আজঃ শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বহু প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত বালু নদীর সেতু নির্মাণ কাজ ২১ বছরেও শেষ হয়নি

মাহাবুবুর রহমান রনি, রূপগঞ্জ(নারায়ণগঞ্জ)প্রতিনিধি:

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সিমানাবর্তী রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া-নগরপাড়া এলাকার বালু নদীর সেতুর নির্মাণ কাজ ২১ বছরেও শেষ হয়নি। বহু প্রতীক্ষিত ও প্রত্যাশিত বালু ব্রিজ নামে পরিচিত এ সেতু ২০০৩সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন ৭৫ দশমিক ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৫কোটি ৮০ লাখ টাকা। সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দাবিতে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করেছে। কিন্তু কোন সুফল হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বালু নদীর সেতুর দু’টি পিয়ার, দু’টি পিয়ারের কলম, ক্যাপ, একপাশে উইংওয়াল ও এবার্টমেন্ট দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে। সেতুর সংযোগ সড়কের বেহাল দশা। ওই সড়কের সলিং করা ইট উঠে গেছে। ব্যবহৃত রড মরিচিকায় ধরেছে।
বালু সেতু নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতো। খুলে যেতো সম্ভাবনার দুয়ার। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সেতুবন্ধন তৈরি হতো। কমে যেতো রাজধানী ঢাকার যানজট আর দুরত্ব। একটি মাত্র সেতুর জন্য রূপগঞ্জসহ আশপাশের লাখো মানুষকে ১২/১৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। অথচ এ সেতুটি হলে মাত্র ২০ মিনিটে বাসিন্দারা ঢাকায় যেতে পারবে। সেতুটি নিয়ে দু’দফায় টেন্ডারও হয়েছে। সেতুটিকে ঘিরে লাখো মানুষ বুক ভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে আছেন।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে মাঝিনা-কায়েতপাড়া-ত্রিমোহনী সড়কের বালু নদীর উপর সেতুর নির্মাণের দরপত্র ২০০১সালে আহবান করা হয়। সেতু নির্মাণে মেসার্স ইষ্টার্ণ ট্রেডার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত¡াবধানে এক বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিলো।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইষ্টার্ণ ট্রেডার্স লিমিটেডের মালিক জাহিদ হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণে ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে মাত্র ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। টাকাও উত্তোলন করা যায়নি। সিডিউল অনুযায়ী সিমেন্ট, রড, বালি, পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় একপর্যায়ে নির্মাণ কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। এরকম নানা প্রতিক‚লতায় বালু সেতু নির্মাণ কাজ ২১বছরেও শেষ হয়নি। বর্তমানে বালু সেতুর দু’টি পিয়ার, পিয়ার কলম, একদিকের এবার্টমেন্ট ও উইংওয়াল নির্মাণের পর সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে যায়।
২০২১সালে অসমাপ্ত বালু সেতু নির্মাণে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহবান করা হয়। এসময় নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা। তখন মেসার্স ইউনুস এন্ড বাদ্রার্স এবং মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ (জেভি) সেতু নির্মাণের কাজ পায়। সে অনুযায়ী ২০২১সালের মে মাসে কাজ শুরু করার কথাও ছিলো। অজ্ঞাত কারনে দ্বিতীয় দফায় সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রæতিও দিয়েছিলেন। বালু নদীর রূপগঞ্জ অংশের চনপাড়া, ইউসুফগঞ্জ ও ভোলানাথপুরে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এ সেতুটির ভাগ্যে বইছে বঞ্চনা।
বালু সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকন্ঠের খিলগাও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস শিল্প। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাঁচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানী রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে।
নগরপাড়া গ্রামের রাসেল আহম্মেদ বলেন, বাপ-দাদার কাছে শুনে আসছি, বালু সেতু নির্মাণ হবে। সেতু নির্মাণ হলে রূপগঞ্জের অর্ধশতাধিক গ্রামের কৃষক ঢাকায় তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করতে পারবেন। তারা লাভবান হবে। কিন্তু নানা প্রতিক‚লতায় সেতু নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি।
নগরপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, কত সরকার আইলো-গেলো, আমাগো স্বপ্ন পূরণ অইলো না। বালু সেতু কবে নির্মাণ হবে, তা কেউ বলতেও পারে না।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (সওজ) শাহানা ফেরদৌস বলেন, কায়েতপাড়া-নগরপাড়া এলাকার বালু নদীর সেতু নির্মাণ খুবই জরুরি। শিগগিরই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

তালা ঝুলিয়ে দিল টিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের নিচু জায়গা ভরাট করা নিয়ে বিরোধে রাজশাহী উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী টিটি কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থিত। টিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জায়গা ভরাটের বিরোধিতা করে আসছিলেন।

পুলিশ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় ঘটনাস্থলে তারা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে আটকা পড়েন শতাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।

আরএমপির রাজপাড়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ তাদের মূল একাডেমি ভবনের পাশের কিছু নিচু জায়গা ভরাট করছিলেন। তা দেখতে পেয়ে টিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বাধা দেন।

বৃহস্পতিবার সকালে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এর জেরে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয় দেন। এতে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থী আটকে পড়েন। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ সময়ে জায়গা ভরাট কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ঘটনার বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ওয়াহেদুল কবীর সোহরাওর্দী বলেন, সরকারি সব বিধিবিধান মেনে শিক্ষা প্রকৌশল শাখার তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জায়গাটি ভরাটের কাজ চলছিল। অযোক্তিকভাবে টিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী বাধা দেন। এটি একটি ন্যক্কারজনক কাজ। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।

অন্যদিকে রাজশাহী টিসার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ শওকত আলী খান বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের লোকজন তাদের উদ্দেশ্য করে গালাগালি ও অপমান সূচক কথা বলেছেন। এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।

জানা গেছে, দুই প্রতিষ্ঠানের বিরোধ নিস্পত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে টিটি কলেজ ক্যাম্পাসে যান রাজশাহী কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. ইব্রাহিম আলী, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব শামীম আরা চৌধুরীসহ অনেকে।

তারা দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শুনে বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে বিকাল সাড়ে ৩টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব শামীম আরা চৌধুরী বলেন, একই ক্যাম্পাসে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে এই বিরোধ কাম্য নয়। আমরা সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

চউকে দুদকের অভিযান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনিয়ম

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এর কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুপুরে দুদক সমন্বিত চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর চার সদস্যের একটি টিম চউক ভবনে এ অভিযান পরিচালনা করছে। চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এ অভিযান। চউক’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশের কক্ষে দুদক কর্মকর্তারা নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে দুর্নীতি প্রসঙ্গে সিডিএতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও চীনের র‌্যাঙ্কিন।

এ প্রকল্পের অভিযোগ তদন্ত এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান যাচাইয়ে গত বছরের ১০ জুন উপকমিটি গঠন করে দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। পরবর্তীতে গত বছরের ৪ জুলাই গঠিত উপকমিটির আহ্বায়ক সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ ও মজিবুর রহমান মনজু পরিদর্শন শেষে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি ‘কিছু অসঙ্গতি’ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ