড়ির সদস্য সচিব কবি মহিউদ্দিন মহিন, জাতীয় কবিতা পরিষদ ভোলার সাংগঠনিক সম্পাদক ও জলসিঁড়ির সংগঠক কবি নীহার মোশারফ, আবৃত্তিশিল্পী সমাজসেবক মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ ।

সভায় উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে শিশুসাহিত্যিক শাহাবউদ্দিন শামীম কে সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সাংবাদিক কবি রিপন শানকে নির্বাহী সভাপতি, সিনিয়র প্রভাষক সংগঠক মহিউদ্দিন মহিনকে সাধারণ সম্পাদক, কবি গবেষক কবি নীহার মোশারফ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জলসিঁড়ি সাহিত্য আসরের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫- ২০২৭ গঠন করা হয়েছে ।

কমিটির সহ-সভাপতিগণ হচ্ছেন- সিনিয়র প্রভাষক কবি মিলি বসাক, কবি মোঃ জুলফিকার আলী। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গণ হচ্ছেন- কবি আল মনির, আবৃত্তিশিল্পী মীর মোশারেফ অমি । অর্থ ও দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি বিলকিস জাহান মুনমুন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কবি শাহনাজ পারুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন সাংবাদিক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ আরিফ । নির্বাহী সদস্যগণ হচ্ছেন- অধ্যক্ষ কবি এম এস জালাল বিল্লাহ, কবি দিলরুবা জ্যাসমিন, কবি চৌধুরী সাব্বির আলম এবং কবি এরশাদ সোহেল ।

আসছে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার বিকেল ৪ টায় ভোলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিতব্য জলসিঁড়ির মাসিক সাহিত্য সভায় নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হবে ।

আলোচিত খবর

আরব আমিরাতে ভিসা সংকটে বড় হুমকির মুখে বাংলাদেশি শ্রমবাজার।

মধ্যপ্রাচ্যের  অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা জটিলতায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নতুন ভিসা ইস্যু বন্ধ থাকা এবং অভ্যন্তরীণ ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রবাসীরা। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও কবে ভিসা উন্মুক্ত হবে— সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানাতে পারছে না বাংলাদেশ মিশন। বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমিরাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।

ভিসা জটিলতা শ্রমবাজারের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাব পড়ছে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান, আয়-রোজগার এবং দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মীদের বিরুদ্ধে ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বসবাস, লিঙ্গ পরিবর্তন, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি করেছে আমিরাত সরকার। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা।

এদিকে দুবাইয়ে স্কিল ভিসা চালু থাকলেও সেখানেও কঠোর শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গ্র্যাজুয়েশন সনদ ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। সনদকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন, পরে দূতাবাস বা কনস্যুলেটের যাচাই এবং শেষে আমিরাতের বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হচ্ছে। দীর্ঘ ও জটিল এ প্রক্রিয়ায় হতাশ কর্মপ্রত্যাশীরা।

বাংলাদেশ মিশনের তথ্যানুসারে, স্কিল ভিসায় সনদ জালিয়াতি ঠেকাতে তিন মাস আগে চালু করা হয়েছিল বারকোড ব্যবস্থা। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই সেটিও জাল করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। রাষ্ট্রদূতের মতে, বাংলাদেশিদের মানসিকতা না বদলালে ভিসা সংকট নিরসন সম্ভব নয়।

আবুধাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বলেন, “গত সাত মাস ধরে ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা চালিয়েও কোনো অগ্রগতি হয়নি।কবে হবে সেটিও অনিশ্চিত। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, তবে বিষয়টি পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। ”

 

জনশক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা পরিবর্তনের জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে অনেক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। অনেকেই জানেন না, ভিসা বাতিল হলে কী পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে প্রবাসীদের মানসিক চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমানে যারা আমিরাতে অবস্থান করছেন, তারা পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।

বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠকরা মনে করেন, এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসীদেরও ভিসা নীতিমালা মেনে চলা জরুরি। নইলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ