আজঃ মঙ্গলবার ২০ মে, ২০২৫

যেখানে প্রচলিত ওষুধ কার্যকর হয় না চট্টগ্রামে খাবার পানির নমুনায় ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে শনাক্ত টাইফয়েডের জীবাণু

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানের হাসপাতাল, রেস্টুরেন্ট, বাসস্থান এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খাবার পানির নমুনায় ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে শনাক্ত হয় টাইফয়েডের জীবাণু। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জীবাণুগুলোর ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ নমুনা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে খাবার পানির উৎসে বহুমুখী এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সালমোনেলার (টাইফয়েড) জীবাণু পাওয়া গেছে। জীবাণুর এ উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্যও এক গুরুতর হুমকি বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষকরা জানান, সালমোনেলার টাইপ (টাইফয়েড) বেশিরভাগ তিনটি এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিনগুলো শনাক্ত হয়। যা এই জীবাণুর ওষুধ প্রতিরোধের ক্ষমতাকে ব্যাখ্যা করে। কো-ট্রাইমক্সাজল এবং সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এন্টিবায়োটিক এখনও কার্যকর হলেও বেশকিছু জীবাণু এই ওষুধগুলোর প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া ভয়ঙ্কর এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে কোন ওষুধ কার্যকর হবে না। যা মানবদেহের জন্য হুমকিস্বরূপ।
চবি’র জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহানা আকতার মিনা, পবিত্র দেবনাথ, একেএম জাকির হোসাইন, জাহিদ হাসান। গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক সেল পাবলিকেশনের ‘হেলিয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এ বিষয়ে গবেষক অধ্যাপক ড. এ এম মাসুদুল আজাদ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, এই গবেষণার ফলাফল শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক গুরুত্বই বহন করে না; বরং এটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। খাবার পানিতে এই জীবাণুর উপস্থিতি প্রমাণ করে পানির মাধ্যমে এর সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে দ্রুত মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু এমন একটি হুমকি তৈরি করে, যেখানে প্রচলিত ওষুধ কার্যকর হয় না। নতুন ও শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, যা বেশ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জন্য এটি আর্থিকভাবে অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য অশনিসংকেত উল্লেখ করে গবেষকসহ চিকিৎসকরা বলছেন, এ পরিস্থিতি শুধুমাত্র পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবই বাড়াচ্ছে না, বরং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট) দ্রুত বিস্তারের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট এবং বাসস্থান থেকে ১৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ল্যাবরেটরি অফ মাইক্রোবায়াল এন্ড ক্যান্সার জিনোমিক্স গবেষণাগারেই গবেষণার কাজ সম্পন্ন করেন গবেষকরা। ১৫০টি নমুনার ৮টিতে সালমোনেলার টাইপ (টাইফয়েড) জীবাণু শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ নমুনা মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়।
গবেষণার তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’র (বিআইটিআইডি) সহকারী অধ্যাপক (মাইক্রোবায়োলজি) ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, গবেষণায় যে তথ্যটি উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকি হয়ে উঠবে। বিশেষ করে শিশু ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষেরা এই জীবাণু দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাইফয়েড জ্বর শিশুদের মধ্যে মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই এ বিষয়ে এখনই সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নাহয় সামনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

শেয়ার করুন-

Share on facebook
Share on whatsapp
Share on twitter
Share on linkedin

আরও খবর

বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি -চট্টগ্রাম,রহমতগঞ্জের আহ্বায়ক কমিটি গঠন।

বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি -চট্টগ্রাম,রহমতগঞ্জের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সর্বস্তরের ঠিকাদারদের অনাস্থাজনিত কারণে বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি, চট্টগ্রাম জোন, রহমতঞ্জ চট্টগ্রামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে উক্ত এডহক কমিটি

অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সামছুল কাউনাইন(কুতুব) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম জোনাল কমিটি বিলুপ্ত করে প্রস্তাবিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি আগামী ৬ মাসের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। কমিটির তিন সমদস্য হলেন,মেসার্স ইমাম হোসেনের স্বত্তাধিকারী মোহাম্মদ ইমাম হোসেন, মেসার্স হাবিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী

মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মেসার্স ঐশী এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী এস.এম. আবু ছালেহ। চিঠিতে অনুমোদিত এডহক কমিটি ৬ মাসের মধ্যে সমিতির কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচিত করার কথা বলা হয়।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতির (রেজিঃ নং-টি.ও-৩২৮(১৬)-৯৪) এর আওতাধীন বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি, চট্টগ্রাম জোন, রহমতঞ্জ।

ভোলা- বরিশাল সেতু দ্রুত বাস্তবায়নসহ ৮ দাবি নিয়ে মানববন্ধন

চট্টগ্রামস্থ ভোলাবাসীর সর্ব ঐক্য মানববন্ধন সোমবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। ভোলা জেলা সমিতি-চট্টগ্রাম এর সহযোগিতায় মানববনআধন থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

দাবিগুলো হলো, ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন, চট্টগ্রামে অবস্থানরত সকল ভোলাবাসীর সুবিধার্থে ইলিশা-মতিরহাট ফেরী ঘাটের কাজ বাস্তবায়ন, ভোলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে গ্যাস লাইন দ্বারা ভোলায় উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ, নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় ভোলার চতুর্দিকে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ,

বিদ্যমান জরাজীর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও উন্নতমানের হাসপাতাল স্থাপন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে সরকারি উদ্যোগ, গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কলকারখানা স্থাপন, চরাঞ্চলের উন্নয়নে গবেষণা ভিত্তিক উদ্যোগ।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামস্থ ভোলাবাসির সর্ব ঐক্য মানববন্ধন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক লায়ন আতিকুল্লাহ বাহার। যুগ্ম আহবায়ক মো: ফিরোজ চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সাংবাদিক কিরন শর্মা, সদস্যসচিব- মাহবুবুর রহমান সেলিম, যুগ্ম সচিব আলী আজগর, সদস্য (অর্থ) কাঞ্চন মাঝি,সদস্য (মিডিয়া) নুরুন্নবী শাওনসহ ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। মানবন্ধনে ভোলা জেলা সমিতি-চট্টগ্রাম সহ ভোলার ২৫ টি পেশাজীবী সংগঠন অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে বক্তাগণ বলেন -অন্তবর্তী সরকার ভোলা – বরিশাল সেতু আগামী জানুয়ারি ২০২৬ উদ্বোধন করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এজন্য একনেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা অনুমোদন দেয়ার জন্য মানব বন্ধন
থেকে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।

জেলা ভোলায় প্রাকৃতিক গ্যাস খনি রয়েছে। এখানকার গ্যাস সম্পদ রয়েছে ব্যবহারের জন্য জনপদের মানুষ দাবিদার।

আলোচিত খবর

কালিয়াকৈরে ”হোপ ফর চিলড্রেন” এর উদ্যোগে বিনামূল্যে বীজ ও চারা বিতরণ

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর মডেল পাবলিক স্কুল মাঠে সোমবার সকালে
বিলিভার্স ইষ্টার্ন চার্চ কতৃক পরিচালিত হোপফর চিলড্রেনের উদ্যোগে ৭০ জন রেজিস্টার শিশুদের পরিবার ও উপকারভোগীদের মাঝে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রকারের বীজ, সার ও চারা বিতরণ করা হয়েছে।
বিলিভার্স ইস্টার্ন চার্চ এর ডিকন জয়দেব বর্মনের সভাপতিত্বে ও হোপ ফর চিলড্রেনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর বাপ্পি খৃষ্টদাস এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হোপ ফর চিলড্রেন এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সজীব ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল সিএস কো-অর্ডিনেটর তপানা ত্রিপুরা,উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শওকত হোসেন,বিশিষ্ট সমাজসেবক শাহ আলম হোসেন।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন হোপফর চিলড্রেন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিয়ে কাজ করছে। কালামপুর গ্রামে রেজিস্ট্রার শিশু ও গরীব শিশুরা যাতে পুষ্টিকর খাবার পায় তার জন্য হোপ ফর চিলড্রেনের মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়েছে।
বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে

আরও পড়ুন

সর্বশেষ